পার্বত্য জনপদ-এই চোখের জল: এই আতঙ্ক by সেলিনা হোসেন

গঙ্গারামমুখ পাহাড়ি এলাকায় আমরা একদল মানুষ যখন পৌঁছাই তখন দুপুর গড়ায়নি। রোদ ঝকঝকে দিন। রাস্তার দুপাশের মাথার ওপর ছাউনি দেওয়া দুপাশ খোলা তাঁবুর নিচে ওরা অনেকে গাদাগাদি করে বসেছিল। তাদের ঘর পুড়েছে, সঙ্গে সংসারের যাবতীয় দ্রব্যসামগ্রী।


এখন তারা রিলিফ নিচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে রিলিফ দেওয়া হচ্ছে। ওরা পাহাড়ি আদিবাসী মানুষ। ওদের আছে ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক-সাংস্কৃতিক পরিচয়। আছে নাগরিক হিসেবে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। তার পরও তছনছ হয়ে যায় ওদের জীবন। রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাত ওদের নির্মমভাবে আঘাত করে।
সে জন্য ওদের আর্তনাদ—আমরা খাদ্য চাই না, আমরা নিরাপত্তা চাই।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার কাছে এই আবেদন রাষ্ট্রের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে।
যে নিরাপত্তা চায় পাহাড়ের ওপরের দূরের সেনা ছাউনির দিকে দৃষ্টি চলে গেলে ওর সঙ্গে আমরাও সেদিকে তাকাই। চোখে ভেসে ওঠে পত্রিকার পৃষ্ঠায় দেখা বুদ্ধপুদির লুটিয়ে থাকা শরীর। গুলি ফুটো করে দিয়েছে বুদ্ধপুদির বুক-পিঠ, সংসার এবং তিনটি ফুলের মতো নিষ্পাপ ছেলেমেয়ের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। নিহত মায়ের হত্যাকারীর বিচার চেয়ে রাষ্ট্রের সামনে দাঁড়ানোর সাধ্য কি ওদের আছে? এক কথায় নেই। নেই বলে অসংখ্য মানুষকে ছুটে আসতে হয়েছে নির্মমতার চিত্র দেখে। নির্যাতনকারীদের স্বরূপটি তুলে ধরার জন্য। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের পরিসর থেকে গঙ্গারামমুখ গ্রামসহ পাহাড়ি জনপদের অন্যান্য গ্রাম কিংবা খাগড়াছড়ির সাতভাইয়াপাড়াসহ আরও কয়েকটি পাড়ার আদিবাসী মানুষের এই একটিই কথা। ঠিক একই ভাষায় নয়, হয়তো অন্য কোনো বাক্য গঠন, কিংবা নিজেদের মাতৃভাষায় পাহাড়ি আদিবাসীরা এই একই কথা বলছে। তাদের আতঙ্কিত দৃষ্টি স্থির হয়ে থাকে না কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর দিকে। তাদের দৃষ্টি অনবরত পাক খায় চারদিকে। কখন একটি বুলেট ছুটে আসবে কোন দিক থেকে ওরা জানে না।
বাঙালি সেটেলাররা আগুন লাগানোর পরও নিশ্চুপ থাকে নিরাপত্তা বাহিনী। আর আক্রমণকারীরা নিরাপদে তছনছ করে তাদের ঘরবাড়ি, জিনিসপত্র। তারা কার কাছে নিরাপত্তা পাবে? তাই দিনের বেলা ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে রাতের বেলা লুকিয়ে থাকে জঙ্গলে। অসংখ্য পোকামাকড়ের সঙ্গী হয়ে। খেয়ে না-খেয়ে দিনযাপনের প্রহসন ওদের জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।
গাছের মাথার ওপর দিয়ে দূর আকাশের দিকে তাকান ছায়ারানী। চোখের জল মুছে বলেন, ‘আমার ছেলে রূপক। এখনো নিখোঁজ। জানি না মরে গেছে না বেঁচে আছে। বেঁচে থাকলে কতটুকু ভালো আছে?’
