বড়দের জগতের অসহিষ্ণুতার প্রভাব নয় কি?-কিশোরদের সহিংস আচরণ
১৪ বছরের ছাত্র সৌমেনকে হত্যা করেছে তারই বয়সী একদল ছাত্র। ধারালো অস্ত্র দিয়ে, বেধড়ক পিটিয়ে এমনই মুমূর্ষু করেছে যে চিকিৎসার পরও তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। বড়দের জগতের সহিংসতার পেছনে স্বার্থ থাকে, শত্রুতা থাকে। কিন্তু কার স্কুল বেশি ভালো, তা নিয়ে ঝগড়া খুনোখুনি পর্যায়ে চলে যাওয়ার পেছনে দোষী করব কোন স্বার্থকে?
কিশোর বয়সীদের হাতে এক কিশোরের এই মৃত্যু আমাদের এক নীরব কিন্তু গভীর অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। সেই সত্য হলো, বড়দের জগতের সহিংসতার ছাপ কি ছোটদের মনেও এমন প্রভাব ফেলছে যে একই রকম হানাহানির লক্ষণ তাদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে?
গতকাল বুধবারের প্রথম আলোয় চট্টগ্রামের সৌমেনের নিহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সে যাদের হাতে নিহত হয়েছে, আইনের বিচারে তাদের কৃতকর্ম ফৌজদারি অপরাধ বলে বিবেচ্য হওয়ার কথা নয়। কারণ, যারা এ সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে তারাও শিশু। এই বাস্তবতায় এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে যে শিশুদের মধ্যে কেন এ ধরনের সহিংসতার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। সামাজিক বাস্তবতার প্রভাব প্রত্যেক মানুষ, এমনকি শিশুদের ওপরও পড়ে। শেকড় থেকে বৃক্ষের একটি ডালে যদি পুষ্টি না যায়, তাহলে সেটি মরে যায়। তেমনি শিশুদের মধ্যে এ রকম প্রবণতা ঢুকে পড়ার পেছনে সমাজ নামক বৃক্ষেরও কিছু দায় থেকে যায়।
শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধের বিস্তার ঘটছে। দরিদ্র পথশিশু ও বস্তিশিশুদের নানা রকম অপরাধে ব্যবহার করে অপরাধের সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো। কিন্তু সৌমেনের ওপর আক্রমণকারীদের মধ্যে অপরাধজগতের সে ধরনের সংক্রমণ ঘটার কথা নয়। তারাও সৌমেনের মতোই নিরীহ শিশু। তা হলেও, নিশ্চয়ই সমাজের দলাদলি, সন্ত্রাস, সহিংসতা তাদের মনোজগতেও এমন দাগ কেটেছে যে দুটি স্কুলের মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠ তা প্রতিষ্ঠায় তারা সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে ফেলেছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় অভিভাবক-মহল থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত সবারই টনক নড়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের অজান্তেই যে আমাদের শিশুরা অশিশুসুলভ আচরণ করছে, এর প্রতিকার না করাটা হবে চরম অপরিণামদর্শিতা।
No comments