আরেকটি দৃষ্টান্ত-পুলিশই পারে পুলিশের ভাবমূর্তি ফেরাতে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র কাদেরকে অযথা খিলগাঁও থানায় ধরে নিয়ে পুলিশ শুধু অমানবিক নির্যাতনই করেনি, তাঁর বিরুদ্ধে গাড়ি ছিনতাই ও ডাকাতির মনগড়া অভিযোগে তিনটি মামলাও করেছিল। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিবেকবান প্রতিটি মানুষই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।


অনেকে এর প্রতিবাদও করেছিলেন। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের আদালতে তলব করেন। শুনানিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দেওয়া বিবরণ বিশ্বাসযোগ্য মনে না হওয়ায় আদালত পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজি) নির্দেশ দেন নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের সাসপেন্ড করার। সর্বশেষ একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, ঘটনাটির বিভাগীয় তদন্তেও দেখা গেছে, কাদের নিরপরাধ। ওসি যে তাঁকে অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন এবং তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। চার সদস্যের তদন্তদলেরই একজনের বরাত দিয়ে এ খবর জানানো হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি ঈদের পর জমা দেওয়া হবে। যদি খবরে প্রকাশিত তথ্য সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে এটা হবে আরেকটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
সমস্যা হচ্ছে, কাদেরও একজন নন, আর ওসি হেলালও একজন নয়। সারা দেশে এ রকম অসংখ্য কাদের রয়েছে, যারা ওসি হেলালদের অন্যায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। থানায় ধরে নিয়ে অর্থ আদায় করা তো পুলিশের অতি পুরনো এক বাণিজ্য। আর দাবি করা অর্থ দিতে না পারলেই চলে নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া। গণমাধ্যম, সুধীজন এবং আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদেরের একটি সুরাহা হচ্ছে। কিন্তু সারা দেশে যে এ রকম অসংখ্য কাদের প্রতিনিয়তই অন্যায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তাদের সুরাহা কে করবে? পুলিশ বিভাগকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে। কয়েকজন ওসি হেলালের জন্য পুরো বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়াটা কারোই কাম্য নয়। আর পুলিশের মধ্যে একটি শ্রেণীর এই যে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও অর্থ আদায় করার প্রবণতা, অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশ কিংবা আরো কিছু অপরাধপ্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, সেগুলো কেন ও কিভাবে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সেই কারণগুলো অবিলম্বে দূর করতে হবে। তা না হলে পুলিশ বাহিনী থেকে এ ধরনের অপরাধ দূর করা যাবে না। সেই কারণগুলোর অন্যতম হচ্ছে পুলিশ বাহিনীর রাজনৈতিকীকরণ ও দলীয়করণ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি বা শায়েস্তা করার জন্য পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে, ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে গল্প বানিয়ে আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে, দলীয় ক্যাডারদের নির্বিচারে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এগুলো আমাদের পুলিশ বাহিনীর নৈতিক খুঁটি প্রায় ভেঙে দিয়েছে।
কাজেই পুলিশ বাহিনীকে ঠিক করতে হলে কিংবা তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে এই কারণগুলো অবশ্যই দূর করতে হবে। আর সে জন্য সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সততা, যা বর্তমান সরকারের আছে বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.