এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার-বন্ড বাজার গঠনের জন্য নীতি-সহায়তা প্রয়োজন
সদ্য ঘোষিত অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতির প্রভাবসহ আর্থিক বাজারের চলমান অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিআই) চেয়ারম্যান আসাদ খান প্রথম আলো: দেশের আর্থিক বাজারে তথা আর্থিক খাতে বড় ধরনের অস্থিরতা চলছে। আর্থিক বাজারের অংশীদার হিসেবে আপনারা কীভাবে দেখছেন?
আসাদ খান: যখন অর্থনীতিতে ঋণপ্রবাহ কমে যায়, যখন নগদ অর্থের টানাটানি দেখা দেয়, তখনই আর্থিক বাজারে অস্থিরতা ও টানাপোড়েন তৈরি হয়। বাংলাদেশেও সে রকম অবস্থা দেখা দিয়েছে। একদিকে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে, অন্যদিকে অর্থনীতির প্রকৃত খাতগুলো বেকায়দা অবস্থায় পড়েছে। শিল্প খাতে উৎপাদন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া ও বিনিয়োগের জন্য অর্থ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এটা হয়েছে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত হয়ে যাওয়ার জন্য। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অর্থ নেই। তারা তাই ঋণ দিতে পারছে না। এ রকম চলতে থাকলে আগামী তিন-চার মাস পরে পরিস্থিতি হয়তো একটা আর্থিক সংকটে রূপ নিতে পারে। আর্থিক বাজারের অংশীদার হিসেবে আমরা তো ইতিমধ্যেই সে রকম যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে গেছি।
প্রথম আলো: সর্বশেষ যে অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে তো বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপ্রবাহ আরও কমানোর সুস্পষ্ট আভাস দিয়েছে। তাহলে কী চলমান পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে না?
আসাদ খান: বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে এই মুহূর্তে এটাই ঠিক পদক্ষেপ। একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখবেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণপ্রবাহ কমানোর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বা বিলাসদ্রব্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে অর্থপ্রবাহকে একটা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এলে পরে হয়তো ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।
প্রথম আলো: কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতির মধ্য থেকে কীভাবে বিলাসদ্রব্য চিহ্নিত ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
আসাদ খান: এখানে বিকল্পগুলো খুব স্পষ্ট। যেহেতু টাকার বিপরীতে ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে, সেহেতু কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতেই হবে। এ রকম অবস্থায় চাল-তেল আমদানি অব্যাহত রাখা বেশি জরুরি, নাকি দামি মোটরগাড়ি আমদানি, তা ঠিক করতে হবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে তা থেকে বেরিয়ে আসতে তো কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিতেই হয়। এই অবস্থায় সাময়িকভাবে কিছু খাতকে নিরুৎসাহিত না করে উপায় নেই। অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে এটা করতে হবে।
প্রথম আলো: আর্থিক বাজারের টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের অস্থিরতাও তো একটা ভূমিকা রেখেছে। সেখান থেকে উত্তরণের উপায় কী?
আসাদ খান: বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারের বৈশিষ্ট্যই হলো নিয়মিত উত্থান-পতন। কখনো পতনটা বেশি সময় ধরে হতে পারে, কখনো কম সময় ধরে। বাংলাদেশে দুই বছর আগে যখন বাজার উঠেছে, একটা পর্যায়ে অনেক দ্রুত ও অস্বাভাবিকভাবে উঠেছে। এরপর আবার বড় পতন হয়েছে। এখন যা হচ্ছে, তার মূলে রয়েছে বাজারে এলোমেলোভাবে হস্তক্ষেপ এবং বাজার নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অতি আলোচনা। পুঁজিবাজার নিয়ে সবারই কথাবার্তা খুব কম বলা উচিত। বাজারকে বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে দেওয়া উচিত। বাজার পড়ে যাওয়া নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অথচ এই বাজারেও কিছু ব্যাংকসহ তালিকাভুক্ত কিছু প্রতিষ্ঠান ভালো মুনাফা করেছে। তার মানে বাজারের অবস্থা অত খারাপ না। কাজেই গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই দায়িত্বশীল আচরণ করে, আলোচনা-সমালোচনা কম করে বাজারকে স্বাভাবিকভাবে চলতে সহায়তা করা প্রয়োজন। আর সঠিক নীতি-পরিকল্পনার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে আর্থিক বাজারেই বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন।
প্রথম আলো: আর্থিক বাজারের বৈচিত্র্য বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
আসাদ খান: আর্থিক বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো বন্ড বাজার বা ঋণ বাজার। বাংলাদেশে এখনো বন্ড বাজারটি গড়ে উঠল না সঠিক নীতি-নির্দেশনার অভাবে। বন্ড বাজার বিকাশের জন্য করের ছাড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েক বছর আগে একবার এই কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল। তখন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পদভিত্তিক সিকিউরিটাইজেশন চালুর উদ্যোগ নেয়। অল্প সময় পরেই আবার কর ছাড়ের সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। অথচ বন্ড বাজার গড়ে উঠলে সরকার ও বেসরকারি খাত উভয়রেই সরাসরি বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। এখন যেসব ট্রেজারি বন্ড আছে, সেগুলোও এই বাজারে লেনদেন করা যেত। কাজেই এদিকে সরকারের নীতি-সহায়তা প্রয়োজন।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া]
প্রথম আলো: সর্বশেষ যে অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে তো বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপ্রবাহ আরও কমানোর সুস্পষ্ট আভাস দিয়েছে। তাহলে কী চলমান পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে না?
