জনসেবার অনুপম আদর্শ by মুফতি মুতীউর রাহমান
হজরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন 'রহ্মাতুলি্লল আল-আমিন', বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। তাঁর সিরাত-আদর্শ বিশ্ববাসীর জন্য প্রভূত কল্যাণময়। তিনি তাঁর জীবনে জনসেবার বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। আজীবন তিনি কথায়-কাজে-জনসেবায় ব্রতী ছিলেন।
সমাজের বঞ্চিত, হতদরিদ্র, এতিম-অনাথ, আর্ত-পীড়িত-অবহেলিত মানুষের জন্য তাঁর ব্যাকুলতা-সহমর্মিতা, সাহায্য-সহযোগিতা গোটা মানবতার জন্য শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয়। তিনি ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব কোনো বিপদ-আপদ দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা তার কিয়ামত দিবসের বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অসচ্ছল ব্যক্তির সংকট দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দুনিয়া ও আখিরাতের সংকট দূর করবেন। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন, বান্দা যতক্ষণ তার মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে থাকে, আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ তার সাহায্যে থাকেন।' (তিরমিজি)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) এতিমদের প্রতি দয়া ও সহমর্মিতাকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে কোনো এতিমকে এনে স্বীয় খাদ্য ও পানীয়তে শরিক করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন_যদি না সে এমন কোনো পাপ করে, যা ক্ষমার অযোগ্য।' (তিরিমিজি)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, 'যে বিধবা ও দরিদ্রদের ভরণ-পোষণের জন্য উপার্জনের চেষ্টা করে, সে হলো আল্লাহর পথে মুজাহিদের মতো বা ওই ব্যক্তির মতো, যে দিবসে রোজা রাখে এবং রাতে নামাজ আদায় করে।' (তিরমিজি)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, একজন মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সুতরাং একজন মুসলমান আরেক মুসলমানের সব সাহায্য-সহযোগিতা, উপকার ও কল্যাণের জন্য এগিয়ে আসবে। অপকার, অকল্যাণ, অসহযোগ থেকে দূরে থাকবে। তিনি বলেন, 'মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। তার সম্পর্কে মিথ্যা বলবে না। তাকে অপমান হতে দেবে না। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সম্মান-সম্পদ ও রক্ত হারাম। তাকওয়া হলো এখানে (অন্তরে) কোনো ব্যক্তির মন্দতার জন্য তার অপর মুসলমান ভাইকে হেয় দৃষ্টিতে দেখাটাই যথেষ্ট।' (তিরমিজি)
জনসেবা ও মানবকল্যাণে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রেখে যাওয়া সুমহান আদর্শ ও শিক্ষা থেকে বর্তমানে আমরা অনেক দূরে। ফলে সমাজের দরিদ্র, বিধবা, এতিম, বঞ্চিত মানুষ এখন অসহায় জীবন যাপন করছে। আমরা দিন দিন খুবই আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। অসহায়, যাতনাক্লিষ্ট, দুস্থ ও আর্তপীড়িত মানুষের প্রতি আমাদের যেন সহমর্মিতা, সহানুভূতি জাগে না। অথচ পবিত্র কোরআনের বক্তব্য থেকে বুঝে আসে, শুধু নামাজ-রোজার নামই সৎকর্ম নয়, বরং আর্তমানবতার সেবা, জনকল্যাণও ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'শুধু পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করাই সৎকর্ম নয়; বরং বড় সৎকাজ হচ্ছে ইমান আনা, আল্লাহ, কিয়ামত দিবস, ফেরেশতাকুল ও সব নবী-রাসুলের ওপর ইমান আনা। আর সম্পদের মহব্বত সত্ত্বেও তা আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, পর্যটক, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য ব্যয় করা আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় তাদের অঙ্গীকারপূর্ণ করে যারা অভাবে রোগে-শোকে যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই পরহেজগার।' (বাকারা, ১৭৭)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) আর্তমানবতার সেবা ও মানবকল্যাণে যা যা প্রয়োজন সবই করেছেন। সে কারণে ইসলামের সেই সোনালি যুগে মুসলিম সমাজে শান্তি-সুখের ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়েছিল। আজও যদি আমরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই উত্তম চরিত্র ও আদর্শকে অনুসরণ করি তাহলে আমাদের সমাজও শান্তিময় হয় উঠবে। অসহায় মানুষের অসহায়ত্ব দূর হবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সিরাত জীবনচরিত থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সামাজিক জীবনে একে অন্যের সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। হাদিসে এসেছে, 'এক মুমিন আরেক মুমিনের জন্য ইমারততুল্য। এর একটি ইট আরেকটিকে শক্তি জুগিয়ে থাকে।' (তিরমিজি)
পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার এই মহান শিক্ষায় আমাদের আবারও উজ্জীবিত হতে হবে।
লেখক : প্রধান মুফতি ও সিনিয়র মুহাদ্দিস
চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা, ঢাকা
হজরত মুহাম্মদ (সা.) এতিমদের প্রতি দয়া ও সহমর্মিতাকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে কোনো এতিমকে এনে স্বীয় খাদ্য ও পানীয়তে শরিক করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন_যদি না সে এমন কোনো পাপ করে, যা ক্ষমার অযোগ্য।' (তিরিমিজি)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, 'যে বিধবা ও দরিদ্রদের ভরণ-পোষণের জন্য উপার্জনের চেষ্টা করে, সে হলো আল্লাহর পথে মুজাহিদের মতো বা ওই ব্যক্তির মতো, যে দিবসে রোজা রাখে এবং রাতে নামাজ আদায় করে।' (তিরমিজি)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, একজন মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সুতরাং একজন মুসলমান আরেক মুসলমানের সব সাহায্য-সহযোগিতা, উপকার ও কল্যাণের জন্য এগিয়ে আসবে। অপকার, অকল্যাণ, অসহযোগ থেকে দূরে থাকবে। তিনি বলেন, 'মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। তার সম্পর্কে মিথ্যা বলবে না। তাকে অপমান হতে দেবে না। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সম্মান-সম্পদ ও রক্ত হারাম। তাকওয়া হলো এখানে (অন্তরে) কোনো ব্যক্তির মন্দতার জন্য তার অপর মুসলমান ভাইকে হেয় দৃষ্টিতে দেখাটাই যথেষ্ট।' (তিরমিজি)
জনসেবা ও মানবকল্যাণে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রেখে যাওয়া সুমহান আদর্শ ও শিক্ষা থেকে বর্তমানে আমরা অনেক দূরে। ফলে সমাজের দরিদ্র, বিধবা, এতিম, বঞ্চিত মানুষ এখন অসহায় জীবন যাপন করছে। আমরা দিন দিন খুবই আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। অসহায়, যাতনাক্লিষ্ট, দুস্থ ও আর্তপীড়িত মানুষের প্রতি আমাদের যেন সহমর্মিতা, সহানুভূতি জাগে না। অথচ পবিত্র কোরআনের বক্তব্য থেকে বুঝে আসে, শুধু নামাজ-রোজার নামই সৎকর্ম নয়, বরং আর্তমানবতার সেবা, জনকল্যাণও ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'শুধু পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করাই সৎকর্ম নয়; বরং বড় সৎকাজ হচ্ছে ইমান আনা, আল্লাহ, কিয়ামত দিবস, ফেরেশতাকুল ও সব নবী-রাসুলের ওপর ইমান আনা। আর সম্পদের মহব্বত সত্ত্বেও তা আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, পর্যটক, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য ব্যয় করা আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় তাদের অঙ্গীকারপূর্ণ করে যারা অভাবে রোগে-শোকে যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই পরহেজগার।' (বাকারা, ১৭৭)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) আর্তমানবতার সেবা ও মানবকল্যাণে যা যা প্রয়োজন সবই করেছেন। সে কারণে ইসলামের সেই সোনালি যুগে মুসলিম সমাজে শান্তি-সুখের ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়েছিল। আজও যদি আমরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই উত্তম চরিত্র ও আদর্শকে অনুসরণ করি তাহলে আমাদের সমাজও শান্তিময় হয় উঠবে। অসহায় মানুষের অসহায়ত্ব দূর হবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সিরাত জীবনচরিত থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সামাজিক জীবনে একে অন্যের সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। হাদিসে এসেছে, 'এক মুমিন আরেক মুমিনের জন্য ইমারততুল্য। এর একটি ইট আরেকটিকে শক্তি জুগিয়ে থাকে।' (তিরমিজি)
পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার এই মহান শিক্ষায় আমাদের আবারও উজ্জীবিত হতে হবে।
লেখক : প্রধান মুফতি ও সিনিয়র মুহাদ্দিস
চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা, ঢাকা
No comments