র ঙ বে র ঙ-ইনকা রাজ্যের নিষ্ঠুর সম্রাট...
ইনকা সাম্রাজ্যের প্রজারা তাদের সম্রাটকে সূর্যের পুত্র বলে মনে করত। কারণ, সূর্যই ছিল তাদের প্রধান দেবতা। এছাড়া সেখানে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের লোকেরও বসবাস ছিল। সাম্রাজ্যে প্রায় একশটি ভাষা প্রচলিত থাকলেও প্রধান ভাষা ছিল কুয়িচুয়া। তবে ইনকাদের লিখিত ভাষা শক্তিশালী ছিল না বলে রহস্যময় এ সাম্রাজ্যের গোড়ার কথা জানা আজও সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হয়, ইনকা সাম্রাজ্যের উত্থান খ্রিস্টীয় তেরো শতকের দিকে।
কলম্বিয়ান-পূর্ব যুগে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল এটি। চার ভাগে ভাগ করে চালানো হতো এর শাসনকাজ। উঁচু পার্বত্য এলাকার রাজধানী কসকো শহরকে ঘিরেই মূলত বিস্তার লাভ করে তাদের সভ্যতা, যা বর্তমানে পেরু নামে পরিচিত। সেখানেই গড়ে উঠেছিল তাদের রাজনীতি, ব্যবস্থাপনা আর সেনা সদর দফতর।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, দেবতা তিচি বিরাকোচা প্যাকারিটাম্বো গুহা থেকে তার চার পুত্র এবং চার কন্যাকে পাঠিয়েছিলেন একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন দেবপুত্র সিনচি রোকা। তারা মিলিতভাবে কসকো ভ্যালিতে গড়ে তোলেন তাদের নতুন গ্রাম। অবশ্য এ নিয়ে ভিন্নমতও আছে। আরেক কাহিনী থেকে জানা যায়, সূর্যদেবতা ইনতির নির্দেশে মানকো এবং অসলো তিতিকাকা হ্রদের গভীর থেকে উঠে আসেন। প্রতিষ্ঠা করেন কসকো শহর। মুখে মুখে প্রচারিত এসব কাহিনীর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও ইনকার মানুষ মনে-প্রাণে তা আজও বিশ্বাস করে থাকে।
সে সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রভুত্ব স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলছিল। একই অবস্থা বিরাজ করছিল ইনকাতেও। ইনকার সম্রাটরা ১৪৩৮ থেকে ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে প্রভুত্ব স্থাপনকারীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে স্প্যানিশরা দখল করে নেয় ইনকা সাম্রাজ্য।
খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে কলম্বাসের অভিযানের সূত্র ধরেই স্প্যানিশরা ইনকা সাম্রাজ্যে হানা দেয়। প্রভুত্ব স্থাপনের উদ্দেশ্যে তারা সেখানে ঘাঁটিও গড়ে তোলে। ঠিক ওই সময়ই ইনকা সভ্যতার ত্রয়োদশ বা শেষ সম্রাট আতাউয়ালপা এবং তার ভাইয়ের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে শুরু হয়ে যায় দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হয় যুদ্ধ। ধারণা করা হয়, ওই যুদ্ধে প্রায় এক লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। জয়ী হন সম্রাট আতাউয়ালপা। কিন্তু তিনি উন্মাদের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ভাই উয়াসকারকে গ্রেফতার করে তার লোকদের দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এমনকি ভাইয়ের ছেলেমেয়েসহ রাজপরিবারের প্রায় পনেরোশ' সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এই সুযোগ গ্রহণ করেন পিজারু নামে এক ব্যক্তি। দ্রুত তিনি ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সাধারণের মনে সুন্দর আর স্বপ্নময় এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাতে থাকেন। অন্যদিকে স্প্যানিশদের সঙ্গে একজোট হয়ে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন সম্রাট আতাউয়ালপার বিরুদ্ধে। রাজ্যের অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে তারা সম্রাটকে এক আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ করেন, যা ছিল তাদের কূটকৌশলেরই অংশ। সম্রাট সেই সভায় চার হাজার সৈন্য সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু সৈন্যরা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন অস্ত্র ছাড়াই। কৌশলে স্প্যানিশরা সম্রাটকে তার লোকজনসহ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার প্রস্তাব দেয়। সঙ্গে এও জানিয়ে দেয় যে, খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ না করলে তারা শত্রু হয়ে উঠবে। সম্রাট এমন প্রস্তাবে অবাক হয়ে যান। ক্ষোভও প্রকাশ করেন এমন প্রস্তাব তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে। কিন্তু অস্ত্রহীন সৈন্যদের নিয়ে তিনি আক্রমণেও যেতে পারছিলেন না। তাছাড়া স্প্যানিশদের ছিল শক্তিশালী অস্ত্র আর ঘোড়া। ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হলো। স্প্যানিশরা সম্রাটকে গ্রেফতার করে ভাই হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে বারোটি অভিযোগ উত্থাপন করে। বিচারে তাকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে হস্তচালিত ফাঁসকলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