আসাদ খান: বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে এই মুহূর্তে এটাই ঠিক পদক্ষেপ। একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখবেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণপ্রবাহ কমানোর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বা বিলাসদ্রব্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে অর্থপ্রবাহকে একটা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এলে পরে হয়তো ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।
প্রথম আলো: কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতির মধ্য থেকে কীভাবে বিলাসদ্রব্য চিহ্নিত ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
আসাদ খান: এখানে বিকল্পগুলো খুব স্পষ্ট। যেহেতু টাকার বিপরীতে ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে, সেহেতু কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতেই হবে। এ রকম অবস্থায় চাল-তেল আমদানি অব্যাহত রাখা বেশি জরুরি, নাকি দামি মোটরগাড়ি আমদানি, তা ঠিক করতে হবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে তা থেকে বেরিয়ে আসতে তো কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিতেই হয়। এই অবস্থায় সাময়িকভাবে কিছু খাতকে নিরুৎসাহিত না করে উপায় নেই। অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে এটা করতে হবে।
প্রথম আলো: আর্থিক বাজারের টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের অস্থিরতাও তো একটা ভূমিকা রেখেছে। সেখান থেকে উত্তরণের উপায় কী?
আসাদ খান: বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারের বৈশিষ্ট্যই হলো নিয়মিত উত্থান-পতন। কখনো পতনটা বেশি সময় ধরে হতে পারে, কখনো কম সময় ধরে। বাংলাদেশে দুই বছর আগে যখন বাজার উঠেছে, একটা পর্যায়ে অনেক দ্রুত ও অস্বাভাবিকভাবে উঠেছে। এরপর আবার বড় পতন হয়েছে। এখন যা হচ্ছে, তার মূলে রয়েছে বাজারে এলোমেলোভাবে হস্তক্ষেপ এবং বাজার নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অতি আলোচনা। পুঁজিবাজার নিয়ে সবারই কথাবার্তা খুব কম বলা উচিত। বাজারকে বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে দেওয়া উচিত। বাজার পড়ে যাওয়া নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অথচ এই বাজারেও কিছু ব্যাংকসহ তালিকাভুক্ত কিছু প্রতিষ্ঠান ভালো মুনাফা করেছে। তার মানে বাজারের অবস্থা অত খারাপ না। কাজেই গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই দায়িত্বশীল আচরণ করে, আলোচনা-সমালোচনা কম করে বাজারকে স্বাভাবিকভাবে চলতে সহায়তা করা প্রয়োজন। আর সঠিক নীতি-পরিকল্পনার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে আর্থিক বাজারেই বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন।
প্রথম আলো: আর্থিক বাজারের বৈচিত্র্য বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
আসাদ খান: আর্থিক বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো বন্ড বাজার বা ঋণ বাজার। বাংলাদেশে এখনো বন্ড বাজারটি গড়ে উঠল না সঠিক নীতি-নির্দেশনার অভাবে। বন্ড বাজার বিকাশের জন্য করের ছাড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েক বছর আগে একবার এই কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল। তখন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পদভিত্তিক সিকিউরিটাইজেশন চালুর উদ্যোগ নেয়। অল্প সময় পরেই আবার কর ছাড়ের সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। অথচ বন্ড বাজার গড়ে উঠলে সরকার ও বেসরকারি খাত উভয়রেই সরাসরি বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। এখন যেসব ট্রেজারি বন্ড আছে, সেগুলোও এই বাজারে লেনদেন করা যেত। কাজেই এদিকে সরকারের নীতি-সহায়তা প্রয়োজন।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া]
No comments