শিক্ষার মান বাড়ূক by মুহাম্মদ নাজমুল হক
সম্প্রতি প্রকাশিত ২০১১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের শতকরা হার ৮২.৩১। স্বাধীনতার পর ৪০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় রেকর্ড পরিমাণ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। ২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর আজ ১১তম বছরে এসেও পাসের হারের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
বেড়েছে জিপিএ- ৫.০০ প্রাপ্তির সংখ্যাও। কিন্তু একজন শিক্ষক হিসেবে এই ফলে আমি খুব বেশি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, এ সাফল্য যতটা না শিক্ষার্থীর তার চেয়ে বেশি বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা সরকারের। আমার মনে হয়, এই কৃতিত্বপূর্ণ ফলের সবটুকু কৃতিত্বের দাবি সব শিক্ষার্থী করতে পারবে না। অনেক শিক্ষার্থীই নিজ যোগ্যতায় ভালো ফল অর্জন বা পাস করেনি। এর পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মেধার চেয়ে পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতিতে শৈথিল্য। যেখানে শিক্ষার্থীরা দেখাদেখি বা কথা বলার সুযোগ পায়। কেননা পরীক্ষায় নকল বন্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে এখন দেখাদেখি ও কথা বলার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। আরও রয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষের অলিখিত কিছু নির্দেশনা। যেমন_ প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের প্রতি নির্দেশ থাকে, 'আপনি এমনভাবে প্রশ্ন করবেন যেন ছাত্রছাত্রীরা সহজে উত্তর দিতে পারে।' আবার উত্তরপত্র গ্রহণের সময় পরীক্ষকদের বলে দেওয়া হয়, 'আপনারা উদারভাবে খাতা দেখবেন। পরীক্ষার্থীরা যেন ফেল না করে। খাতায় যাই-ই লেখুক লেখা থাকলেই নম্বর দেবেন।' যে পরীক্ষকের মূল্যায়নকৃত খাতায় ফেলের সংখ্যা বেশি থাকে তাকে আগামী পরীক্ষায় আর পরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না। এসব কারণে উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না। ফলে পরীক্ষার ফল ভালো হচ্ছে। রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করছে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় পাস করে না অথচ প্রভাবশালী ব্যক্তি বা ম্যানেজিং কমিটির সুপারিশে ফরম ফিলাপ করে ওই শিক্ষার্থী ঠিকই বোর্ড পরীক্ষায় পাস করে। আবার অনেক শিক্ষার্থীকে বলতে শুনেছি, 'স্যার পাস করলাম কীভাবে তা আমিই ভেবে পাই না।' এভাবে পাস করানোর ফলে পাসের হার বাড়ছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ খুশিতে আনন্দে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। সরকারও তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার স্বার্থে বোর্ডগুলোকে পাসের হার বাড়াতে উৎসাহিত করছে। বোর্ডগুলোকে বলছে, অমুক বোর্ড ভালো ফল করছে, আপনার বোর্ড করছে না কেন? বোর্ডগুলোও আন্তঃবোর্ড প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। ফলে পাসের হার বৃদ্ধির সাফল্যে সরকারও আনন্দে উদ্বেলিত হয়। কিন্তু সরকার তথা সংশিল্গষ্ট কর্তৃপক্ষের উপলব্ধি করা উচিত সব শিক্ষার্থীই কারও করুণায় বা নম্বরভিক্ষা করে পাস করতে চায় না। যারা মেধাবী ছাত্রছাত্রী তারা তাদের নিজের যোগ্যতা দিয়েই ভালো ফল করতে চায়। তারা পরীক্ষা হলের পরিবেশ ভালো চায়। তারা তাদের উত্তরপত্রের সঠিক মূল্যায়ন চায়।
নানা কায়দা-কৌশল করে শুধু পাসের হার বাড়িয়ে আর মানের অবনতি করে দেশের উন্নয়ন হবে না। বরং শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়বে। অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে। সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক সৃষ্টি হবে না। কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা গ্রহণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে এই উদারতার ফলে অনেক পাসের অযোগ্য ছাত্র পাস করছে। এসব ছাত্রছাত্রীর অনেকেই নেতা ধরে, টাকাপয়সা উৎকোচ দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে এবং যত্রতত্র গড়ে ওঠা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। আবার উচ্চপদে চাকরিও নিচ্ছে। এসব তথাকথিত উচ্চশিক্ষিতরা কীভাবে দেশের কল্যাণ করবে তা সহজেই অনুমেয়।
পাসের হার বৃদ্ধি পাবে এটা আমরা সবাই চাই, তবে তা শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করে নয়। কেননা মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া জাতিকে সুগঠিত করা সম্ভব নয়। আজ যারা মেধাবী ছাত্রছাত্রী তারাই একদিন দেশের সেরা মানুষ হয়ে দেশটাকে বদলে দেবে। সোনার বাংলা গড়তে আমাদের আগামীর সন্তানদের মেধার লালন করতে হবে। মেধা ও মান চর্চার মাধ্যমে সমাজে উপযুক্ত, সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্য বেশি পাসের পাশাপাশি শিক্ষকদের মর্যাদা এবং শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু পাসের হার বাড়ানোর চিন্তা করলে দেশ ও জাতি কাঙ্ক্ষিত মানের উপযুক্ত সুনাগরিক সৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে।
সহকারী অধ্যাপক
উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ
নানা কায়দা-কৌশল করে শুধু পাসের হার বাড়িয়ে আর মানের অবনতি করে দেশের উন্নয়ন হবে না। বরং শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়বে। অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে। সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক সৃষ্টি হবে না। কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা গ্রহণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে এই উদারতার ফলে অনেক পাসের অযোগ্য ছাত্র পাস করছে। এসব ছাত্রছাত্রীর অনেকেই নেতা ধরে, টাকাপয়সা উৎকোচ দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে এবং যত্রতত্র গড়ে ওঠা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। আবার উচ্চপদে চাকরিও নিচ্ছে। এসব তথাকথিত উচ্চশিক্ষিতরা কীভাবে দেশের কল্যাণ করবে তা সহজেই অনুমেয়।
পাসের হার বৃদ্ধি পাবে এটা আমরা সবাই চাই, তবে তা শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করে নয়। কেননা মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া জাতিকে সুগঠিত করা সম্ভব নয়। আজ যারা মেধাবী ছাত্রছাত্রী তারাই একদিন দেশের সেরা মানুষ হয়ে দেশটাকে বদলে দেবে। সোনার বাংলা গড়তে আমাদের আগামীর সন্তানদের মেধার লালন করতে হবে। মেধা ও মান চর্চার মাধ্যমে সমাজে উপযুক্ত, সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্য বেশি পাসের পাশাপাশি শিক্ষকদের মর্যাদা এবং শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু পাসের হার বাড়ানোর চিন্তা করলে দেশ ও জাতি কাঙ্ক্ষিত মানের উপযুক্ত সুনাগরিক সৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে।
সহকারী অধ্যাপক
উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ
No comments