একটি অভিমত ও বাংলাদেশের বাস্তবতা by তারেক শামসুর রেহমান
বাংলাদেশের দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে এক বৈঠকে একটি অভিমত দিয়েছেন। অভিমতটি হচ্ছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া।
তাঁরা দুজন এই অভিমতটি দিলেন এমন একসময়, যখন ৫ মে হিলারি ক্লিনটন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেই বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে বড় দলগুলোর উচিত সংলাপে বসা। তাঁর এই মন্তব্যের পরদিনই ঢাকা ছাড়ার আগে তিনি যখন বাংলাদেশের ওই দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হন, তখন তাঁরা এই অভিমত পোষণ করেন। যেকোনো বিবেচনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য এবং এ ধরনের মন্তব্যকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেননা, অধ্যাপক ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদ দুজনই আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বিশ্বজুড়েই রয়েছে তাঁদের বিশাল নেটওয়ার্ক। বিশেষ করে দাতা দেশগুলোর নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে রয়েছে এ দুজনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। মার্কিন প্রশাসনে অধ্যাপক ইউনূসের 'বন্ধুর' সংখ্যা অনেক। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মন্তব্যটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। তাঁরা মনে করেন, সংঘাত এড়াতে এটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি এ ধরনের মন্তব্য বা অভিমত বিবেচনায় নেবে? যদি নেয়, তাহলে সেটা কিভাবে সম্ভব?
এই মুহূর্তে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে কিছু নেই। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীবলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত ঘোষিত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বর্তমান সরকার ও সংসদকে রেখেই এবং সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে। যদিও ওই সরকারকে আখ্যায়িত করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে। প্রধান বিরোধী দলের আপত্তি এখানেই। তারা চাচ্ছে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ নিয়ে দেশে হরতাল হয়েছে। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট এখন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলন করছে। এ ক্ষেত্রে সরকার যে এতটুকুও নমনীয় হয়েছে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা বারবার বলে আসছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, আর তার নেতৃত্ব দেবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। এই যখন পরিস্থিতি, তখন অধ্যাপক ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদও এক অভিমত দিলেন। যদিও এর আগে ড. কামাল হোসেন কিংবা ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও একই ধরনের অভিমত দিয়েছিলেন। সরকার তাতে আদৌ গুরুত্ব দেয়নি। এখন হিলারি ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ড. ইউনূস ও আবেদ যখন একই অভিমত দিলেন, তখন সরকার এটাকে গুরুত্ব দিলে ভালো করবে। ধারণা করছি, যুক্তরাষ্ট্রও চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। বর্তমান সরকার তাদের ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসেছে। গত ৪০ মাসে তারা কতটুকু তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছে, তার ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়াই মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নির্বাচন পরিচালনার ভার দিলে তাতে ক্ষতির কিছু নেই। বরং আমার বিশ্বাস, সরকারের জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি অত সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধানে সংশোধনী আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সংবিধান রেখে কোনো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব কে আনবে? সরকার? বিরোধী দল? নাকি সরকারের কোনো 'বন্ধু'? এটা তো ঠিক, বিরোধী দল কোনো সংশোধনী আনলে তা সংসদে পাস করানো যাবে না। তাদের সেই 'সংসদীয় ক্ষমতা' নেই। একমাত্র সরকার যদি 'সিদ্ধান্ত' নেয়, তাহলেই সংবিধানে সংশোধনী আনা সম্ভব। সরকার নীতিগতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে জোটভুক্ত কোনো 'দল'কে দিয়ে এ ধরনের একটি প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করতে পারে। ওয়ার্কার্স পার্টি কিংবা জাসদ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা সমর্থন করে। তারাও একটি প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার 'ওয়ান-ইলেভেন'-এর সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো হবে না। এর একটি নতুন কাঠামো দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন 'ফর্মুলা' নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এক. ড. ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদের যৌথ নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যাদের দায়িত্ব হবে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা। কোনো উপদেষ্টা থাকবেন না। সচিবরা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন পরিচালনা করবেন। এই সরকার নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। দুই. ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের নেতৃত্বে একটি সরকার। ব্যারিস্টার হক দুটি বড় দলেরই 'বন্ধু' এবং দুই দলীয় প্রধানের কাছেই গ্রহণযোগ্য। তিন. প্রধান বিচারপতি অথবা সংসদের বর্তমান স্পিকারকে প্রধান করে সরকার ও বিরোধী দলের পাঁচজন করে প্রতিনিধি নিয়ে (যাঁরা নির্বাচন করতে পারবেন না। স্পিকারও নির্বাচন করবেন না) তিন মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন করা। চার. একটি 'এলডার্স কাউন্সিল' গঠন, যাদের দায়িত্ব হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা। এই 'এলডার্স কাউন্সিল' যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। সদস্যসংখ্যা তিন থেকে চারজন হতে পারে। সাবেক তিন প্রধান বিচারপতি তিনজন গুণী ব্যক্তি অথবা তিনজন সাংবিধানিক পদমর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিকে নিয়েও এই 'এলডার্স কাউন্সিল' গঠিত হতে পারে। এ ধরনের যেকোনো 'ফর্মুলা' সংবিধানের কোনো অংশ হবে না। সংসদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও এটি করা সম্ভব। তবে বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে।
সরকার বারবার বলছে, তারা গত ৪০ মাসে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে, তাতে জনগণের স্বার্থ নিহিত রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো (?) থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত- প্রতিটি সিদ্ধান্তই জনস্বার্থে করা। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে তাদের ভয় থাকার কথা নয়। জনস্বার্থে হলে জনগণই তাদের আবার ক্ষমতায় বসাবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যদি না হয়, তাহলে রাজনৈতিক সংকট আরো বাড়বে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। সমুদ্রে আমাদের অধিকার রক্ষিত হওয়ায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি আইওসির আগ্রহ বেড়েছে। তারা বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু এ জন্য চাই পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। হিলারি ক্লিনটন ঢাকায় এসে এ কথাই বলে গেলেন। এমনকি গরিব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্ট থেকে যে সাহায্য পায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে, বাংলাদেশের সেই সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। হিলারি হরতালের নেতিবাচক দিকগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিরোধী দলের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে কোনো সমঝোতা না হলে ভবিষ্যতে এ দেশ আরো হরতাল প্রত্যক্ষ করবে।
অবশ্যই আমরা আমাদের রাজনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে আমরাই সিদ্ধান্ত নেব। কোনো বিদেশি রাষ্ট্র আমাদের 'দিকনির্দেশনা' দেবে- এটা কাম্য নয়। তাই অধ্যাপক ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদ যে অভিমত দিয়েছেন, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে, বিরোধী দলের সঙ্গে এখনই 'সংলাপ' শুরু করা উচিত।
লেখক : অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tsrahmanbd@yahoo.com
এই মুহূর্তে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে কিছু নেই। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীবলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত ঘোষিত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বর্তমান সরকার ও সংসদকে রেখেই এবং সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে। যদিও ওই সরকারকে আখ্যায়িত করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে। প্রধান বিরোধী দলের আপত্তি এখানেই। তারা চাচ্ছে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ নিয়ে দেশে হরতাল হয়েছে। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট এখন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলন করছে। এ ক্ষেত্রে সরকার যে এতটুকুও নমনীয় হয়েছে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা বারবার বলে আসছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, আর তার নেতৃত্ব দেবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। এই যখন পরিস্থিতি, তখন অধ্যাপক ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদও এক অভিমত দিলেন। যদিও এর আগে ড. কামাল হোসেন কিংবা ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও একই ধরনের অভিমত দিয়েছিলেন। সরকার তাতে আদৌ গুরুত্ব দেয়নি। এখন হিলারি ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ড. ইউনূস ও আবেদ যখন একই অভিমত দিলেন, তখন সরকার এটাকে গুরুত্ব দিলে ভালো করবে। ধারণা করছি, যুক্তরাষ্ট্রও চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। বর্তমান সরকার তাদের ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসেছে। গত ৪০ মাসে তারা কতটুকু তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছে, তার ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়াই মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নির্বাচন পরিচালনার ভার দিলে তাতে ক্ষতির কিছু নেই। বরং আমার বিশ্বাস, সরকারের জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি অত সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধানে সংশোধনী আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সংবিধান রেখে কোনো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব কে আনবে? সরকার? বিরোধী দল? নাকি সরকারের কোনো 'বন্ধু'? এটা তো ঠিক, বিরোধী দল কোনো সংশোধনী আনলে তা সংসদে পাস করানো যাবে না। তাদের সেই 'সংসদীয় ক্ষমতা' নেই। একমাত্র সরকার যদি 'সিদ্ধান্ত' নেয়, তাহলেই সংবিধানে সংশোধনী আনা সম্ভব। সরকার নীতিগতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে জোটভুক্ত কোনো 'দল'কে দিয়ে এ ধরনের একটি প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করতে পারে। ওয়ার্কার্স পার্টি কিংবা জাসদ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা সমর্থন করে। তারাও একটি প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার 'ওয়ান-ইলেভেন'-এর সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো হবে না। এর একটি নতুন কাঠামো দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন 'ফর্মুলা' নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এক. ড. ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদের যৌথ নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যাদের দায়িত্ব হবে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা। কোনো উপদেষ্টা থাকবেন না। সচিবরা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন পরিচালনা করবেন। এই সরকার নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। দুই. ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের নেতৃত্বে একটি সরকার। ব্যারিস্টার হক দুটি বড় দলেরই 'বন্ধু' এবং দুই দলীয় প্রধানের কাছেই গ্রহণযোগ্য। তিন. প্রধান বিচারপতি অথবা সংসদের বর্তমান স্পিকারকে প্রধান করে সরকার ও বিরোধী দলের পাঁচজন করে প্রতিনিধি নিয়ে (যাঁরা নির্বাচন করতে পারবেন না। স্পিকারও নির্বাচন করবেন না) তিন মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন করা। চার. একটি 'এলডার্স কাউন্সিল' গঠন, যাদের দায়িত্ব হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা। এই 'এলডার্স কাউন্সিল' যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। সদস্যসংখ্যা তিন থেকে চারজন হতে পারে। সাবেক তিন প্রধান বিচারপতি তিনজন গুণী ব্যক্তি অথবা তিনজন সাংবিধানিক পদমর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিকে নিয়েও এই 'এলডার্স কাউন্সিল' গঠিত হতে পারে। এ ধরনের যেকোনো 'ফর্মুলা' সংবিধানের কোনো অংশ হবে না। সংসদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও এটি করা সম্ভব। তবে বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে।
সরকার বারবার বলছে, তারা গত ৪০ মাসে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে, তাতে জনগণের স্বার্থ নিহিত রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো (?) থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত- প্রতিটি সিদ্ধান্তই জনস্বার্থে করা। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে তাদের ভয় থাকার কথা নয়। জনস্বার্থে হলে জনগণই তাদের আবার ক্ষমতায় বসাবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যদি না হয়, তাহলে রাজনৈতিক সংকট আরো বাড়বে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। সমুদ্রে আমাদের অধিকার রক্ষিত হওয়ায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি আইওসির আগ্রহ বেড়েছে। তারা বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু এ জন্য চাই পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। হিলারি ক্লিনটন ঢাকায় এসে এ কথাই বলে গেলেন। এমনকি গরিব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্ট থেকে যে সাহায্য পায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে, বাংলাদেশের সেই সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। হিলারি হরতালের নেতিবাচক দিকগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিরোধী দলের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে কোনো সমঝোতা না হলে ভবিষ্যতে এ দেশ আরো হরতাল প্রত্যক্ষ করবে।
অবশ্যই আমরা আমাদের রাজনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে আমরাই সিদ্ধান্ত নেব। কোনো বিদেশি রাষ্ট্র আমাদের 'দিকনির্দেশনা' দেবে- এটা কাম্য নয়। তাই অধ্যাপক ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদ যে অভিমত দিয়েছেন, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে, বিরোধী দলের সঙ্গে এখনই 'সংলাপ' শুরু করা উচিত।
লেখক : অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tsrahmanbd@yahoo.com
No comments