অনলাইনে দরপত্র-স্বচ্ছতার পথে শুভ উদ্যোগ

দেশে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ই-পিজি ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে দরপত্র ক্রয় ও জমাদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। এর ফলে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর দরপত্র ক্রয় ও জমাদানকে কেন্দ্র করে বলপ্রয়োগ বা ভয় দেখিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার যে কুপ্রথা চলে আসছিল তার হয়তোবা অবসান ঘটবে।


এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া ও সংঘর্ষ বাধার খবরও আর আমাদের দেখতে হবে না। কিন্তু এর ফলে দরপত্র কারসাজির প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে কি? অথবা একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অন্যায্য প্রক্রিয়া বন্ধ হবে কি? সাধারণত এই প্রক্রিয়াটি চলে পর্দার অন্তরালে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকেন ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ এবং অবধারিতভাবেই দরপত্র আহ্বানকারী কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট একটি অংশ। কাজ ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার প্রক্রিয়াও এতে পুরোপুরি ঠেকবে বলে মনে হয় না। গত শুক্রবার সমকালের তৃতীয় পৃষ্ঠায় 'নড়াইলে সওজের ৪ কোটি টাকার গোপন টেন্ডার' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি দরপত্র নিয়ে কত ধরনের বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে তার সাক্ষ্য দেয়। দরপত্র প্রাক্কলন প্রক্রিয়া শুরুর সঙ্গেই সচরাচর এক ধরনের দুর্নীতি বাসা বাঁধে। প্রাক্কলিত প্রকল্পটিতে যাতে ব্যয় বেশি দেখানো হয় সে চেষ্টা চলে। এরপর দরপত্র আহ্বান, জমাদান ও মূল্যায়ন শেষে কে কাজ পাবে তা নির্ধারণের বিষয়। এই গোটা প্রক্রিয়াজুড়ে একশ্রেণীর লোক জড়িয়ে থাকে। সব জায়গাতেই টাকার খেলা কমবেশি ক্রিয়াশীল থাকে। এ কারণে দুর্নীতির মূলোৎপাটন সহজ নয়। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলে এর প্রকোপ অনায়াসেই কমিয়ে আনা যায়। আমরা অনলাইন দরপত্র আহ্বান ও জমাদান প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। তবে গোপন দরপত্র আহ্বান এবং ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির জোরে ব্যবসা বাগিয়ে নেওয়া বন্ধ না হলে দরপত্র নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
 

No comments

Powered by Blogger.