পবিত্র কোরআনের আলো-মুশরিকদের সেদিন কোনো জবাব থাকবে না, তারা আল্লাহর দোহাই দেবে

২০. আল্লাযীনা আতাইনা হুমুল কিতাবা ইয়া'রিফূনাহূ কামা ইয়া'রিফূনা আব্না-আহুম; আল্লাযীনা খাছিরূ আনফুছাহুম ফাহুম লা-ইউ'মিনূন। ২১. ওয়া মান আয্লামু মিম্মানিফ্তারা আ'লাল্লাহি কাযিবান আও কায্যাবা বিআইয়াতিহী; ইন্নাহূ লা-ইউফলিহুয্ যালিমীন।


২২. ওয়া ইয়াওমা নাহ্শুরুহুম জামীআ'ন ছুম্মা নাক্বূলু লিল্লাযীনা আশ্রাকূ আইনা শুরাকা-উকুমুল্লাযীনা কুনতুম তায্উ'মূন।
২৩. ছুম্মা লামতাকুন ফিত্নাতুহুম ইল্লা আন ক্বালূ ওয়াল্লাহি রাবি্বনা মা কুন্না মুশরিকীন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ২০-২৩]
অনুবাদ : ২০. এর আগে যাদের আমি কিতাব দান করেছি, তারা নবীকে ঠিক সেভাবেই চেনে, যেভাবে চেনে তাদের নিজের সন্তানদের। যারা নিজেদের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত, তারা তো ইমান আনবে না।
২১. তার চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে যে স্বয়ং আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে; কিংবা তাঁর আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। জালিমদের জন্য আল্লাহ তায়ালা কখনোই সাফল্য এনে দেন না।
২২. যেদিন আমি তাদের সবাইকে একত্র করব, তখন মুশরিকদের ডেকে বলব, তোমাদের সেই প্রভুরা আজ কোথায়, যাদের তোমরা আমার সঙ্গে শরিক মনে করতে।
২৩. অতঃপর তাদের সেদিন অজুহাত দাঁড় করানোর আর কোনো সুযোগ থাকবে না, তারা তখন বলবে, আল্লাহর কসম, যিনি আমাদের প্রতিপালক, আমরা কখনো মুশরিক ছিলাম না।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে মুমিন এবং কাফের ও মুশরিকদের মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যগুলো হৃদয়গ্রাহী উদাহরণের মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ২০ নম্বর আয়াতে প্রধানত আহলে কিতাবদের ব্যাপারে বলা হয়েছে। আহলে কিতাব আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানতে পেরেছে তাদের কিতাবের মাধ্যমেই। আখেরি নবী কে হবেন, কী তাঁর বৈশিষ্ট্য ও পরিচয়-এ সবই তাদের জানা। এমনকি এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে জানা, যতটা ঘনিষ্ঠভাবে মানুষ তাদের সন্তানদের জানে। কিন্তু এর পরও তারা ইমান আনতে চায়নি। কেন? কারণ একটাই-তাদের অহমিকা। এটাকেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যারা নিজেদের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত, তারা ইমান আনবে না। আসলে মানুষ যখন প্রবৃত্তির ওপর নির্ভর করে চলে, তখন সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। কায়েমি স্বার্থ ও আত্ম-অহমিকা আঁকড়ে ধরে থাকা লোকদের ব্যাপারেই এখানে বলা হয়েছে।
২১ নম্বর আয়াতে আহলে কিতাব ও কোরাইশ সম্প্রদায়ের সেসব লোকের কথা বলা হয়েছে, যারা নিজেদের ধর্মশাস্ত্রের অপব্যাখ্যা দিয়ে রাসুল এবং কোরআনকে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছে। তারা তাদের কিতাবের ভাষাগুলোকে রদবদল করে ফেলেছে, এটা হলো আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ। আর তারা যখন তাদের কিতাবের উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তকে অস্বীকার করে, তখন সেটা হয় আল্লাহর আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা।
২২ ও ২৩ নম্বর আয়াত দুটিতে প্রধানত মক্কার কোরাইশদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। মক্কার কোরাইশরা ছিল মূলত পুতুল পূজারি। নবী হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর বংশধর হিসেবে একত্ববাদের ধারক বলে দাবি করলেও পুতুল পূজার মাধ্যমে তারা অংশীবাদী বা মুশরিক সমাজে পরিণত হয়ে গেছে অনেক আগে। এই মুশরিকদের করুণ পরিণতির বিষয়ে এখানে কথা বলা হয়েছে। কাল হাশরের দিনে আল্লাহ তায়ালা তাদের ডেকে বলবেন, তোমাদের সেই প্রভুরা আজ কোথায়, যাদের তোমরা আমার সঙ্গে শরিক বানিয়েছিলে? তাদের তখন কোনো জবাব থাকবে না। তারা তখন নিজেদের একমাত্র আল্লাহর বান্দা বলে দাবি করবে এবং তারা যে পুতুল পূজারি বা মুশরিক ছিল, তা অস্বীকার করবে। অর্থাৎ আজ তারা যা সত্য মনে করছে, কাল বুঝতে পারবে তারা ছিল মিথ্যার ওপর।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.