অভিরুচি-মুদ্রা সংগ্রাহক by আব্দুল্লাহ ইফ্ফাত

খ ও বিনোদনের অভাবে মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ে। সুতরাং মানুষের জীবনে শখ লালন করা জরুরি।' এভাবেই বলতে শুরু করেন পুরনো টাকা সংগ্রহকারীদের সংগঠন নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি মোঃ হোসেন চৌধুরী।'তখন প্রথম শ্রেণীতে পড়ি, ১৯২৮ সাল। স্কুলে লেবনচুষ কেনার পর যে মুদ্রা ফেরত পেলাম, অন্য জায়গায় দিতে গিয়ে দেখি সেটা অচল পয়সা। এভাবে যখন তিন-চারটা হলো, কোনোটা বড়, কোনোটা ছোট, দেখতেও বেশ


সুন্দর, সেগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে মনে হলো, আরও সংগ্রহ বাড়ালে কেমন হয়। মনে আছে তখন কুমিল্লা স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। চিন্তা করলাম যারা বিদেশ থেকে আসে তাদের কাছ থেকে বিদেশি টাকা পাওয়া যেতে পারে। খোঁজ-খবর নিয়ে ট্রেনে করে চলে গেলাম একদিন আখাউড়ায়। পেলামও একটা মুদ্রা। এমনও হয়েছে অনেক কষ্ট করে এক জায়গায় গিয়েছি, মুদ্রা না পেয়ে ফিরে এসেছি।'
মোঃ হোসেন চৌধুরীর সংগ্রহে বর্তমানে দুই হাজারের অধিক মুদ্রা আছে, যা যত্ন করে সাজানো আছে তার অনেক পল্গাস্টিকের বক্সে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দের মুদ্রা, প্রাচীনযুগে গ্রিক, মৌর্য, গুপ্ত, চন্দ্র, পার্থিয়ান এবং কুশান যুগের মুদ্রা। প্রাচীন বাংলার হরিকেল, ময়নামতি, সমতট, ত্রিপুরা, জয়ন্তিকা ও পট্রিকেরার মুদ্রা আছে তার কাছে।
মজার ঘটনা জানাতে গিয়ে জানালেন, 'মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর অসুস্থ হলে তার স্ত্রী নূরজাহান রাজকার্য চালাতেন। এমনি এক সময় নূরজাহান একটি স্বর্ণমুদ্রা বাজারে ছাড়েন। এ মুদ্রায় ফার্সি ভাষায় একটি শের লেখা ছিল। শেরটি এ রকম- 'হে সোনা তুমি মূল্যবান/তোমার গায়ে যখন নূরজাহানের নাম উঠেছে/তখন তার মূল্য অনেক বেড়ে গেছে।' এই মুদ্রাটির ছবি দেখে তিনি মুদ্রা সংগ্রহের প্রতি আরও বেশি টান অনুভব করেন। 'এরপর থেকে মুদ্রাকে জানতে শুরু করলাম। চাকরি থেকে অবসর নিলাম। দোকান করে অন্য দ্রব্যসামগ্রীর সঙ্গে মুদ্রাও বিক্রি করতে শুরু করলাম। খুঁজে পেলাম ভালো কয়েকজন মুদ্রা সংগ্রহকারীকে। তবে মিরপুর ১০ এর চৌরাস্তার সেই দোকানটি আর এখন নেই। ৮/১০ জন সংগ্রহকারী মিলে ১৯৯১ সালে গঠন করি নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ।'
দিন দিন সোসাইটির সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। এখন সদস্য সংখ্যা ১২৪। এ সোসাইটির সদস্য নয় বছরের এক শিশু বলতে পারে পৃথিবীর সব ক'টি দেশের নাম। সোসাইটির আরেক সদস্য ইফতিখার হাসান ছিলেন একটি গার্মেন্টসের মহাব্যবস্থাপক। অসুস্থতার কারণে এখন ঘরেই থাকেন। তিনি জানালেন, মুদ্রা ও অন্যান্য শখের সামগ্রী দেখেই সময় কাটে তার এখন। মুদ্রা তার অন্যতম বন্ধু। এ সোসাইটির মুদ্রা সংগ্রহকারীরা প্রায়ই সঙ্গ দেন তাকে।
সোসাইটির সভাপতি আরও জানালেন, 'বাংলাদেশ সরকার পাঁচ টাকা মানের ধাতব মুদ্রা আমাদের পরামর্শেই করেছিল। ১০ টাকা মানের ধাতব মুদ্রা প্রচলনের জন্য সরকারকে আমরা পরামর্শ দিয়েছি।' তিনি জানান, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সাতটি রৌপ্য মুদ্রা বেরিয়েছে। এ কথা অনেকেই জানে না। এর এক একটির মূল্য এক হাজার ৫০০ টাকা। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার ২০তম বার্ষিকীতে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি দিয়ে প্রথম একটি রৌপ্য মুদ্রা তৈরি হয়। মুদ্রাটি বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি নিয়ে বাজারে ছাড়ে জার্মানি। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি মুদ্রায় রয়ালটি পাবে এক ডলার। সোসাইটির সদস্যরা মুদ্রা সংগ্রহের জন্য গেলেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। অবাক কাণ্ড! তারা জানান, মুদ্রা তো এই দেশে নাই, আছে জার্মানিতে। অনেক লেখালেখির পর কিছু মুদ্রা তারা এনে দিলেন। এর পরের রৌপ্য মুদ্রাগুলো ছাড়া হয়েছে এই দেশেই। এসব মুদ্রা সহজে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি আলাদা বুথ আছে।
নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্যরা ধাতব মুদ্রা ছাড়াও সংগ্রহ করেন কাগুজে নোট ও মেডেল। এ সোসাইটির সদস্যরা জানান, ভারতে আছে অনেক সোসাইটি। সেখানে আছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। মুদ্রার মাধ্যমে সহজেই দেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা যায় বিদেশিদের কাছে। এ জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি মুদ্রা জাদুঘর করা দরকার বলে তারা মনে করেন। তারা সরকারের কাছ থেকে সোসাইটির জন্য একটি জায়গা বরাদ্দের দাবি করেন। যেখানে তাদের সংগৃহীত মুদ্রা প্রদর্শিত হবে। শিক্ষার্থীসহ ইতিহাস পিপাসুরা তাদের খোরাক পাবে সেখান থেকে। হ

No comments

Powered by Blogger.