তাঁর চোখে বেদনার ছায়ার চেয়ে বেশি হয়ে ফুটে ওঠে আতঙ্ক। এই বুঝি আবার আগুন লাগবে। দাউ দাউ জ্বলে উঠবে ঘর। জমাটবাঁধা কালো ধোঁয়া উড়ে যাবে আকাশের দিকে। তাঁকে দেখে মনে হয় আতঙ্কের অপর নাম জীবন। না, ছায়ারানী একা নন, এখানে যাঁরা আছেন তাঁদের সবার কাছেই আতঙ্ক জীবনের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে আমরা ভিন্ন কোনো দেশে দাঁড়িয়ে অচেনা মানুষের কথা শুনছি। ওরা আমাদের কেউ না। ওদের আমরা চিনি না। ওরা নিজ দেশে পরবাসী।
তাঁবুর নিচে বসে থাকা প্রকাশজ্যোতি বলেন, ‘আমার ঘর পুড়ে যাওয়ার জন্য যে দুঃখ পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছি আমার কেয়াং মন্দির পুড়ে যাওয়ায়। মন্দিরের দোষ কী? ওরা কেন মন্দিরে আগুন দিল?’
তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কেউ ছিল না। শুধু তাঁর আর্তনাদ ঘুরপাক খায় বাতাসে। বাতাস উড়ে যায় সমতল থেকে পাহাড়ের মাথায়। আবার ফিরে আসে গাছের ছায়ায়। আর আমাদের মনে হয়, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার এটাই নিয়তি। মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করলে হয়তো ঈশ্বরের পৃথিবী তার জন্য বাসযোগ্য থাকবে না। সেই জনগোষ্ঠী আর অধিকারের জন্য সোচ্চার হবে না। কিন্তু মানুষের প্রতিবাদী চেতনাকে বুঝে ওঠার বোধ হারিয়ে ফেলে অস্ত্রধারীরা। এই সত্য এখন ধ্বনিত হচ্ছে পাহাড়ি জনপদে। গ্রামগুলোর পোড়া ঘর, মৃত্যু, বিপন্ন মানুষের চেহারা এ কথাই প্রমাণ করে।
প্রতিবাদী মানুষের দিকে তাকিয়ে আবার স্থির বিশ্বাসে ফিরে আসি আমরা, যে জনপদের মানুষেরা রুখে দাঁড়াতে জানে। কতজনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে? অনেক। তাদের সংখ্যার হিসাব করতে চাই না। জানি তারা সমবেত মানুষ। তাদের কথা এক রকম। শুধু প্রকাশের ভিন্নতা আছে। অনুভবের ভিন্নতা আছে। ব্যক্তিগত শোকের ভিন্নতা এক হয়ে জমাট বেঁধে আছে। এখানেই ওদের শক্তি।
কথা হয় সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জ্যোৎস্নার সঙ্গে। অমপিকাও ছিলেন সঙ্গে। আমরা বসেছিলাম গাছের নিচে, পাহাড়ের ঢালু বেয়ে খানিক নিচে। দুজনই বললেন, ‘আমরা নারীরা প্রতিরোধের জায়গা গড়ে তুলেছি। আমাদের স্বামীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। আটকে রাখে। কয়েক দিন আগে দুজন মানুষকে বাজারের একটি ঘরে আটকে রাখলে আমরা নারীরা দলবেঁধে গিয়ে তাঁদের ছাড়িয়ে আনি। আমাদের চোখের সামনে আমরা তাঁদের মরতে দেখতে পারি না। এখন থেকে আমরা এভাবে পুরুষদের ছাড়িয়ে আনব বলে ঠিক করেছি। আমাদের কাছে রাইফেল নেই তো কী হয়েছে, আমাদের হাত-পা তো আছে।’
এ ঘটনার মাসখানেক আগে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বাঘাইছড়ি উপজেলা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বরাবর সাজেক এলাকায় নির্যাতন ও ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি পেশ করেন।
