কচ্ছপগতি by শেখ রোকন
গার্ডিয়ান পত্রিকার এনভায়রনমেন্ট সেকশনে খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশ সুরক্ষার তাত্তি্বক বিরোধ নিয়ে চমৎকার একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ হয়েছে। লেখক দেখিয়েছেন, বড় বড় খামার ব্যবস্থা পরিবেশবান্ধব না হলেও কৃষি উৎপাদনের ছোট আয়োজনগুলোর মাধ্যমে দু'কূলই রক্ষা সম্ভব_ খাদ্যও আসবে, পরিবেশও বাঁচবে।
ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ সময়ে কায়িক শ্রমে চালিত ক্ষুদ্র উৎপাদন ব্যবস্থাই ভরসা। খণ্ড খণ্ড জমি ও ক্ষুদ্র চাষিতে ভরা বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে ভালো খবর আর কী হতে পারে? আরও ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে, ওই লেখার সঙ্গে গরু দিয়ে হাল চাষের যে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে, তার চিত্রগ্রাহকও বাংলাদেশি_ ফারজানা খান গোধূলী। কিন্তু পরক্ষণেই মন খারাপ করে দিতে পারে ওই সেকশনের আরেকটি খবর। সেখানে দেখা যাচ্ছে, থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ও ঘড়িয়ালের একটি বড় চালান আটক হয়েছে। মূল উৎস যেখানেই হোক, চালানটি ব্যাংকক গেছে ঢাকা থেকে। আর আটক লাগেজের লাপাত্তা মালিক একজন বাংলাদেশি যাত্রী।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এভাবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হওয়া কেবল বেদনার নয়, উদ্বেগেরও। ঢাকার বিমানবন্দর দিয়ে পাচার করা জীবন্ত কচ্ছপের আরেকটি বড় চালান থাইল্যান্ডে ধরা পড়ার ঘটনায় আরেকবার প্রমাণ হলো, হযরত শাহজালাল আন্তর্জান্তিক বিমানবন্দর এখন প্রাণী পাচারের নিরাপদ রুট। সাধারণ যাত্রীদের হেনস্তা করতে পটু বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের অগোচরে এগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে_ এ যুক্তি দিলে ঘোড়াও হাসবে। তবে চাইলে যে তারাও আটক করতে পারেন, সে নজিরও কিন্তু রয়েছে। বৃহস্পতিবারই যখন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ছোট ছোট কয়েকটি সুটকেসে পাঁচ প্রজাতির 'শত শত' কচ্ছপ ও সাতটি ঘড়িয়াল নিয়ে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তোলপাড়, তখন ঢাকায়ও মালয়েশিয়াগামী এক ভারতীয় যাত্রীর কাছ থেকে ৪৮০টি বিরল প্রজাতির 'স্টারড' কচ্ছপ আটক হয়েছে। রুটের অন্য প্রান্তে চালান আটকের খবর শুনে এমন 'শো অফ' কি-না কে জানে!
আমাদের মনে আছে, গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষ দিন থাইল্যান্ডের ওই বিমানবন্দরেই বিরল প্রজাতির 'স্টারড' বা তারকা কচ্ছপের আরেকটি বড় চালান আটক হয়েছিল। তার আগে সেগুলো ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্বিঘ্নে পার হয়েছিল। তারও আগে ওই বছরের মে মাসে আটক হয়েছিল অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি চালান। তবে ঢাকা ছাড়ার আগেই। এসব নজির সামনে রেখে আশঙ্কা করা অসঙ্গত নয় যে এমন আরও অবৈধ পরিবহন হামেশাই হয়ে থাকে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে। কালেভদ্রে ধরা পড়ে দু'একটি। বাংলাদেশ যে প্রাণী পাচারের ট্রানজিট রুট, তার আরও প্রমাণ আছে। ২০০৬ সালে কমবেশি এক হাজার ৬০০ তারকা কচ্ছপের একটি চালান ধরা পড়েছিল সীমান্ত এলাকায়, রাজশাহী স্থলবন্দরে। কচ্ছপ পাচারের দায়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে আটক ব্যক্তি ছিলেন পাকিস্তানি। মে মাসে ঢাকায় আটক পাচারকারী ভারতীয়। আবার আটক তারকা কচ্ছপ মূলত দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলংকার প্রাণী। তার মানে, পাচারকারীরা ঢাকার বিমানবন্দরকে সবচেয়ে নিরাপদ ধরে নিয়েছে।
