চারদিক-আঠারো তাঁর জীবনের ধ্রুবতারা
বয়স তখন তাঁর ১৮। জেলখানায় বসে তিনি তাঁরই আটকাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম রিট আবেদনটি নিজের হাতেই মুসাবিদা করেছিলেন। ঢাকার জেল সুপারের মাধ্যমে তা পাঠিয়েছিলেন ঢাকা হাইকোর্টে। সেদিনের সেই তরুণ হয়তো ভাবতেও পারেননি, সেই স্বেচ্ছা হাতেখড়ি তাঁর অবশিষ্ট জীবনকে বিস্তৃত করবে। আঠারো হবে তাঁর জীবনের ধ্রুবতারা।
তিনি আমাদের বিচারাঙ্গনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। আইন পেশায় আজ তাঁর ৫০ বছর পূর্ণতা পেল।
১৯৫৪-৫৫ সালে প্রায় দুই বছর বিনা বিচারে তিনি বন্দী ছিলেন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনী রাজবন্দীদের শ্রেণীবিন্যাসে তাঁকে কমিউনিস্টদের ‘ফেলো ট্রাভেলার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তাঁর কলেজজীবনে যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন টি এইচ খান। তিনি অবশ্য জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ওই মামলার শুনানি করতে রাজি হয়েছিলেন।
ইতিহাস তাঁর জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে নানা মাত্রায়। ভারত শাসন আইনে ২২৩(ক) নামে একটি নতুন ধারা যোগ করা হয়েছিল। এতে হাইকোর্টে রিট মামলা করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। সিআরপিসি বাদ দিয়ে ওই সংবিধানের দিকেই নজর পড়েছিল তরুণ বন্দী আমীর-উল ইসলামের। ওই একই ধারায় পাকিস্তান গণপরিষদের স্পিকার মৌলভি তমিজ উদ্দিন খান তাঁর বিখ্যাত রিট মামলাটি দায়ের করেছিলেন সিন্ধু হাইকোর্টে। ওই আইনটি গণপরিষদের প্রেসিডেন্ট সই করলেও গভর্নর জেনারেল তাতে সই করেননি। গণপরিষদ ভাঙার বিরুদ্ধে দায়ের করা রিটে হাইকোর্টে জিতেও ওই অজুহাতে তমিজ উদ্দিন হেরে গিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে।
সেটি ছিল পাকিস্তানের প্রথম সাংবিধানিক দুর্ঘটনা। ওই মামলায় তমিজ উদ্দিনের পক্ষে বিনে পয়সায় লড়েছিলেন জর্জ অরওয়েল বর্ণিত ‘অবিসংবাদিত মস্কোপন্থী’ ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা ও খ্যাতিমান সাংবিধানিক আইনবিদ ডেনিস নোয়েল প্রিট। পিন্ডিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হেরে প্রিট বলেছিলেন, পাকিস্তানের গণতন্ত্রের যবনিকাপাত ঘটল। ওই রায়ের কারণে অচল হয়ে গিয়েছিল ঢাকায় আমীর-উলের জীবনের প্রথম রিট দরখাস্ত।
কাকতালীয়ভাবে আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৬১ সালে দুই চোখে স্বপ্নে মাখা তরুণ আমীর-উল ইসলামের পেশাগত জীবনের সূচনা ঘটেছিল ওই প্রিটের চেম্বারে, তাঁর জুনিয়র হিসেবে।
শৈশবে মা বেগম আনোয়ারাকে হারিয়েছিলেন। মাতৃহারা ছেলেকে নিয়ে কলকাতা পোর্ট কমিশনের কর্মকর্তা বাবা ওয়াসিল হোসেনের উদ্বেগের অন্ত ছিল না। রাজনীতি না করার মুচলেকা দিলে তাঁর মুক্তি মিলবে। বাবার কাছ থেকে এমন বার্তা পাওয়ার পরও অটল থাকেন তিনি। বাবাও তাঁকে সে জন্য চাপ দেননি।
১৯৫৬-এর অক্টোবরে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। এরপর আমরা তাঁকে সাতান্নতে মস্কোর বিশ্ব যুব উৎসবে, বার্ট্রান্ড রাসেল ও ঘানার প্রধানমন্ত্রী নক্রুমার ভাষণের মুগ্ধ শ্রোতা হিসেবে, ব্রিটিশ সাংসদ জন স্টোন হাউস, পিটার শোর প্রমুখের সঙ্গে বন্ধুত্বে, লেবার পার্টির দপ্তর ট্রান্সপোর্ট হাউসে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ক্যাম্পেইন ফর নিউক্লিয়ার ডিজারমামেন্টের সদস্য হিসেবে, বাষট্টিতে লন্ডনে পূর্ব বাংলার স্বাধিকার আদায়ের স্টাডি গ্রুপে, গোয়েরিং স্ট্রিটে ইস্ট পাকিস্তান হাউস স্থাপনে, নটিংহিল গেটে পোর্টবেলো হাইস্কুলের শিক্ষকতায়, পাকিস্তান স্টুডেন্ট ফেডারেশনের প্রথম বাঙালি প্রেসিডেন্টসহ (তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পরবর্তী সময়ের পাক প্রেসিডেন্ট ফারুখ লেঘারি) নানা ভূমিকায় দ্যুতি ছড়াতে দেখেছি।