আমরা যখন কথা বলছি তখন অমপিকার তিন বছরের মেয়েটি রাস্তার ওপর থেকে মা মা করে ডেকে মাকে খুঁজছিল। মায়ের সাড়া পেয়ে পাহাড়ের ঢালু বেয়ে নামতে থাকে মেয়েটি। ও যখন মায়ের কোলে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন বুঝতে পারি পোড়া কাঠ, ছাই ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে উঠেছে প্রাণ। তার পরও ওদের বুকের ভেতর থেকে আতঙ্ক কাটে না। ওরা বলতে থাকে—খাদ্য নয়, নিরাপত্তা চাই। আর কেউ যেন নির্যাতন না করে, ভূমি থেকে উচ্ছেদ না করে, গুলি না ছোড়ে। বুঝতে পারি বেঁচে থাকার জন্য নিরাপত্তা কত জরুরি। নিরাপত্তা একটি শব্দ মাত্র নয়, জীবনের আরেক নাম।
একজন বলল, ঘটনার সূত্রপাত কোথায় তা দেখলে আসেন।
সেই পথে যেতে পড়ে পাহাড়িদের নতুন গড়ে ওঠা বাজার। ওরা নতুন পসরা নিয়ে বসেছে। নানা কিছু আছে। আমরা পানির বোতল কিনি। খিরাই কিনি। চা খাই। আবার জেগে উঠছে জীবন। বাজার পেরিয়ে সামনে একটি জায়গা দেখিয়ে একজন বলল, ওই নিচুতে ধান চাষ করেছে লালু চাকমা। একজন বাঙালি পাহাড়ের এই জায়গাটুকু কেটে ভাসিয়ে দিয়েছে ধানখেত। এখানে বারো ঘর বাঙালি ছিল। ঘরগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। একটি ঘর অক্ষত ছিল। সেই চালার নিচে ভাত রান্না করছেন একজন পাহাড়ি নারী। তাঁর পাশে বসে ভাত খাচ্ছিল একজন পুরুষ ও একটি শিশু।
ফেরার পথে এসে দাঁড়াই রাস্তার দুপাশে তৈরি করা তাঁবুর সামনে। বেশ কয়েকজন বাঙালি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামান। বেশির ভাগ কথা বলেন মোহাম্মদ আবদুল হাই আল সামছ। তিনি ২০০৫ সালে বাগেরহাট থেকে এই রিজার্ভ ফরেস্টে এসেছেন। বললেন, তিনি একজন দিনমজুর। ঘটনার দিন পাহাড়িরা প্রথমে তাঁদের আক্রমণ করে। তিনি বলেন, ‘আপনাগো কাছে আমাগো একটাই কথা। আপনোগো কাছে পাহাড়িরা ভালো। আর আমরা খারাপ। আপনেরা আমাগো কথাও লিখবেন। ইনসাফ কইরা লিখবেন। পুলিশ আর আর্মি ক্যাম্প আছে বইলা আমরা বাঁইচা আছি।’ তিনি কথা বলার সময় পেছনে হট্টগোল শুনতে পাই। বাঙালিরা অনেকে খুব উত্তেজিত। তাদের মূল অভিযোগ, তারাও যে নিগৃহীত হয়েছে সে কথাগুলো ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো ঠিকভাবে লেখেনি।
রাস্তার দুপাশের তাঁবুতে বসতির চিহ্ন ছিল না। হয়তো তারাও দিনের বেলায় ত্রাণের আশায় আসে, আর রাতের বেলা জঙ্গলে ঘুমোতে যায়। কে জানে! তাদের বিপর্যস্ত চেহারা দেখা যায়নি বলে সঠিক চিত্রটি বোঝা যাচ্ছিল না।
বাঘাইহাট থেকে ফিরে খাগড়াছড়ির গ্রাম সাতভাই পাড়া দেখতে গেলে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। পুড়ে গেছে ঘরবাড়িসহ নানা কিছু। মংমংলী মারমার ধান ভাঙার মেশিনটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে পুড়েছে কয়েক মণ সোনালি ধান। মংমংলী মারমা বলেন, ‘এখন আমি কী করব? আমার সব শেষ। সামান্য ত্রাণসামগ্রী পেলেই কি একজন মানুষ উঠে দাঁড়াতে পারে?’
