জাতিসংঘের মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিন-নির্বাচনী সংলাপ
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি একই অভিমত রেখেছিলেন; এবং এই আকাঙ্ক্ষা সর্বজনীন। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। এখন নির্বাচিত সরকারের আমলেও সেই চ্যালেঞ্জ নতুন করে দেখা দিয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগের সুরে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বান কি মুন বলেছেন, বাংলাদেশে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাঁর এ মন্তব্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও যদি সবার অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচন তারা করতে না পারে, তাহলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত বলে জাতিসংঘের মহাসচিব যথার্থই মত দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ মোটামুটি অকার্যকর রয়েছে। সংসদে বিরোধী দল গত আড়াই বছরে যত দিন অংশগ্রহণ করেছে, তাতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে গঠনমূলক আলাপ-আলোচনার কোনো নজির সৃষ্টি হয়নি। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ বহুদিন ধরে দুই প্রধান দলের মধ্যে সংলাপ নিয়ে তেমনভাবে সোচ্চার নয়। কারণ, তারা হয়তো ধরেই নিয়েছে যে এ ধরনের সংলাপে বসতে দুই দলের কোনো মনমানসিকতা কিংবা প্রস্তুতি নেই। জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখে উচ্চারিত ‘সংলাপ’ শব্দটি সম্পর্কে প্রধান দুই দল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোরও দরকার মনে করেনি। দেশের রাজনৈতিক মহলে এমন কোনো প্রেশার গ্রুপও নেই, যারা তাদের কাছ থেকে সংলাপের বিষয়ে কোনো কার্যকর বক্তব্য নিশ্চিত করতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিব যে সংলাপ চাইছেন, তা অনুষ্ঠানের জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজে বিদ্যমান থাকা দরকার, তার বিরাট ঘাটতি চলছে।
১৯৯১ সালের পর বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশ জাতিসংঘের কাছে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা চেয়েছে এবং তারা তা পেয়েছেও। বান কি মুন কারিগরি ও লজিস্টিকস সহায়তা গ্রহণে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা লক্ষ করি, সরকারি ও বিরোধী দল এ ব্যাপারেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
সুতরাং জাতিসংঘকে কতটা, কী উপায়ে সম্পৃক্ত করে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়, সে বিষয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সমাজও সক্রিয় চিন্তাভাবনা করতে পারে। জাতিসংঘের কাছ থেকে সীমিত কিংবা ব্যাপকভিত্তিক যেকোনো ধরনের সহায়তা নেওয়ার দরজা খোলা আছে। কিন্তু তার ব্যাপ্তি নির্ধারণই বিরাট চ্যালেঞ্জ, আর সেটা নিতে হলেও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আগ্রহী হতে হবে। তবে জাতিসংঘের মহাসচিবের সংলাপ আহ্বানের বিষয়টি দুই প্রধান দলেরই উচিত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া। সংলাপের সব সুযোগ ও পথ বন্ধ রাখা হবে আত্মঘাতী। গণতন্ত্রের জন্য অশুভ।
No comments