পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী-মহানবীর আদর্শই হোক শান্তির পাথেয়
আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ অত্যন্ত গুরুত্ববহ দিন। এ দিনটিতেই ইসলামের শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আবার এ দিনটি মহানবীর ওফাত দিবস হিসেবেও স্বীকৃত। প্রিয়নবীর জন্ম ও মৃত্যুর এ দিনটি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য স্রষ্টার ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পালনীয় একটি দিন।
কেননা শুধু একটি জাতি, গোষ্ঠী বা ভাষার জন্য নয়, সৃষ্টিকর্তার প্রিয়তম বান্দা হিসেবে তিনি মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠতম আদর্শ বহন করে নিয়ে এসেছিলেন। আর আদর্শকে নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করে সুমহান একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন সবার সামনে। এই দিনে মুসলমানরা হজরতের কাজ, বাণী ও আদর্শকে স্মরণ করে_ ইসলামের পথে থাকার প্রেরণা লাভ করে। বস্তুত মহানবী একান্তভাবে মানুষের জন্য পালনীয়, অনুসরণীয় আদর্শ রেখে গেছেন। ঘটনাবহুল জীবনে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তিনি আরব জাহানকে আইয়ামে জাহিলিয়া থেকে মুক্ত করে ইসলামের শান্তি ও সৌহার্দ্যের পতাকাতলে একত্র করেছেন, বেদুইন-যাযাবরদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। এ রাষ্ট্রই পৃথিবীর প্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। তিনি পরস্পরবিরোধী আরব গোষ্ঠীগুলোকে তাওহিদের পতাকাতলে সমবেত করেছেন। এক আল্লাহর বিশ্বাসে তাদের দীক্ষিত করেছেন। জীবনে বহু অন্যায়-অত্যাচার-আঘাত-আক্রমণের মধ্য দিয়ে কষ্ট সয়ে পথ চলতে হয়েছে তাঁকে। জন্মভূমি ছেড়ে হিজরত করতে হয়েছে মদিনায়। কিন্তু কখনও মানুষের প্রতি বিদ্বেষ কিংবা হিংসার সামান্যতম প্রকাশ তাঁর মধ্যে দেখা যায়নি। একান্ত বাধ্য না হলে তিনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেননি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে ধর্ম-বর্ণ-মত নির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপত্তা ও আশ্রয় নিশ্চিত হয়েছিল। সহনশীলতা, সৌহার্দ্য, শান্তি, ঐক্য, প্রগতির সমন্বয়ে এক অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন তিনি। আজকের দিনে তাঁর প্রকৃত আদর্শকে সবার সামনে তুলে ধরাটা আর যে কোনো সময়ের চেয়ে জরুরি। কেননা, বিশ্ব আজ হিংসা-বিদ্বেষে আচ্ছন্ন, যুদ্ধ-বিগ্রহ মানবতাকে পরাভূত করতে উদ্যত। এ অবস্থায় মহানবীর আদর্শ সবার জন্য পাথেয় হতে পারে। মুসলমানদের জন্যও তাঁর আদর্শ অনুসরণ একান্ত কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, অনেকেই পবিত্র ধর্মকে অবলম্বন করে হিংসা ও সন্ত্রাসকে পালনীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছেন। কিন্তু মহানবীর জীবনের সহজ-সরল পথ, তাঁর রেখে যাওয়া উন্নত আদর্শ ও কোরআনের বাণী কখনও এমন হিংসা এবং সন্ত্রাসের কথা বলে না। ছোটবেলা থেকে নবী করিম (সা.) যে পরোপকারিতা, সংঘবদ্ধতা, ঐক্য, শান্তি, প্রগতি, সহনশীলতা, সহাবস্থানের আদর্শ অনুসরণ করে গেছেন তা হিংসার আদর্শকে সমর্থন করে না। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত তিনি যে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা আজ অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। মনে রাখতে হবে, মহানবীর চালিত পথে ইসলামের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল, অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের অগণিত নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের কাছে ইসলাম যে মুক্তির আদর্শ হিসেবে গৃহীত হয়েছিল তার মূল কথা ছিল শান্তি, যুদ্ধ নয়। ফলে আজকের বাস্তবতায় মহানবীর আদর্শকে অনুধাবন ও অনুসরণ করা অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। এবারের পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীতে মহানবীর আদর্শ আমাদের অগ্রগতির পথের পাথেয় হোক। মহানবী ও তাঁর উম্মতের ওপর পরম করুণাময়ের শান্তি বর্ষিত হোক।
No comments