স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ ছাড়াই বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল! by রাহীদ এজাজ

টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষার জন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিনিধিদলে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ দলটিতে প্রাধান্য থাকছে সরকারি কর্মকর্তাদেরই। দেশের স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের ছাড়া সমীক্ষা হলে তার ফলাফল সর্বসাধারণের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।


পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গে সমীক্ষার জন্য বাংলাদেশের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গঠন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর প্রতিনিধিদল চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানান, যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) সদস্যকে আহ্বায়ক করে গঠিত দলটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্র্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধিদলের নামসহ একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে ভারতের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষার প্রস্তাবিত ওই প্রতিনিধিদলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী ও বর্তমান উপাচার্য আইনুন নিশাতের নাম নেই। এ ছাড়া এতে রাখা হয়নি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান কিংবা পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আতিক রহমানকে। তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে দেশের সেরা বিশেষজ্ঞ। আর নিবিড় অধ্যয়নের মাধ্যমে টিপাইমুখ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী লেখালেখির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন আকবর আলি খান।
সূত্র জানায়, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ও আইনুন নিশাতকে প্রতিনিধিদলে রাখার অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাকে চিঠি লেখেন।
যৌথ সমীক্ষায় ভারতের সাড়া: টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি সইয়ের সংবাদ প্রচারের পর বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এরপর গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও গওহর রিজভী বিষয়টি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই প্রকল্প নিয়ে যৌথ সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলোচনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি পানিসম্পদ ও বিদ্যুৎমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যৌথ সমীক্ষায় রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে।
১০ সদস্যের প্রস্তাবিত দল: ভারতের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের নামের তালিকা তৈরি করেছে। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পানিসম্পদ, হাইড্রোলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল, হাইড্রোলিক মডেলার, পরিবেশ, ভূমিকম্প, আর্থসামাজিক, কৃষি, মৎস্য চাষ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বাংলাদেশ পক্ষের যৌথ সমীক্ষা দল গঠন করা হয়েছে। এর আহ্বায়ক হচ্ছেন জেআরসির সদস্য। বর্তমানে জেআরসির সদস্যের দায়িত্বে আছেন মীর সাজ্জাদ হোসেন।
দলের সদস্যদের মধ্যে আছেন ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক এম এ কাশেম। প্রতিষ্ঠানটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন। তিনি বর্তমানে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটিতে আরও আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (পানিবিজ্ঞান), ওয়ারপোর পরিচালক (অর্থনীতিবিদ) মো. শাহজাহান, সিইজিআইএসের (সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস) উপনির্বাহী পরিচালক (মরফোলজিস্ট) মমিনুল হক সরকার, মৃত্তিকা ও কৃষি বিশেষজ্ঞ অনিল চন্দ্র আইচ, আইডব্লিউএমের (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং) জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ মো. সোহেল মাসুদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের (ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ) মুনাজ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দেওয়ান আলী। ওয়ারপো ছাড়াও সিইজিআইএস ও আইডব্লিউএম পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন বিষয়ে সমীক্ষার পর প্রকল্পের ফলে কী কী উপকার হতে পারে, কী ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং তা কীভাবে প্রশমন করা যায়—এ বিষয়ে অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করবে।
উপেক্ষিত অর্থমন্ত্রীর অনুরোধ: টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরূপ প্রভাব বিষয়টি এখন সিলেটে খুব আলোচিত। এ প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বছরের ২১ ডিসেম্বর পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও গওহর রিজভীকে চিঠি লেখেন। এতে তিনি সুপারিশ করেন, ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আইনুন নিশাত ১৯৭৪ সাল থেকে বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই তাঁকে এ দলে সম্পৃক্ত করা যায়। এ ছাড়া অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে রাখলেও ভালো হয়। তিনি মূলত কাছাড় এলাকার লোক এবং সেখানে বরাকের পানি সেচকাজে ব্যবহারের পক্ষে কিছু জনমত রয়েছে।’
অর্থমন্ত্রীর এ অনুরোধের পরও দুই বিশেষজ্ঞের কাউকে রাখা হয়নি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রতিনিধিদলে।

No comments

Powered by Blogger.