সামরিক শাসনবিরোধী ভূমিকার জন্য বাষট্টিতে তিনি নাগরিকত্ব হারিয়েছিলেন। ব্রিটিশ পাসপোর্ট গ্রহণের সুযোগ তিনি নেননি। তেষট্টিতে পাসপোর্ট ফিরে পেয়েই দেশে ছুটে আসেন; দাঁড়ান বঙ্গবন্ধুর পাশে।
তাঁর প্রথম মক্কেলদের অন্যতম রাশেদ খান মেনন। বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা মেননের পক্ষে লড়েছিলেন তিনি। ‘প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল জাস্টিস’ কথাটি আমরা বেশ উচ্চারণ করি। ওই মামলায় এই আইনি সূত্র আমাদের ভূখণ্ডে প্রথম শিকড় গেড়েছিল।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কক্ষ। বঙ্গবন্ধু তাঁর মূল কৌঁসুলি আবদুল সালাম খানের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তফাতে দাঁড়িয়ে আমীর-উল ইসলাম। তিনি শুনলেন, সালাম খান বঙ্গবন্ধুকে বলছেন: ‘গোলটেবিলে না গেলে সারা জীবন তোমাকে জেলখানায় পচতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু ত্বরিত বললেন, ‘আপনাকে আমার মামলা করতে হবে না।’ আমীর-উলকে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। লেবার পার্টির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ সূত্রে টম উইলিয়ামস এমপি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মামলা লড়তে এসেছিলেন। ওই সময়ে সেনা বাহিনীর সঙ্গে লবিং করার প্রয়োজন ছিল। আমীর-উলের জুনিয়র ছিলেন মওদুদ আহমদ। তাঁকে নিয়ে গেলেন কর্নেল ওসমানীর কাছে। কাজ হলো না। ঠিক এমন সময়ে আমীর-উল যান কামাল হোসেনের কাছে। তাঁর ভগ্নিপতির সঙ্গে ইসলামাবাদের সামরিক কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লবিং করতে রাজি হলেন। তখনই তিনি বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী হলেন। ড. কামাল হোসেনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার এটাই হলো সূত্রপাত।
১৯৫৬ ও ১৯৬২-তে সংবিধানের খসড়া তৈরির প্রক্রিয়ায় তিনি ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ জাতীয় নেতার ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে আমীর-উল নানাভাবে ঋদ্ধ হয়েছেন।
২৫ মার্চের কালরাতে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে পড়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে। কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গা থেকে তাঁরাই প্রথম ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নিজ জেলা মেহেরপুরের আম্রকাননে প্রবাসী সরকার গঠনের আয়োজনেও মুখ্য ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের খসড়াও প্রণীত হয় তাঁর হাতেই।
বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে তাঁর অনন্য অবদান হলো স্থানীয় সরকার বিষয়ে আলাদা পরিচ্ছেদ সংযোজন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর জীবনের অনবদ্য হলো আঠারো। গাদা গাদা বই নিয়ে খেটেখুটে হেবিয়াস কর্পাসের মামলা পরিচালনা করে শুরুতেই বিচারকদের নজর কেড়েছিলেন তিনি। রেলশ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে মাসদার হোসেন—আগাগোড়া তিনি আঠারোয় আলোকিত, উদ্দীপ্ত। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে তিনি মহিমান্বিত করেছেন ‘সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে’। জাতি শুনছে তাঁর ‘আঠারোর জয়ধ্বনি’।
