স্মরণ-অস্তিত্ব চেতনার কবি আজীজুল হক by ফখরে আলম

মেঘমুখী ফুল তুমি সূর্যমুখী হও, সূর্যই আমাদের প্রথম নায়ক'। অস্তিত্ব চেতনার এমন সাহসী উচ্চারণের কবি আজীজুল হকের ২৭ আগস্ট ছিল দশম মৃত্যুবার্ষিকী। পঞ্চাশের দশকের অন্যতম কবি আজীজুল হক ১৯৩০ সালের ২ মার্চ মাগুরায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫১ সালে স্নাতক,


১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৩০ বছর অধ্যাপনার পর ১৯৮৮ সালে তিনি অবসর নেন। ২০০১ সালের ২৭ আগস্ট তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আজীজুল হকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝিনুক মুহূর্ত সূর্যকে' প্রকাশিত হয় ঢাকার সমকাল প্রকাশনী থেকে ১৯৬৮ সালে। ১৯৭৬ সালে 'বিনষ্টের চিৎকার' এবং ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয় কবির একমাত্র প্রবন্ধগ্রন্থ 'অস্তিত্ব চেতনা ও আমাদের কবিতা'। ১৯৮৯ সালে 'ঘুম ও সোনালী ঈগল' কাব্যগ্রন্থ, ১৯৯৪ সালে বিদ্যা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় কবিতাসমগ্র। ১৯৮৭ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালে সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে বাংলা একাডেমী পুুরস্কার ছাড়াও তিনি আরো কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেছেন।
পঞ্চাশের দশকের অন্যতম কবি আজীজুল হক একদিকে শিল্পনৈপুণ্য, অন্যদিকে সমকালীন জীবন, সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার দক্ষ রূপকার হিসেবে বাংলা কবিতায় ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন। তিনি ইতিহাসগত ধারণাকে বর্তমান সমাজ ও প্রতিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি উচ্চারণ করেছেন, জীবন কৌতূহল আর কবিতা কৌতূহল থেকে মুক্তির জন্যই কবিতা লিখি। প্রতীক চিত্রকল্প শৈল্পিক বাকরীতি এবং স্বদেশ সমাজসংলগ্ন পরোক্ষ উচ্চারণ কবি আজীজুল হকের কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সাহিত্য-সংস্কৃতিতে যে নতুন স্রোতের সৃষ্টি করে, যে জীবনচেতনা শিল্পীচৈতন্যকে অনিবার্য সামাজিক-রাজনৈতিক মীমাংসার কেন্দ্র স্থাপন করে, আজীজুল হকের কবিতার পৃথিবীতে তার প্রভাব স্পষ্ট হয়ে আছে। নিভৃতচারী এই কবি সারা জীবন মফস্বল শহরে বসবাস করেও মনে করতেন, বাংলা কবিতা আন্তর্জাতিক মান স্পর্শ করেছে। এই শতাব্দীর মানুষ বাংলা কবিতাকে উচ্চতর নয়, উচ্চতম মর্যাদা দিতে বাধ্য হবে। বাংলা কবিতা নিয়ে এমন বড় গলায় কথা বলার জন্য অনেকের মতো আমিও তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
ফখরে আলম

 

No comments

Powered by Blogger.