দুর্নীতির ধারণা সূচক-সামান্য নয়, চাই বিপুল অগ্রগতি

রেওয়াজ অনুসারে প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার-টিআইবি বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের উদ্দেশে উপস্থাপন করেছে। সাম্প্রতিক অতীতেও টিআই রিপোর্ট নিয়ে এ দেশে রাজনীতির মাঠ গরম হয়েছে। সরকার, বিরোধী দল তো বটেই সমাজের নানা অংশে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে। কখনও


কখনও এ বিতর্ক তিক্ততায় পর্যবসিত হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ধারণা সূচকে বাংলাদেশের ১ নম্বর অবস্থানই এ বিতর্কের প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল। সে সময় সমাজে টিআই রিপোর্ট নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে তাকে সে সময়ের সরকারগুলো উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও কার্যত সে আলাপ-আলোচনাই বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাবকে চাঙ্গা করতে পেরেছিল। সরকারগুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছিল। দুর্নীতি দমন ব্যুরোর স্থানে কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশনও গঠিত হতে পেরেছিল সে প্রেক্ষাপটে। আশার কথা, সরকারের উদ্যোগ, নাগরিক সমাজের তৎপরতা ও দেশের বাইরে শুভানুধ্যায়ীদের সমর্থনের কারণে দুর্নীতির সাগরে পানি সেচার কাজটি চালু হতে পেরেছিল। ২০০৫-এর পর বাংলাদেশকে প্রথম অবস্থানে আর দেখা যায়নি। ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম, ২০০৮ সালে দশম অবস্থানে পেঁৗছাতে পেরেছিল বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০০৯ সালে ত্রয়োদশ, ২০১০ সালে দ্বাদশ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে আবারও অবস্থান ত্রয়োদশে। আশাব্যঞ্জক খবর হলো, ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হয়েছে এবং তা ১৩'র ঘরে মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু হতাশার খবর হলো, বিগত তিন বছরে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিল দুর্নীতিবিরোধী নানামুখী অভিযানের প্রেক্ষাপটে। সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে যে ইস্যুটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে তা দুর্নীতি। আওয়ামী লীগও নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দুর্নীতি দমনের অভিযান প্রত্যাশিত মাত্রায় গতিশীল রাখতে পারেনি সরকার। দুর্নীতি দমন কমিশনও ক্ষমতা হারিয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের জন্য এটি সুখকর পরিস্থিতি নয়। টিআই রিপোর্টে ১৩তম অবস্থানকে স্থিতিশীল বা স্বস্তিদায়ক বলে বিবেচনা করা যায় না। কেননা, ধারণা সূচকে স্কোর ৩-এর নিচে থাকায় বাংলাদেশ এখনও দুর্নীতি দ্বারা প্রভাবিত ও দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে সে অবস্থানে থাকা অধিকাংশ দেশেই গণতন্ত্র কার্যকর নয়। ফলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আরও অগ্রগতিই প্রত্যাশিত ছিল। ১ নম্বর অবস্থানে থাকার লজ্জা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে রেহাই পেলেও দুর্নীতির ক্ষতি থেকে মুক্তি এখনও মেলেনি, এ সত্য তাই মেনে নেওয়ার সময় এসেছে। নাগরিকরা আশা করে, সরকার আন্তরিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার প্রেক্ষাপট রচনা করবে। এ জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে যেমন কার্যকর হতে হবে, তেমনি সরকারের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকারি সম্পদের অপব্যবহার, ঘুষ, নানা ক্ষেত্রে গোপন সিদ্ধান্তের প্রবণতা দুর্নীতির প্রকোপ বাড়াচ্ছে বলে টিআই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতির ধারণা সূচকে যে অবস্থান আমরা অর্জন করেছি তা আশাপ্রদ। সরকারের আগামী মেয়াদকালে এ পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে বলে আমরা আশা করি। এ জন্য সামান্য অগ্রগতিতে থেমে থাকলে চলবে না, প্রকৃত অর্থে ভালো করতে হলে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.