হআশরাফুল আলম মিলন
জনশ্রুতি অনুযায়ী, দেবতা তিচি বিরাকোচা প্যাকারিটাম্বো গুহা থেকে তার চার পুত্র এবং চার কন্যাকে পাঠিয়েছিলেন একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন দেবপুত্র সিনচি রোকা। তারা মিলিতভাবে কসকো ভ্যালিতে গড়ে তোলেন তাদের নতুন গ্রাম। অবশ্য এ নিয়ে ভিন্নমতও আছে। আরেক কাহিনী থেকে জানা যায়, সূর্যদেবতা ইনতির নির্দেশে মানকো এবং অসলো তিতিকাকা হ্রদের গভীর থেকে উঠে আসেন। প্রতিষ্ঠা করেন কসকো শহর। মুখে মুখে প্রচারিত এসব কাহিনীর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও ইনকার মানুষ মনে-প্রাণে তা আজও বিশ্বাস করে থাকে।
সে সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রভুত্ব স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলছিল। একই অবস্থা বিরাজ করছিল ইনকাতেও। ইনকার সম্রাটরা ১৪৩৮ থেকে ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে প্রভুত্ব স্থাপনকারীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে স্প্যানিশরা দখল করে নেয় ইনকা সাম্রাজ্য।
খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে কলম্বাসের অভিযানের সূত্র ধরেই স্প্যানিশরা ইনকা সাম্রাজ্যে হানা দেয়। প্রভুত্ব স্থাপনের উদ্দেশ্যে তারা সেখানে ঘাঁটিও গড়ে তোলে। ঠিক ওই সময়ই ইনকা সভ্যতার ত্রয়োদশ বা শেষ সম্রাট আতাউয়ালপা এবং তার ভাইয়ের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে শুরু হয়ে যায় দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হয় যুদ্ধ। ধারণা করা হয়, ওই যুদ্ধে প্রায় এক লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। জয়ী হন সম্রাট আতাউয়ালপা। কিন্তু তিনি উন্মাদের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ভাই উয়াসকারকে গ্রেফতার করে তার লোকদের দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এমনকি ভাইয়ের ছেলেমেয়েসহ রাজপরিবারের প্রায় পনেরোশ' সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এই সুযোগ গ্রহণ করেন পিজারু নামে এক ব্যক্তি। দ্রুত তিনি ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সাধারণের মনে সুন্দর আর স্বপ্নময় এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাতে থাকেন। অন্যদিকে স্প্যানিশদের সঙ্গে একজোট হয়ে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন সম্রাট আতাউয়ালপার বিরুদ্ধে। রাজ্যের অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে তারা সম্রাটকে এক আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ করেন, যা ছিল তাদের কূটকৌশলেরই অংশ। সম্রাট সেই সভায় চার হাজার সৈন্য সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু সৈন্যরা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন অস্ত্র ছাড়াই। কৌশলে স্প্যানিশরা সম্রাটকে তার লোকজনসহ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার প্রস্তাব দেয়। সঙ্গে এও জানিয়ে দেয় যে, খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ না করলে তারা শত্রু হয়ে উঠবে। সম্রাট এমন প্রস্তাবে অবাক হয়ে যান। ক্ষোভও প্রকাশ করেন এমন প্রস্তাব তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে। কিন্তু অস্ত্রহীন সৈন্যদের নিয়ে তিনি আক্রমণেও যেতে পারছিলেন না। তাছাড়া স্প্যানিশদের ছিল শক্তিশালী অস্ত্র আর ঘোড়া। ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হলো। স্প্যানিশরা সম্রাটকে গ্রেফতার করে ভাই হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে বারোটি অভিযোগ উত্থাপন করে। বিচারে তাকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে হস্তচালিত ফাঁসকলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
হআশরাফুল আলম মিলন
No comments