শনিবারের সুসংবাদ-ঘাসফুলে ভালোবাসার ছোঁয়া by রফিকুল ইসলাম,
অস্তগামী সূর্যের লাল আভা পড়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এর পাদদেশে ছোট ছেলেমেয়েদের জটলা। কাছে গিয়ে দেখা গেল, ৮-১০ জন করে গোল হয়ে বসেছে তারা, তাদের মধ্যে একজন তরুণ কিংবা তরুণী। ছেলেমেয়েগুলো গরিব ঘরের সন্তান। আর তরুণ-তরুণীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীরাই এখন শিক্ষক, বই-কাগজ হাতে পড়াচ্ছেন ওই গরিব শিশুদের।
রিয়াজ, সাইফুল, সমীর, হৃদয়, পরিতোষসহ ওই শিশুদের কারও বাবা দিনমজুর, কারও বাবা বুট-মুড়িওয়ালা। বাবা-মা ওদের শিক্ষার আলো নিতে বিদ্যালয়মুখী করেছিলেন। কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে বেশি দিন চালাতে পারেননি। বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে ওরা। কাজ নেয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ডায়নিং আর ক্যান্টিনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রছাত্রী তাদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে কিছু করার কথা ভাবেন। গড়ে ওঠে একটি সংগঠন। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে চালু হয় পাঠশালা। কোনো ফি ছাড়াই তারা পাচ্ছে শিক্ষা।
যেভাবে শুরু : গত সেপ্টেম্বরের এক বিকেলে ক্যাম্পাসের মাঠে বসে গল্প করছিলেন ফিশারিজ অনুষদের চতুর্থ সেমিস্টারের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন পলাশ কুমার পাল শিক্ষার আলোয় ক্যাম্পাসের আশপাশের গ্রামগুলোকে আলোকিত করার প্রসঙ্গ তোলেন। জয়দেব মিস্ত্রি, বারিন বাড়ৈ, মিঠুন পাল আর আবু হানিফ তাতে সায় দেন। তাঁদের উদ্যোগে সাড়া দেন ক্যাম্পাসের জ্যেষ্ঠ বন্ধুরা। সবাই নেমে পড়েন কাজে। শুরুতে একই অনুষদের মীর মোহাম্মদ আলী, নির্ঝর অন্তরা, সিফাতে আজমিন সূচি আশপাশের গ্রামজুড়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন, অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে পড়াশোনা ছেড়েছে। তাদের জড়ো করে ২৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় 'ঘাসফুল বিদ্যালয়ের' পথচলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে স্কুল পরিচালনার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়া হয়। অরাজনৈতিক, ধূমপানমুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ-তরুণীরাই এর সদস্য। তাঁরা জনপ্রতি মাসিক ৫০ টাকা করে দিয়ে চালান স্কুলের কার্যক্রম। এ ছাড়া বিশেষ চাঁদায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে ধরে রাখতে সপ্তাহে একদিন খাবার দেওয়া হয়।
যে কারণে ঘাসফুল : কৃষি অনুষদের নাসির উদ্দিন খান বলেন, 'ঘাসফুল বলতে আমরা পথশিশুদের বুঝিয়েছি। তাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে ভালো কিছু করা যায় তা প্রমাণের চেষ্টা করছি। স্কুলে শিশুদের উপস্থিতিই তার প্রমাণ দিচ্ছে।' সৌরভ ও জয়দেব মিস্ত্রি জানান, দলীয় সদস্যদের মাসিক চাঁদা, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের কোর্স কো-অর্ডিনেটর ড. সুলতান মাহমুদ এবং কৃষি সমপ্রসারণ ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগের প্রভাষক এ টি এম সানাউল হক স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। সদস্যরা প্রত্যেকে মাসে ৫০ টাকা চাঁদা দেন। ওই টাকায় কাগজ-কলম কেনা হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৬ জন।
সদস্য নির্ঝর অন্তরা ও সিফাতে আজমিন সূচি বলেন, 'শিক্ষার হার কম থাকার কারণে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনগ্রসর দুমকী, শ্রীরামপুর, রাজাখালী আর আঙ্গারী গ্রামকে আলোকিত করার উদ্যোগ নিই। গ্রামগুলোতে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, অর্ধশত শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ে হোটেল আর ক্ষেতখামারে কাজ করছে। ঘাসফুল স্কুলটি ঠিকমতো পাঠদান চালিয়ে যেতে পারলে এ পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতির দিকে যাবে।
স্কুলমুখী করা ও পাঠদান : ঝরে পড়া শিশুদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে তাদের অভিভাবকদের সচেতন করে তোলার কথা ভাবেন সংগঠনের সদস্যরা। অভিভাবকদের নিয়ে চলে উঠান বৈঠক। কয়েকটি উঠান বৈঠকের পর সুফল পাওয়া যায়। বর্তমানে গ্রামের পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া বেশ কয়েকটি শিশু বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্যান্টিন বয় পরিতোষকে জলিসা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