এমন কতজনের কথা শুনব? শতমুখে বলতে চায় সবাই। আতঙ্ক থেকে মুক্তি চায়। নিরাপত্তা চায়। ওরা বিত্তশালী হতে চায় না। থালাভরা ভাত চায় না। বেঁচে থাকার অধিকার চায়। এমন অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। যে কথা শেষ করতে কয়েকটি পৃষ্ঠা মাত্র যথেষ্ট নয়। যেখানে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল মারমা আদিবাসীদের সঙ্গে, সেখান থেকে ২০০ গজ দূরের পাড়াটির নাম শালবন মোহাম্মদপুর। সেটেলারপাড়া নামেও পরিচিত। পাড়ার অধিবাসী সুলতান জানান, এই পাড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার বাঙালি পরিবার আছে। যেখানে দাঁড়িয়ে কয়েকজন বাঙালির সঙ্গে কথা হচ্ছিল, সেখানে ঘর পোড়ার কোনো চিহ্ন ছিল না। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সুলতান বলেন, এদিকে ঘর পোড়েনি। চারটি ঘর পুড়েছে পুকুরের ওই দিকে।
কথা হয় মোহাম্মদ ইমান আলীর সঙ্গে। তিনি ২৭ বছর আগে বাগেরহাট থেকে পার্বত্য জেলায় আসেন। এই পাড়ায় আছেন সাত বছর ধরে। কথা বলার সময় আশপাশের বাড়ি থেকে আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ-শিশু এসে দাঁড়াল। সবার চেহারায় শান্ত-স্নিগ্ধ ভাব ফুটে আছে। তারা কেউ আতঙ্কিত নয়। যদিও বলল, মারমাপাড়ার আগুন দেখে তারা জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে থাকে।
যাদের ঘর পুড়েছে তারা কত টাকা সাহায্য পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি চুপ করে থাকেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক কিশোর বলে, দুই হাজার ১০০ টাকা। সঙ্গে সঙ্গে দুজন নারী-পুরুষ ওকে ধমক দিয়ে চুপ করে থাকতে বলেন।
হেলেনা খাতুন বলেন, পাহাড়িদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় আমরা খুব দুঃখ পেয়েছি। ওদের কাছ থেকে আমরা দুধ, আম, কাঁঠাল, তেঁতুল খাই। হাঁস-মুরগির জন্য কুঁড়া আনি। জানতে চাওয়া হয় যে তাহলে ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়াননি কেন? ওদের কি কোনো সান্ত্বনার কথা বলেছেন?
থমকে গিয়ে তাঁরা একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন, ‘আমরা ভয়ে যাইনি।’
বললাম, যাদের কাছে অস্ত্র নাই, তাদের বুকে ভয় কেন? তাঁরা উত্তর দেন না।
ইমান আলী বলেন, ‘এটা পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। আগুন দেওয়ার সময় অনেকে এসেছিল, যারা এই পাড়ার লোক না। আমি জিয়ার শাসন আমলে এখানে আসি। আমাদের পরে আর কোনো সেটেলার আসেনি। এত দিন এখানে কোনো কিছু হতে দেখিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা এমন কাজ করতে পারে, তারা মানুষ না।’
সাদা দাড়ি, পাকা চুল ইমান আলীর বয়স ষাটের মতো হবে। লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরেছিলেন। তিনি ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন নামে একটি দল করেন।
এই বনের ভেতর ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কথা শুনে চমকে ওঠার কথা। এবং সবার মনের মধ্যে তেমন অস্বস্তি জমাট হয়ে থাকে। ফিরতে হয় ধানখেতের আল দিয়ে। উঁচু একটি জায়গা ছিল ভাঙা, সেটি পার হতে হয় বেশ ঝামেলা করে। আবার ফিরে আসা হয় পুড়ে যাওয়া গ্রামটিতে। মুখোমুখি হই জবা কিংবা থুইম্রাচিং মারমার। ওদের বিষণ্ন চেহারা বুকে বিঁধে। ওরা সেটেলার বাঙালি নারী হেলেনা, আছিয়াদের মতো উজ্জ্বল বা প্রাণবন্ত নয়। ওরা বিপন্ন এবং আতঙ্কিত। ওদের চোখের জল ফুরোয় না আতঙ্কের কারণে।
গঙ্গারামমুখের পোড়া ঘরে পেয়েছিলাম শিশুদের বাংলা পাঠ্যবই আর খোয়াবনামার দুটো পৃষ্ঠা। পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা অর্ধেক পুড়ে গেছে। আর খোয়াবনামার পৃষ্ঠাগুলো পোড়েনি, তবে ছেঁড়া। পাঠ্যবই শিশুদের শিক্ষালাভের মূল উপকরণ। অন্যটি মানুষের বিশ্বাসের উপকরণ। দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এমনই সম্প্রীতির জায়গা চাই, যে জায়গাটুকু মানবজীবনের কল্যাণে স্থির থাকবে। কারও চোখের জল, কারও আতঙ্ক সেই জায়গাকে বিপর্যস্ত করে রাখবে না। আমাদের এও বিশ্বাস যে সোনার বাংলার কথা আদিবাসীদের জীবনকে বাদ দিয়ে উচ্চারিত হবে না। পার্বত্যভূমির বিশাল জনপদকে বাদ রেখে উচ্চারিত হবে না।
সেলিনা হোসেন: কথাসাহিত্যিক।

No comments

Powered by Blogger.