সড়ক দুর্ঘটনা-প্রতিকারের জন্য আর কত অপেক্ষা?
এক দিনেই ঘটে গেল মর্মান্তিক সব সড়ক দুর্ঘটনা। ঢাকা থেকে সিলেটগামী বিলাসবহুল গাড়ির সঙ্গে পাথরবোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হলেন আওয়ামী লীগ নেতা ইফতেখার হোসেন শামীমসহ ৮ জন। কর্মোদ্দেশ্যে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসা ফটো সাংবাদিক শহীদুজ্জামান টিটু নিহত হলেন বেপরোয়া বাসের ধাক্কায়।
বাসা থেকে ধানমণ্ডি অফিসে যাওয়ার পথে নিহত হলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার বিভাষ চন্দ্র সাহা। গাইবান্ধায় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হলেন একই পরিবারের ৪ জনসহ মোট ৫ জন। পৃথক ৪টি দুর্ঘটনায় একই দিনে ১৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা নাগরিকদের মনে শোক ও বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। চলতি পথে নিরাপত্তার দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন সাংবাদিকরা। নাগরিকদের মধ্যে জন্ম নেওয়া এ ক্ষোভ, শোক ও প্রতিবাদ খুবই স্বাভাবিক অভিব্যক্তি। প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে মর্মান্তিক সব দুর্ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে নাগরিকরা সরব হচ্ছেন, দাবি জানাচ্ছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কিছু তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দু'একদিন অতিক্রান্ত হলেই পরিস্থিতি যে লাউ সেই কদুতে ফিরে যাচ্ছে। দেশে একটি বিষয়ে সবাই একমত যে, সড়ক দুর্ঘটনার অন্য সব কারণের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে যানবাহনের চালকদের অশিক্ষা, বেপরোয়া মনোভাব ও অদক্ষতা। চালকদের অপরিণামদর্শী ড্রাইভিংয়ের কারণে একের পর এক দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও শেষ পর্যন্ত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত কোনো চালকই শাস্তি পান না বলে অভিযোগ আছে। শাস্তি পেলেও গুরুপাপে লঘুদণ্ডই তাদের জন্য নির্ধারিত। নাগরিকদের মধ্যে ক্রমে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, চালকদের এমন বেপরোয়া মনোভঙ্গি ও শাস্তি না পাওয়ার পেছনে কোনো প্রশ্রয় রয়েছে। ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের প্রশ্রয় পেয়েই চালকরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। কোনো সুস্থ সমাজে এমনটি ধারাবাহিকভাবে ঘটতে পারে না। সড়কে পথ চলতে গিয়ে যদি প্রাণহানির আশঙ্কা যাত্রীদের ঘিরে থাকে, তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী থাকতে পারে! এ কথা সত্য যে, সব দুর্ঘটনার জন্য চালকদের দায়ী করার যুক্তি নেই। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে দ্রুতগামী যানগুলোকেই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট যান ও পথচারীরা বরাবরই রাস্তায় অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। দুর্ঘটনার বেলায়ও তাদের দায় কম ধরা হয়। বড় যানবাহনগুলো অধিক পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করে। মালামাল বহন করলেও তার পরিমাণ বেশি থাকে। এমন অবস্থায় তার দায়িত্ব অনেক বেশি। সে দায়িত্ব যেমন নিজের প্রতি, তেমনি অন্যদের প্রতিও থাকতে হয়। এমন যানবাহনের চালকরা যখন আরোহী, পথচারী, পথের অন্য যানগুলোর তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে থাকে, তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। রাজধানী হোক, কি মহাসড়ক_ সর্বত্র ট্রাফিক ও টহল পুলিশের কাজ দ্রুতগামী যানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। বিশেষ করে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতে এমন তদারকির ব্যবস্থা থাকতেই হবে। নইলে একের পর এক দুর্ঘটনা এড়ানো কঠিন। আমরা মনে করি, চালকরা ক্ষমতাধরদের যে আশীর্বাদ ও প্রশ্রয় পেয়ে আসছেন, তা অচিরে বন্ধ হওয়া উচিত। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। শাস্তির কিছু উদাহরণ তৈরি করতে না পারলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো যাবে না। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদের পাশাপাশি তিনি বেপরোয়া চালকদের শাস্তির কথাও বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত হোক_ সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
No comments