ভারতের একতরফা উদ্যোগ অগ্রহণযোগ্য-টিপাইমুখ বাঁধ
বাংলাদেশের ক্ষতি হবে, এমন কোনো প্রকল্প টিপাইমুখে না করার আশ্বাস দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এ আশ্বাসের পর স্বাভাবিক আশা ছিল, ভারত টিপাইমুখে যা-ই করুক তা বাংলাদেশকে জানিয়ে করবে। ভারত সে পথ ধরেনি। বাংলাদেশকে অন্ধকারে রেখে টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে ফেলেছে। ফলে একদিকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে অভিন্ন নদীতে কোনো প্রকল্প করার ক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি মেনে চলতে হয়—দুটোই উপেক্ষিত হলো।
টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দেশেই পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এই প্রকল্প ক্ষতিকর হবে কি না বা কতটুকু ক্ষতিকর হবে, সমীক্ষার পর এর পুরো চিত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু ভারতের এই প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে, যা ভারত কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। অভিন্ন কোনো নদীতে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে নদীর পুরো অববাহিকার ওপর এর কী প্রভাব পড়বে সে নিয়ে যৌথ সমীক্ষা প্রয়োজন। এ ধরনের সমীক্ষা ও যৌথ অববাহিকার অন্য কোনো দেশের (টিপাইমুখের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের) উদ্বেগের বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে কোনো প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ নেই। অতএব, টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে গত ২২ অক্টোবর যে বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতির লঙ্ঘন। আর কূটনৈতিকভাবেও এই আচরণ সুপ্রতিবেশীসুলভ তো নয়ই। আমরা ভারতের এই আচরণ ও উদ্যোগের প্রতিবাদ জানাই।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এক নতুন মোড় নিয়েছে। যেকোনো দুটি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল যে বিষয়টি কাজ করে তা হচ্ছে পারস্পরিক স্বার্থ। বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এ স্বার্থরক্ষার কাজটি হয়ে থাকে। এটা সবারই জানা যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল নিরাপত্তা। ভারতের চাওয়া ছিল, সন্ত্রাসবাদ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশ সহায়তা করুক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের উদ্বেগ পুরো দূর করেছে। ভারতের আরেকটি চাওয়া হচ্ছে ট্রানজিট। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও অনানুষ্ঠানিক বা ‘পরীক্ষামূলক’ নামে তাও চালু হয়েছে। অন্যদিকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে অভিন্ন নদীর পানি বন্টন ছিল বাংলাদেশের দাবি। পানি পাওয়ার বিষয়টি যৌথ অববাহিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অধিকার। আমরা দেখেছি যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েও ভারত এখনও পর্যন্ত তা করেনি। এখন দেখা গেল, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও বাংলাদেশকে না জানিয়ে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণে ভারত আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে ফেলেছে। ভারতের একতরফা উদ্যোগটি দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার সুসম্পর্কের অন্তরায় বলে মনে করি।
আমরা আশা করব, ভারত টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এই একতরফা উদ্যোগ থেকে সরে আসবে। দুই দেশের যৌথ সমীক্ষা এবং বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এক নতুন মোড় নিয়েছে। যেকোনো দুটি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল যে বিষয়টি কাজ করে তা হচ্ছে পারস্পরিক স্বার্থ। বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এ স্বার্থরক্ষার কাজটি হয়ে থাকে। এটা সবারই জানা যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল নিরাপত্তা। ভারতের চাওয়া ছিল, সন্ত্রাসবাদ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশ সহায়তা করুক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের উদ্বেগ পুরো দূর করেছে। ভারতের আরেকটি চাওয়া হচ্ছে ট্রানজিট। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও অনানুষ্ঠানিক বা ‘পরীক্ষামূলক’ নামে তাও চালু হয়েছে। অন্যদিকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে অভিন্ন নদীর পানি বন্টন ছিল বাংলাদেশের দাবি। পানি পাওয়ার বিষয়টি যৌথ অববাহিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অধিকার। আমরা দেখেছি যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েও ভারত এখনও পর্যন্ত তা করেনি। এখন দেখা গেল, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও বাংলাদেশকে না জানিয়ে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণে ভারত আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে ফেলেছে। ভারতের একতরফা উদ্যোগটি দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার সুসম্পর্কের অন্তরায় বলে মনে করি।
আমরা আশা করব, ভারত টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এই একতরফা উদ্যোগ থেকে সরে আসবে। দুই দেশের যৌথ সমীক্ষা এবং বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকবে।
No comments