মিজানুর রহমান খান
১৯৫৪-৫৫ সালে প্রায় দুই বছর বিনা বিচারে তিনি বন্দী ছিলেন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনী রাজবন্দীদের শ্রেণীবিন্যাসে তাঁকে কমিউনিস্টদের ‘ফেলো ট্রাভেলার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তাঁর কলেজজীবনে যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন টি এইচ খান। তিনি অবশ্য জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ওই মামলার শুনানি করতে রাজি হয়েছিলেন।
ইতিহাস তাঁর জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে নানা মাত্রায়। ভারত শাসন আইনে ২২৩(ক) নামে একটি নতুন ধারা যোগ করা হয়েছিল। এতে হাইকোর্টে রিট মামলা করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। সিআরপিসি বাদ দিয়ে ওই সংবিধানের দিকেই নজর পড়েছিল তরুণ বন্দী আমীর-উল ইসলামের। ওই একই ধারায় পাকিস্তান গণপরিষদের স্পিকার মৌলভি তমিজ উদ্দিন খান তাঁর বিখ্যাত রিট মামলাটি দায়ের করেছিলেন সিন্ধু হাইকোর্টে। ওই আইনটি গণপরিষদের প্রেসিডেন্ট সই করলেও গভর্নর জেনারেল তাতে সই করেননি। গণপরিষদ ভাঙার বিরুদ্ধে দায়ের করা রিটে হাইকোর্টে জিতেও ওই অজুহাতে তমিজ উদ্দিন হেরে গিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে।
সেটি ছিল পাকিস্তানের প্রথম সাংবিধানিক দুর্ঘটনা। ওই মামলায় তমিজ উদ্দিনের পক্ষে বিনে পয়সায় লড়েছিলেন জর্জ অরওয়েল বর্ণিত ‘অবিসংবাদিত মস্কোপন্থী’ ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা ও খ্যাতিমান সাংবিধানিক আইনবিদ ডেনিস নোয়েল প্রিট। পিন্ডিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হেরে প্রিট বলেছিলেন, পাকিস্তানের গণতন্ত্রের যবনিকাপাত ঘটল। ওই রায়ের কারণে অচল হয়ে গিয়েছিল ঢাকায় আমীর-উলের জীবনের প্রথম রিট দরখাস্ত।
কাকতালীয়ভাবে আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৬১ সালে দুই চোখে স্বপ্নে মাখা তরুণ আমীর-উল ইসলামের পেশাগত জীবনের সূচনা ঘটেছিল ওই প্রিটের চেম্বারে, তাঁর জুনিয়র হিসেবে।
শৈশবে মা বেগম আনোয়ারাকে হারিয়েছিলেন। মাতৃহারা ছেলেকে নিয়ে কলকাতা পোর্ট কমিশনের কর্মকর্তা বাবা ওয়াসিল হোসেনের উদ্বেগের অন্ত ছিল না। রাজনীতি না করার মুচলেকা দিলে তাঁর মুক্তি মিলবে। বাবার কাছ থেকে এমন বার্তা পাওয়ার পরও অটল থাকেন তিনি। বাবাও তাঁকে সে জন্য চাপ দেননি।
১৯৫৬-এর অক্টোবরে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। এরপর আমরা তাঁকে সাতান্নতে মস্কোর বিশ্ব যুব উৎসবে, বার্ট্রান্ড রাসেল ও ঘানার প্রধানমন্ত্রী নক্রুমার ভাষণের মুগ্ধ শ্রোতা হিসেবে, ব্রিটিশ সাংসদ জন স্টোন হাউস, পিটার শোর প্রমুখের সঙ্গে বন্ধুত্বে, লেবার পার্টির দপ্তর ট্রান্সপোর্ট হাউসে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ক্যাম্পেইন ফর নিউক্লিয়ার ডিজারমামেন্টের সদস্য হিসেবে, বাষট্টিতে লন্ডনে পূর্ব বাংলার স্বাধিকার আদায়ের স্টাডি গ্রুপে, গোয়েরিং স্ট্রিটে ইস্ট পাকিস্তান হাউস স্থাপনে, নটিংহিল গেটে পোর্টবেলো হাইস্কুলের শিক্ষকতায়, পাকিস্তান স্টুডেন্ট ফেডারেশনের প্রথম বাঙালি প্রেসিডেন্টসহ (তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পরবর্তী সময়ের পাক প্রেসিডেন্ট ফারুখ লেঘারি) নানা ভূমিকায় দ্যুতি ছড়াতে দেখেছি।