সংগঠনের সদস্যরা সবাই ফিশারিজ ও কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী। তাঁরাই শিক্ষক। পাঠশালা প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে। শিক্ষার্থীর অর্ধেকই ছাত্রী। পাঁচজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিশুর জন্য একটি গ্রন্থাগার গড়ে তোলারও কাজ চলছে। সেখানে বই পড়ার পাশাপাশি পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা থাকবে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির দুই সদস্য পলাশ পাল ও জয়দেব মিস্ত্রি জানান, তাঁরা এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে আরো অনেক দূর নিয়ে যেতে চান। তাঁরা চান এমন একদিন আসবে, যেদিন লেখাপড়ার পাশাপাশি এই শিশুরা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং স্বাবলম্বী হবে। মিঠুন ও বারিন বলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন সংস্কৃতিমনা মানুষ কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না। তাই তাঁরা শিশুদের সংস্কৃতিমনা করার জন্য মাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
পাঠশালায় একদিন : 'ঘাসফুল স্কুলে' গত মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, শেরে বাংলা হলের সামনে বিশাল মাঠ। এর এক কোণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। তার পাদদেশে চলছে পাঠদান। পাশের বিশাল মাঠে তখন সমানতালে চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আড্ডা। সেখানে অখিল নামের একজন অভিভাবক বলেন, তার ছেলে পরিতোষের টাকার অভাবে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সংসারের হাল ধরতে ক্যান্টিনে চাকরি নিয়েছিল। এক বছর এভাবে থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাকে জলিসা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। একই সঙ্গে পাঠশালায় তাকে পড়ানোর ব্যবস্থাও করেন।
আরেক অভিভাবক সুভাষ চন্দ্র করাতি বলেন, তাঁর মেয়ে কৃষ্ণা করাতি নাসিমা কেরামত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। টাকার অভাবে কৃষ্ণাকে বাইরে পড়ানো যাচ্ছিল না। স্কুলের পড়াও কৃষ্ণা এখানেই তৈরি করে। তাই রাতে বাসায় পড়ার দরকার হয় না। স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কৃষ্ণা আগের চেয়ে পড়াশোনায় ভালো করছে। ফলাফল ভালো হবে। রিয়াজ, সাইফুল ও সমীর জানায়, তারা অভাবের কারণে একপর্যায়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এখন আবার পড়াশোনা শুরু করেছে।
কর্তৃপক্ষ যা বলছে : পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে রয়েছে সচ্ছল ঘরের সন্তানদের জন্য 'সৃজনী বিদ্যানিকেতন'। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কোর্স কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক আ ক ম মোস্তফা জামান ওই বিদ্যালয়ের পরিচালক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব তরুণ-তরুণীর এই সাহসী উদ্যোগের কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা আবার শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্যাম্পাসের আবাসিক কিছু শিক্ষার্থী মিলে প্রতিদিন শহীদ মিনারের পাদদেশে ছিন্নমূল ও অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের পাঠদান করাচ্ছে। বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। আমার বিশ্বাস তারা পাঠদান অব্যাহত রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রছাত্রী তাদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে কিছু করার কথা ভাবেন। গড়ে ওঠে একটি সংগঠন। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে চালু হয় পাঠশালা। কোনো ফি ছাড়াই তারা পাচ্ছে শিক্ষা।
যেভাবে শুরু : গত সেপ্টেম্বরের এক বিকেলে ক্যাম্পাসের মাঠে বসে গল্প করছিলেন ফিশারিজ অনুষদের চতুর্থ সেমিস্টারের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন পলাশ কুমার পাল শিক্ষার আলোয় ক্যাম্পাসের আশপাশের গ্রামগুলোকে আলোকিত করার প্রসঙ্গ তোলেন। জয়দেব মিস্ত্রি, বারিন বাড়ৈ, মিঠুন পাল আর আবু হানিফ তাতে সায় দেন। তাঁদের উদ্যোগে সাড়া দেন ক্যাম্পাসের জ্যেষ্ঠ বন্ধুরা। সবাই নেমে পড়েন কাজে। শুরুতে একই অনুষদের মীর মোহাম্মদ আলী, নির্ঝর অন্তরা, সিফাতে আজমিন সূচি আশপাশের গ্রামজুড়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন, অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে পড়াশোনা ছেড়েছে। তাদের জড়ো করে ২৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় 'ঘাসফুল বিদ্যালয়ের' পথচলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে স্কুল পরিচালনার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়া হয়। অরাজনৈতিক, ধূমপানমুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ-তরুণীরাই এর সদস্য। তাঁরা জনপ্রতি মাসিক ৫০ টাকা করে দিয়ে চালান স্কুলের কার্যক্রম। এ ছাড়া বিশেষ চাঁদায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে ধরে রাখতে সপ্তাহে একদিন খাবার দেওয়া হয়।
