পবিত্র কোরআনের আলো-পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণের বিনিময়েও কুফরির অপরাধ থেকে মুক্তি নেই

৮৯। ইল্লাল্লাযীনা তাবূ মিম বা'দি যালিকা ওয়া আস্লাহূ; ফাইন্নাল্লাহা গাফূরুর রাহীম। ৯০। ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ বা'দা ঈমানিহিম ছুম্মায্দাদূ কুফ্রাল লান তুক্ব্বালা তাওবাতুহুম; ওয়া উলায়িকা হুমুদ্ব্ দ্বাল্লূন। ৯১। ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ ওয়া মাতূ ওয়া হুম কুফ্ফারুন ফালাইঁ ইউক্ব্বালা মিন আহাদিহিম মিল্উল আর্দ্বি যাহাবাওঁ ওয়া লাভিফ্তাদা বিহী; উলায়িকা লাহুম 'আযাবুন আলীমুঁ ওয়ামা লাহুম মিন নাসিরীন।


[সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮৯-৯১]
অনুবাদ
৮৯। তবে তাদের কথা আলাদা, যারা এরপর তাওবা করেছে এবং নিজেদের সংশোধন করে নিয়েছে। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৯০। কিন্তু যারা একবার ইমান আনার পর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছে এবং তাদের অবাধ্যতা বেড়েই চলেছে, তাদের তাওবা কক্ষনো কবুল হবে না। এসব লোক পথভ্রষ্ট।
৯১। যারা আল্লাহ প্রদর্শিত সত্য পথকে অস্বীকার করেছে এবং কুফরি অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেছে, তারা যদি নিজেদের রক্ষার জন্য পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণ মুক্তিপণ হিসেবে দান করে, তবু তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। সর্বোপরি তারাই হলো সেসব ব্যক্তি, যাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন শান্তি রয়েছে। আর সেদিন তাদের কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না।
ব্যাখ্যা
এসব আয়াতও আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এখানেও মুরতাদদের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। ৮৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, কোনো মুরতাদ ব্যক্তি যদি তাওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। মুরতাদ ব্যক্তির তাওবা করা মানে পুনরায় ইসলামে ফিরে আসা, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যে ফিরে আসা। নিজেকে সংশোধন করে নেওয়ার মানেও এটাই। ইসলামে ফিরে না এলে, অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে না এসে বিচ্ছিন্ন কোনো পাপকর্ম থেকে তাওবা করলে সেই তাওবা কবুল হওয়ার নয়। আল্লাহর ওপর ইমান এবং রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ তাওবার জন্য পূর্বশর্ত। ৯০ নম্বর আয়াতে পুনরায় মুরতাদের সংজ্ঞা দিয়ে তাদের পরিণতির কথা বলা হয়েছে_তবে এখানে কওম বা জাতি হিসেবে নয়, ব্যক্তি হিসেবে। যারা একবার ইমান আনার পর আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.)-এর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছে এবং তাদের অবাধ্যতা বেড়েই চলেছে, তাদের তাওবা কক্ষনো কবুল হবে না। এসব লোকই পথভ্রষ্ট। মুরতাদরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট বা 'দ্বোয়ালি্লন'। তবে সব পথভ্রষ্টই মুরতাদ নয়। অর্থাৎ, যারা কখনো ইসলাম গ্রহণ করেনি বা সর্বদাই সত্য ও ন্যয়কে অস্বীকার করে আসছে, তারা পথভ্রষ্ট। আবার, একবার ইসলামের অনুসারী হওয়ার পর যে পুনরায় কুফরিতে ফিরে যায়, সেও পথভ্রষ্ট। তাদের তাওবা কক্ষনো কবুল হবে না, যতক্ষণ না তারা (আন্তরিকভাবে) ইসলাম গ্রহণ করে। ৯১ নম্বর আয়াতে মুরতাদসহ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.)-এর অবাধ্য অবস্থায় যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের দুর্ভাগ্যের কথা বলা হয়েছে। তাদের দুর্ভাগ্য হলো, তারা আর কোনোদিন সত্যের পথে ফিরে আসতে পারবে না। মৃত্যু তাদের ফিরে আসার পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দিয়েছে। ৯১ নম্বর আয়াতে তাদের এই চির নির্ধারিত দুর্ভাগ্যকে একটি রূপক উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা যদি নিজেদের বাঁচার জন্য পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণ মুক্তিপণ হিসেবে দান করে, তবু তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। কুফরির জন্য কঠিন শাস্তি তাদের পেতেই হবে। 'পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণ মুক্তিপণ হিসেবে দান করতে চাইলেও তা গ্রহণ করা হবে না' বলে যে উক্তি করা হয়েছে, তা অপরাধের বিশালত্ব বোঝানোর জন্য বলা হয়েছে। মৃত্যুর পর স্বর্ণ-রৌপ্য, মণি-মানিক্য বা বিষয়-সম্পত্তি কোনো কাজে আসে না। মৃত ব্যক্তির হাতে তা থাকেও না। শাব্দিক অর্থে সেগুলো অবশ্যই অবাস্তব ব্যাপার। কিন্তু কুফরি অবস্থায় যে মৃত্যুবরণ করল, সেই ব্যক্তি কত বড় অপরাধ নিয়ে মৃত্যুবরণ করল, তা বোঝানোর জন্য এই উদাহরণ বেশ সহজ এবং বোধগম্য।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.