মহাহিসাব নিরীক্ষকের কাছে ব্যাখ্যা চাই-বকেয়া টেলিফোন বিল
কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বকেয়া টেলিফোন বিল থাকা বস্তুত ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ প্রবাদবাক্যটিই স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি সরকারি খাতের অর্থনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অর্থমন্ত্রীর আক্ষেপ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ঠিকই আছে, শুধু গণমাধ্যম ও অর্থনীতিবিদদের তা নজরে আসছে না। প্রধানমন্ত্রীর সুরও অভিন্ন।
গত বছরের ১৫ জুন জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তথ্য দিয়েছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দপ্তরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকার টেলিফোন বিল বকেয়া আছে। সোমবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওই বকেয়ার পরিমাণ গত জুন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় আগে মন্ত্রী সংসদকে বলেছিলেন যে বকেয়ার পরিমাণ উল্লেখ করে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যথারীতি শীর্ষ খেলাপি। গত জুনে তাদের সাড়ে ১২ কোটি টাকার বকেয়া এবারে ১০ কোটি ৭৯ লাখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা জানি না, দুই কোটি টাকার হেরফের কীভাবে হলো। তথ্য নিয়ে যেভাবে গোল পাকছে, তাতে আমরা সতর্ক ও কখনো সন্দিগ্ধ না হয়ে পারি না। আইন মন্ত্রণালয় গত বছরের জুনে সাড়ে তিন কোটি টাকার খেলাপি ছিল। এই জুনে তার বকেয়া কী করে সাড়ে পাঁচ কোটিতে দাঁড়ায়?
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ব্যবহূত তথ্য টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক ‘সাম্প্রতিক’ প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে, যাতে গত জুন পর্যন্ত বকেয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৭ আগস্ট ২০১১ প্রস্তুত করা বিটিসিএলের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এতে জুন ১১ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ওয়ারি মোট বকেয়ার পরিমাণ দেওয়া আছে। এতে কবে থেকে এত বিল কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে জমিয়েছে, তা বোঝা যায় না। আমাদের জানা দরকার, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সংসদে বকেয়া তথ্য প্রকাশের পর পরিস্থিতির হেরফের কতটা কীভাবে ঘটেছে। অর্থনীতিবিদ মোজাফ্ফর আহমদ বলেছেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেটে নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকে। সেই টাকা কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে ব্যয়, সমন্বয় বা অনাদেয় রাখছে, তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কেবল টেলিফোন নয়, বিদ্যুৎসহ সব সেবা খাতের বিলই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিশোধে অনীহ। এমনকি বছরওয়ারি হিসাবটা দিতেও দায়িত্বপ্রাপ্তরা গড়িমসি করে থাকেন। এসব কি অর্থমন্ত্রীর ভাষায় অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা নয়? এভাবে কোনো সরকার বা প্রশাসন চলতে পারে? সরকারি প্রতিষ্ঠানই যদি সেবা খাতের বিল পরিশোধ না করে, তাহলে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করার নৈতিক জোরও তাদের থাকে না।
সাংবিধানিক পদধারী হিসেবে মহাহিসাব নিরীক্ষকের দপ্তর নানা ক্ষেত্রে এখনো ঘোমটা দিয়ে আছে। নীরবে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে। তাদের কাছে উল্লিখিত বকেয়া বিলবিষয়ক নৈরাজ্যের ব্যাখ্যা চাই। আর সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় সাধারণ গ্রাহকেরা শাস্তি ভোগ করলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেন জবাবদিহির বাইরে থাকবেন?
No comments