সামরিক শাসনবিরোধী ভূমিকার জন্য বাষট্টিতে তিনি নাগরিকত্ব হারিয়েছিলেন। ব্রিটিশ পাসপোর্ট গ্রহণের সুযোগ তিনি নেননি। তেষট্টিতে পাসপোর্ট ফিরে পেয়েই দেশে ছুটে আসেন; দাঁড়ান বঙ্গবন্ধুর পাশে।
তাঁর প্রথম মক্কেলদের অন্যতম রাশেদ খান মেনন। বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা মেননের পক্ষে লড়েছিলেন তিনি। ‘প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল জাস্টিস’ কথাটি আমরা বেশ উচ্চারণ করি। ওই মামলায় এই আইনি সূত্র আমাদের ভূখণ্ডে প্রথম শিকড় গেড়েছিল।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কক্ষ। বঙ্গবন্ধু তাঁর মূল কৌঁসুলি আবদুল সালাম খানের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তফাতে দাঁড়িয়ে আমীর-উল ইসলাম। তিনি শুনলেন, সালাম খান বঙ্গবন্ধুকে বলছেন: ‘গোলটেবিলে না গেলে সারা জীবন তোমাকে জেলখানায় পচতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু ত্বরিত বললেন, ‘আপনাকে আমার মামলা করতে হবে না।’ আমীর-উলকে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। লেবার পার্টির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ সূত্রে টম উইলিয়ামস এমপি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মামলা লড়তে এসেছিলেন। ওই সময়ে সেনা বাহিনীর সঙ্গে লবিং করার প্রয়োজন ছিল। আমীর-উলের জুনিয়র ছিলেন মওদুদ আহমদ। তাঁকে নিয়ে গেলেন কর্নেল ওসমানীর কাছে। কাজ হলো না। ঠিক এমন সময়ে আমীর-উল যান কামাল হোসেনের কাছে। তাঁর ভগ্নিপতির সঙ্গে ইসলামাবাদের সামরিক কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লবিং করতে রাজি হলেন। তখনই তিনি বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী হলেন। ড. কামাল হোসেনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার এটাই হলো সূত্রপাত।
১৯৫৬ ও ১৯৬২-তে সংবিধানের খসড়া তৈরির প্রক্রিয়ায় তিনি ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ জাতীয় নেতার ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে আমীর-উল নানাভাবে ঋদ্ধ হয়েছেন।
২৫ মার্চের কালরাতে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে পড়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে। কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গা থেকে তাঁরাই প্রথম ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নিজ জেলা মেহেরপুরের আম্রকাননে প্রবাসী সরকার গঠনের আয়োজনেও মুখ্য ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের খসড়াও প্রণীত হয় তাঁর হাতেই।
বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে তাঁর অনন্য অবদান হলো স্থানীয় সরকার বিষয়ে আলাদা পরিচ্ছেদ সংযোজন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর জীবনের অনবদ্য হলো আঠারো। গাদা গাদা বই নিয়ে খেটেখুটে হেবিয়াস কর্পাসের মামলা পরিচালনা করে শুরুতেই বিচারকদের নজর কেড়েছিলেন তিনি। রেলশ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে মাসদার হোসেন—আগাগোড়া তিনি আঠারোয় আলোকিত, উদ্দীপ্ত। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে তিনি মহিমান্বিত করেছেন ‘সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে’। জাতি শুনছে তাঁর ‘আঠারোর জয়ধ্বনি’।
মিজানুর রহমান খান
No comments