যে কারণে ঘাসফুল : কৃষি অনুষদের নাসির উদ্দিন খান বলেন, 'ঘাসফুল বলতে আমরা পথশিশুদের বুঝিয়েছি। তাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে ভালো কিছু করা যায় তা প্রমাণের চেষ্টা করছি। স্কুলে শিশুদের উপস্থিতিই তার প্রমাণ দিচ্ছে।' সৌরভ ও জয়দেব মিস্ত্রি জানান, দলীয় সদস্যদের মাসিক চাঁদা, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের কোর্স কো-অর্ডিনেটর ড. সুলতান মাহমুদ এবং কৃষি সমপ্রসারণ ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগের প্রভাষক এ টি এম সানাউল হক স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। সদস্যরা প্রত্যেকে মাসে ৫০ টাকা চাঁদা দেন। ওই টাকায় কাগজ-কলম কেনা হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৬ জন।
সদস্য নির্ঝর অন্তরা ও সিফাতে আজমিন সূচি বলেন, 'শিক্ষার হার কম থাকার কারণে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনগ্রসর দুমকী, শ্রীরামপুর, রাজাখালী আর আঙ্গারী গ্রামকে আলোকিত করার উদ্যোগ নিই। গ্রামগুলোতে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, অর্ধশত শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ে হোটেল আর ক্ষেতখামারে কাজ করছে। ঘাসফুল স্কুলটি ঠিকমতো পাঠদান চালিয়ে যেতে পারলে এ পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতির দিকে যাবে।
স্কুলমুখী করা ও পাঠদান : ঝরে পড়া শিশুদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে তাদের অভিভাবকদের সচেতন করে তোলার কথা ভাবেন সংগঠনের সদস্যরা। অভিভাবকদের নিয়ে চলে উঠান বৈঠক। কয়েকটি উঠান বৈঠকের পর সুফল পাওয়া যায়। বর্তমানে গ্রামের পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া বেশ কয়েকটি শিশু বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্যান্টিন বয় পরিতোষকে জলিসা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
সংগঠনের সদস্যরা সবাই ফিশারিজ ও কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী। তাঁরাই শিক্ষক। পাঠশালা প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে। শিক্ষার্থীর অর্ধেকই ছাত্রী। পাঁচজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিশুর জন্য একটি গ্রন্থাগার গড়ে তোলারও কাজ চলছে। সেখানে বই পড়ার পাশাপাশি পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা থাকবে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির দুই সদস্য পলাশ পাল ও জয়দেব মিস্ত্রি জানান, তাঁরা এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে আরো অনেক দূর নিয়ে যেতে চান। তাঁরা চান এমন একদিন আসবে, যেদিন লেখাপড়ার পাশাপাশি এই শিশুরা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং স্বাবলম্বী হবে। মিঠুন ও বারিন বলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন সংস্কৃতিমনা মানুষ কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না। তাই তাঁরা শিশুদের সংস্কৃতিমনা করার জন্য মাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
পাঠশালায় একদিন : 'ঘাসফুল স্কুলে' গত মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, শেরে বাংলা হলের সামনে বিশাল মাঠ। এর এক কোণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। তার পাদদেশে চলছে পাঠদান। পাশের বিশাল মাঠে তখন সমানতালে চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আড্ডা। সেখানে অখিল নামের একজন অভিভাবক বলেন, তার ছেলে পরিতোষের টাকার অভাবে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সংসারের হাল ধরতে ক্যান্টিনে চাকরি নিয়েছিল। এক বছর এভাবে থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাকে জলিসা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। একই সঙ্গে পাঠশালায় তাকে পড়ানোর ব্যবস্থাও করেন।
আরেক অভিভাবক সুভাষ চন্দ্র করাতি বলেন, তাঁর মেয়ে কৃষ্ণা করাতি নাসিমা কেরামত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। টাকার অভাবে কৃষ্ণাকে বাইরে পড়ানো যাচ্ছিল না। স্কুলের পড়াও কৃষ্ণা এখানেই তৈরি করে। তাই রাতে বাসায় পড়ার দরকার হয় না। স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কৃষ্ণা আগের চেয়ে পড়াশোনায় ভালো করছে। ফলাফল ভালো হবে। রিয়াজ, সাইফুল ও সমীর জানায়, তারা অভাবের কারণে একপর্যায়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এখন আবার পড়াশোনা শুরু করেছে।
কর্তৃপক্ষ যা বলছে : পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে রয়েছে সচ্ছল ঘরের সন্তানদের জন্য 'সৃজনী বিদ্যানিকেতন'। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কোর্স কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক আ ক ম মোস্তফা জামান ওই বিদ্যালয়ের পরিচালক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব তরুণ-তরুণীর এই সাহসী উদ্যোগের কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা আবার শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্যাম্পাসের আবাসিক কিছু শিক্ষার্থী মিলে প্রতিদিন শহীদ মিনারের পাদদেশে ছিন্নমূল ও অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের পাঠদান করাচ্ছে। বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। আমার বিশ্বাস তারা পাঠদান অব্যাহত রাখবে।
No comments