চারদিক-হূদয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর by তাসবীর শাতিল
আজ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আজ থেকে ঠিক ১৪ বছর আগে এই দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাপে উত্তপ্ত ছিল সারা দেশ। সর্বত্র চলছিল অসহযোগ কর্মসূচি। ৫ নম্বর সেগুনবাগিচার একটি দোতলা ভবনের সামনে স্থাপিত মঞ্চে নিশ্চল বসে আছেন কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সন্তানেরা।
এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই মঞ্চ থেকে ভেসে আসে ঘোষণা। জন্ম হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। বিভিন্ন পর্বে বিভক্ত বাঙালি জাতির হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাস—বিশেষ করে, একাত্তরের নয় মাসব্যাপী সংঘটিত সশস্ত্র যুদ্ধ ও এর বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্য থেকেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্ম।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের ত্যাগ ও সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত একটি দর্শনীয় স্থান এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। প্রতিদিন অগণিত দর্শনার্থীর আগমনে সরব হয় এ স্মৃতি-জাদুঘর। দর্শনার্থীদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ অংশ নিয়েছেন। আবার অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না দেখলেও হূদয়ে ধারণ করতে চান সেই মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোকে। অনুধাবন করতে চান মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত মর্মার্থ। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারজুকা তারতিল বলে, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য বই পড়ার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের করতে জাদুঘরে এসেছি। বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ধারণা দিতে পারলেই ত্রুটিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।’ সপ্তম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী ইশরাক নাভিদ হাসান। নিজে মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। কিন্তু মায়ের মুখে শুনেছে তার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নানুর বীরত্বের গল্প। সেই সময়কে নিজের মধ্যে উপলব্ধি করতেই জাদুঘরে আসা তার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে জাদুঘরকে ছয়টি গ্যালারিতে ভাগ করা হয়েছে। ফলে দর্শনার্থীরা খুব সহজেই মুক্তিযুদ্ধের সুদীর্ঘ ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। অনুধাবনও করতে পারে এর গুরুত্ব। খুদে দর্শনার্থী নাফিয়া ইসলাম বলে, ‘ছয়টি গ্যালারি থেকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানলাম, দেখলাম বিস্ময়কর কিছু জিনিসপত্র।’
আমরা একসঙ্গে ছিলাম বলেই মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করতে পেরেছিলাম। এভাবে আমরা বাঙালিরা মিলেমিশে থাকব এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ধরে রাখার চেষ্টা করব। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিয়াসা ইদরাকের কাছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রটি খুবই আকর্ষণীয় লেগেছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ও বেদনাবিধুর ইতিহাস তার কোমল হূদয়কে করে তুলেছিল আবেগাপ্লুত।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজস্ব জায়গা না থাকায় অনেক দুর্লভ জিনিসপত্র প্রদর্শন করা সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে আগারগাঁওয়ে ২.৫ বিঘা জমি আট সদস্যের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করে।
সেখানে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে থাকবে সব ধরনের আধুনিকতার ছোঁয়া। একটি উন্মুক্ত নকশা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জাদুঘরের নকশা প্রণয়ন করা হয়। স্থপতি দম্পতি ফারজানা ও তানজিমের নকশা শ্রেষ্ঠ হওয়ায় এটাই নির্বাচিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নকশা হিসেবে। এ বছরের মাঝমাঝিতে শুরু করে তিন বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। ‘নাগরিকদের জাদুঘর’ এ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নির্মাণের জন্য তহবিল গঠনে দেশে বা বিদেশ অবস্থিত সব নাগরিককে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
‘আমার এটা মনে করে খুব ভালো লাগছে যে আমরা যারা যুদ্ধ দেখতে পারিনি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ দিয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ও সম্যক ধারণা পাচ্ছি।’ বলছিল আষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার টিনা। ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর একটি অসাধারণ ও অপূর্ব সংগ্রহ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি এখানে নানাভাবে সংকলিত রয়েছে। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ের ব্রিটিশ শাসন, ভাষা আন্দোলন ও প্রাগৈতিহাসিক কালের কিছু সংগ্রহও মনে দাগ কেটে যায়।’ বলছিলেন এক দর্শনার্থী।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের পুরো জাতির যেমন গৌরবের ও অহংকারের বিষয়, তেমনই বেদনারও কম নয়। আমরা হারিয়েছি আমাদের ৩০ লাখ বাঙালি সন্তানকে। এই রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধকে জাতির সামনে তুলে ধরার মহান প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। জাতিকে দেখাচ্ছে গৌরবময় সশস্ত্র সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস। তাই তো আজ আমরা দৃপ্তকণ্ঠে গেয়ে উঠি—
‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার
সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার।’
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের ত্যাগ ও সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত একটি দর্শনীয় স্থান এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। প্রতিদিন অগণিত দর্শনার্থীর আগমনে সরব হয় এ স্মৃতি-জাদুঘর। দর্শনার্থীদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ অংশ নিয়েছেন। আবার অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না দেখলেও হূদয়ে ধারণ করতে চান সেই মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোকে। অনুধাবন করতে চান মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত মর্মার্থ। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারজুকা তারতিল বলে, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য বই পড়ার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের করতে জাদুঘরে এসেছি। বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ধারণা দিতে পারলেই ত্রুটিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।’ সপ্তম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী ইশরাক নাভিদ হাসান। নিজে মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। কিন্তু মায়ের মুখে শুনেছে তার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নানুর বীরত্বের গল্প। সেই সময়কে নিজের মধ্যে উপলব্ধি করতেই জাদুঘরে আসা তার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে জাদুঘরকে ছয়টি গ্যালারিতে ভাগ করা হয়েছে। ফলে দর্শনার্থীরা খুব সহজেই মুক্তিযুদ্ধের সুদীর্ঘ ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। অনুধাবনও করতে পারে এর গুরুত্ব। খুদে দর্শনার্থী নাফিয়া ইসলাম বলে, ‘ছয়টি গ্যালারি থেকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানলাম, দেখলাম বিস্ময়কর কিছু জিনিসপত্র।’
আমরা একসঙ্গে ছিলাম বলেই মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করতে পেরেছিলাম। এভাবে আমরা বাঙালিরা মিলেমিশে থাকব এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ধরে রাখার চেষ্টা করব। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিয়াসা ইদরাকের কাছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রটি খুবই আকর্ষণীয় লেগেছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ও বেদনাবিধুর ইতিহাস তার কোমল হূদয়কে করে তুলেছিল আবেগাপ্লুত।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজস্ব জায়গা না থাকায় অনেক দুর্লভ জিনিসপত্র প্রদর্শন করা সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে আগারগাঁওয়ে ২.৫ বিঘা জমি আট সদস্যের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করে।
সেখানে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে থাকবে সব ধরনের আধুনিকতার ছোঁয়া। একটি উন্মুক্ত নকশা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জাদুঘরের নকশা প্রণয়ন করা হয়। স্থপতি দম্পতি ফারজানা ও তানজিমের নকশা শ্রেষ্ঠ হওয়ায় এটাই নির্বাচিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নকশা হিসেবে। এ বছরের মাঝমাঝিতে শুরু করে তিন বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। ‘নাগরিকদের জাদুঘর’ এ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নির্মাণের জন্য তহবিল গঠনে দেশে বা বিদেশ অবস্থিত সব নাগরিককে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
‘আমার এটা মনে করে খুব ভালো লাগছে যে আমরা যারা যুদ্ধ দেখতে পারিনি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ দিয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ও সম্যক ধারণা পাচ্ছি।’ বলছিল আষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার টিনা। ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর একটি অসাধারণ ও অপূর্ব সংগ্রহ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি এখানে নানাভাবে সংকলিত রয়েছে। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ের ব্রিটিশ শাসন, ভাষা আন্দোলন ও প্রাগৈতিহাসিক কালের কিছু সংগ্রহও মনে দাগ কেটে যায়।’ বলছিলেন এক দর্শনার্থী।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের পুরো জাতির যেমন গৌরবের ও অহংকারের বিষয়, তেমনই বেদনারও কম নয়। আমরা হারিয়েছি আমাদের ৩০ লাখ বাঙালি সন্তানকে। এই রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধকে জাতির সামনে তুলে ধরার মহান প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। জাতিকে দেখাচ্ছে গৌরবময় সশস্ত্র সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস। তাই তো আজ আমরা দৃপ্তকণ্ঠে গেয়ে উঠি—
‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার
সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার।’
No comments