রক্তক্ষয়ী রাজনীতি চাই না-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করুন
দেশের উন্নয়ন, সমাজের মঙ্গল, দেশের মানুষের সুখ-শান্তি_সব কিছুই নির্ভর করে রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা, সুশাসন ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপের ওপর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এই গুণাবলির অভাব বড় বেশি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজনীতি হয়ে পড়েছে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা পাওয়ার ও ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই। গণতন্ত্রের নামে রাজনীতি পরিচালিত হলেও গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও রাজনীতিতে অবশিষ্ট নেই। আছে কেবল একগুঁয়েমি, গায়ের জোর
এবং ষড়যন্ত্র বা অপকৌশল। দেশে বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি নিয়ে তেমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে চলেছে। গতকালের কালের কণ্ঠের প্রথম তিনটি খবরই হচ্ছে এ প্রসঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচন 'হবে, হবে, হবে'। বিএনপি বলেছে, 'হবে না, হবে না, হবে না'। আর বিশিষ্টজনরা এই ইস্যুতে দুই দলের অনমনীয় অবস্থান বা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর তাঁদের এই শঙ্কা সত্য হলে তাতে দেশ ও দেশের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমরা ২০০৬ সালের শেষ দিকে তথা জোট সরকারের শেষ সময় অত্যন্ত আতঙ্কজনক সময় কাটিয়েছি। তখন একদিকে চলেছিল অনুগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশনকেও আজ্ঞাবহ করার জন্য বিচারপতি আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছিল। জোট সরকারের এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমসহ দেশের বিশিষ্টজনরা সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছিলেন। আর তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সেসব প্রতিরোধে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। লগি-বৈঠা নিয়ে মিছিলে আসার ডাক দিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটও লাঠি নিয়ে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল। জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা লাঠি ছাড়িয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পল্টনসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধে অবতীর্ণ হয়েছিল। সেই রক্তাক্ত রাজনীতির দিনগুলো আমরা ভুলে যাইনি। যে কারণে ১-১১-র আবির্ভাব তখন প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ১-১১-র পরিবর্তনের পর জনগণ আপাতশান্তির কথা ভেবে বেশ আশ্বস্তও হয়েছিল। মহাজোট সরকারের প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হতে চলল। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়_বর্তমানে দেশের মানুষের অবস্থাও ঠিক তেমনি। ইতিমধ্যে যেসব আলামত দেখা যাচ্ছে, প্রধান দুটি দলের মধ্যে যেমন একগুঁয়েমি দেখা যাচ্ছে, তাতে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বর্তমান সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কিন্তু আদালত আরো দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা যেতে পারে বলে যে অভিমত দিয়েছিলেন, সেটা কানে তোলেনি। সরকারপক্ষীয় অনেকেই বলে থাকেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। সর্বত্র নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন করে_তাহলে আমাদের দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকবে কেন? কিন্তু সত্য হলো, ১৯৯৬ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে এ দেশে নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন করেছিল, আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে যায়নি এবং সেই ফলাফলও মানেনি। তখন তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি তুলেছিল এবং গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাসীন দল বিএনপি সেই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। পৃথিবীর অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তুলনা চলে না, দলীয় সরকারের অধীনে, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে সঠিক নির্বাচন হয় না, সেই সত্যটি তাঁরাই সেদিন তুলে ধরেছিলেন। এর কারণ আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট শক্তিশালী ও স্বাধীন করে গড়ে তোলা যায়নি। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী_সর্বত্রই রয়েছে দলীয়করণের প্রভাব। এ অবস্থায় যে নির্বাচন হবে_তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। সে কারণেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যেতে রাজি নয়। আর বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে সে নির্বাচনেরও গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আজ যদি আওয়ামী লীগের অবস্থানও বিরোধী দলে হতো, সম্ভবত তারাও এই পন্থা অনুসরণ করত।
কাজেই আমরা নতুন করে প্রধান দুই দলের বা জোটের মুখোমুখি রাজনীতি বা রক্তক্ষয়ী রাজনীতি চাই না। উভয় দলের নেতাদের সত্যিকারের গণতন্ত্র চর্চার অনুরোধ জানাই। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব। আর বিরোধী দলকে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি সংসদে গিয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে আন্তরিক উদ্যোগ ও সদিচ্ছার পরিচয় দিতে অনুরোধ জানাই। তারা সে রকম আচরণ করলে জাতি অবশ্যই তাদের মূল্যায়ন করবে।
আমরা ২০০৬ সালের শেষ দিকে তথা জোট সরকারের শেষ সময় অত্যন্ত আতঙ্কজনক সময় কাটিয়েছি। তখন একদিকে চলেছিল অনুগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশনকেও আজ্ঞাবহ করার জন্য বিচারপতি আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছিল। জোট সরকারের এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমসহ দেশের বিশিষ্টজনরা সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছিলেন। আর তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সেসব প্রতিরোধে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। লগি-বৈঠা নিয়ে মিছিলে আসার ডাক দিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটও লাঠি নিয়ে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল। জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা লাঠি ছাড়িয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পল্টনসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধে অবতীর্ণ হয়েছিল। সেই রক্তাক্ত রাজনীতির দিনগুলো আমরা ভুলে যাইনি। যে কারণে ১-১১-র আবির্ভাব তখন প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ১-১১-র পরিবর্তনের পর জনগণ আপাতশান্তির কথা ভেবে বেশ আশ্বস্তও হয়েছিল। মহাজোট সরকারের প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হতে চলল। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়_বর্তমানে দেশের মানুষের অবস্থাও ঠিক তেমনি। ইতিমধ্যে যেসব আলামত দেখা যাচ্ছে, প্রধান দুটি দলের মধ্যে যেমন একগুঁয়েমি দেখা যাচ্ছে, তাতে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বর্তমান সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কিন্তু আদালত আরো দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা যেতে পারে বলে যে অভিমত দিয়েছিলেন, সেটা কানে তোলেনি। সরকারপক্ষীয় অনেকেই বলে থাকেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। সর্বত্র নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন করে_তাহলে আমাদের দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকবে কেন? কিন্তু সত্য হলো, ১৯৯৬ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে এ দেশে নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন করেছিল, আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে যায়নি এবং সেই ফলাফলও মানেনি। তখন তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি তুলেছিল এবং গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাসীন দল বিএনপি সেই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। পৃথিবীর অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তুলনা চলে না, দলীয় সরকারের অধীনে, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে সঠিক নির্বাচন হয় না, সেই সত্যটি তাঁরাই সেদিন তুলে ধরেছিলেন। এর কারণ আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট শক্তিশালী ও স্বাধীন করে গড়ে তোলা যায়নি। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী_সর্বত্রই রয়েছে দলীয়করণের প্রভাব। এ অবস্থায় যে নির্বাচন হবে_তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। সে কারণেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যেতে রাজি নয়। আর বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে সে নির্বাচনেরও গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আজ যদি আওয়ামী লীগের অবস্থানও বিরোধী দলে হতো, সম্ভবত তারাও এই পন্থা অনুসরণ করত।
কাজেই আমরা নতুন করে প্রধান দুই দলের বা জোটের মুখোমুখি রাজনীতি বা রক্তক্ষয়ী রাজনীতি চাই না। উভয় দলের নেতাদের সত্যিকারের গণতন্ত্র চর্চার অনুরোধ জানাই। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব। আর বিরোধী দলকে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি সংসদে গিয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে আন্তরিক উদ্যোগ ও সদিচ্ছার পরিচয় দিতে অনুরোধ জানাই। তারা সে রকম আচরণ করলে জাতি অবশ্যই তাদের মূল্যায়ন করবে।
No comments