চরাচর-মা দিবস by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

'সন্তানের অসুখ। বিছানার পাশে বসে আছেন মা। কখনো সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, কখনো দিচ্ছেন মাথায় জলপট্টি। এভাবে কেটে যায় সারা রাত। এতটুকু সময়ের জন্য মায়ের চোখে যেন ঘুম নেই। ক্লান্তি নেই মায়ের।'
'মায়ের অসুখ সারাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। দরিদ্র পরিবার। হাতে নগদ অর্থ নেই। ভিটেমাটি নেই।


মাকে যে বাঁচাতেই হবে। মায়ের চিকিৎসা করাতে নিজের কিডনি বিক্রি করে টাকা জোগাতেও পিছপা হয় না সন্তান।'
সন্তানের প্রতি মায়ের ও মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা দেখানোর এমন অনেক গল্পই আছে। মানবজীবনের যত ভালোবাসা আর অটুট বন্ধনের নজির আছে, তার মধ্যে মা-সন্তানের বন্ধনই সবচেয়ে সুদৃঢ় ও অটুট। নিজের কষ্টকে তুচ্ছজ্ঞান করে সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে সব সময়ই ব্যস্ত থাকেন মমতাময়ী মা। সন্তানের ভালোর জন্য কী-ই বা না করেন মা। সন্তানের কাছেও সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছেন মা। একটি শব্দই সন্তানকে প্রাণশক্তি দেয়, সেটি হলো 'মা'।
'মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই/ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।' কবির লেখনীতেও ফুটে ওঠে মায়ের প্রতি ভালোবাসার কথা, শ্রদ্ধার কথা। মাকে স্মরণ করে জগদ্বিখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, 'আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি অথবা যা হতে আশা করেছি, তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী।'
আজ বিশ্ব মা দিবস। মা দিবস পালনের রেওয়াজ শত বছরের পুরনো। বিশ্ব মা দিবসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৯০৭ সাল থেকে। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মা দিবস পালিত হয় থাকে। মায়ের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়।
আজ থেকে দেড় শ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিস নামে এক নারী মায়েদের অনুপ্রাণিত করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে তাঁর মেয়ে আনা মারিয়া জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ১৯০৭ সালের এক রবিবার আনা মারিয়া জারভিস তাঁর সানডে স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। এভাবেই শুরু হয়ে যায় মা দিবসের যাত্রা। ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেন। তবে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে মে মাসের চতুর্থ রবিবার 'মাদারিং সানডে' হিসেবে পালিত হয়। উদ্যাপনের দিক দিয়ে বড়দিন ও ভালোবাসা দিবসের পর মা দিবসের অবস্থান। সাধারণত সাদা ফুলকে মা দিবসের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দেখাতে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে নেওয়ার যুক্তি অনেকের কাছেই সেভাবে গ্রহণযোগ্য না হলেও অনেকেই মনে করেন_মাকে সম্মান দেখাতে, তাঁকে গভীরভাবে স্মরণ করতে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত মা দিবসের গুরুত্ব রয়েছে। দুনিয়ার লাখো-কোটি মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষও তাদের মন-প্রাণ উজাড় করে মায়ের প্রতি জানাবে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম।

No comments

Powered by Blogger.