কথা হচ্ছে, নিছক ট্রানজিট রুট বলে গা বাঁচিয়ে বাংলাদেশ কি নিজের জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখতে পারবে? অন্যের কাজে ব্যবহৃত হতে গিয়ে যে নিজেরও সর্বনাশ হয়, পাকিস্তান তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আফগান যুদ্ধে তাল দিতে গিয়ে দেশটির দশা এখন ত্রাহি মধুসূদন। কচ্ছপ পাচারের এবারের অঘটনে বাংলাদেশেরও বিপদ স্পষ্ট হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ব্যাংককে আটক পাঁচটি প্রজাতির মধ্যে অন্তত তিনটি বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত। এ বিপদ কি আরও বাড়তে দেব? অতীতে যতবারই এ ধরনের চালান আটক হয়েছে, কচ্ছপ রক্ষা এবং বিমানবন্দরের বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হয়েছে; কাজ হয়নি। আমরা দেখছি, ধীরগতির প্রতীকে পরিণত হওয়া কচ্ছপ দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে পেঁৗছে যাচ্ছে; দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিপন্ন প্রাণীটি রক্ষার উদ্যোগে ভর করেছে কচ্ছপগতি।
skrokon@gmail.com
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এভাবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হওয়া কেবল বেদনার নয়, উদ্বেগেরও। ঢাকার বিমানবন্দর দিয়ে পাচার করা জীবন্ত কচ্ছপের আরেকটি বড় চালান থাইল্যান্ডে ধরা পড়ার ঘটনায় আরেকবার প্রমাণ হলো, হযরত শাহজালাল আন্তর্জান্তিক বিমানবন্দর এখন প্রাণী পাচারের নিরাপদ রুট। সাধারণ যাত্রীদের হেনস্তা করতে পটু বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের অগোচরে এগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে_ এ যুক্তি দিলে ঘোড়াও হাসবে। তবে চাইলে যে তারাও আটক করতে পারেন, সে নজিরও কিন্তু রয়েছে। বৃহস্পতিবারই যখন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ছোট ছোট কয়েকটি সুটকেসে পাঁচ প্রজাতির 'শত শত' কচ্ছপ ও সাতটি ঘড়িয়াল নিয়ে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তোলপাড়, তখন ঢাকায়ও মালয়েশিয়াগামী এক ভারতীয় যাত্রীর কাছ থেকে ৪৮০টি বিরল প্রজাতির 'স্টারড' কচ্ছপ আটক হয়েছে। রুটের অন্য প্রান্তে চালান আটকের খবর শুনে এমন 'শো অফ' কি-না কে জানে!
আমাদের মনে আছে, গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষ দিন থাইল্যান্ডের ওই বিমানবন্দরেই বিরল প্রজাতির 'স্টারড' বা তারকা কচ্ছপের আরেকটি বড় চালান আটক হয়েছিল। তার আগে সেগুলো ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্বিঘ্নে পার হয়েছিল। তারও আগে ওই বছরের মে মাসে আটক হয়েছিল অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি চালান। তবে ঢাকা ছাড়ার আগেই। এসব নজির সামনে রেখে আশঙ্কা করা অসঙ্গত নয় যে এমন আরও অবৈধ পরিবহন হামেশাই হয়ে থাকে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে। কালেভদ্রে ধরা পড়ে দু'একটি। বাংলাদেশ যে প্রাণী পাচারের ট্রানজিট রুট, তার আরও প্রমাণ আছে। ২০০৬ সালে কমবেশি এক হাজার ৬০০ তারকা কচ্ছপের একটি চালান ধরা পড়েছিল সীমান্ত এলাকায়, রাজশাহী স্থলবন্দরে। কচ্ছপ পাচারের দায়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে আটক ব্যক্তি ছিলেন পাকিস্তানি। মে মাসে ঢাকায় আটক পাচারকারী ভারতীয়। আবার আটক তারকা কচ্ছপ মূলত দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলংকার প্রাণী। তার মানে, পাচারকারীরা ঢাকার বিমানবন্দরকে সবচেয়ে নিরাপদ ধরে নিয়েছে।
কথা হচ্ছে, নিছক ট্রানজিট রুট বলে গা বাঁচিয়ে বাংলাদেশ কি নিজের জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখতে পারবে? অন্যের কাজে ব্যবহৃত হতে গিয়ে যে নিজেরও সর্বনাশ হয়, পাকিস্তান তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আফগান যুদ্ধে তাল দিতে গিয়ে দেশটির দশা এখন ত্রাহি মধুসূদন। কচ্ছপ পাচারের এবারের অঘটনে বাংলাদেশেরও বিপদ স্পষ্ট হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ব্যাংককে আটক পাঁচটি প্রজাতির মধ্যে অন্তত তিনটি বাংলাদেশে বিপন্ন বলে বিবেচিত। এ বিপদ কি আরও বাড়তে দেব? অতীতে যতবারই এ ধরনের চালান আটক হয়েছে, কচ্ছপ রক্ষা এবং বিমানবন্দরের বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হয়েছে; কাজ হয়নি। আমরা দেখছি, ধীরগতির প্রতীকে পরিণত হওয়া কচ্ছপ দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে পেঁৗছে যাচ্ছে; দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিপন্ন প্রাণীটি রক্ষার উদ্যোগে ভর করেছে কচ্ছপগতি।
skrokon@gmail.com
No comments