আওয়ামী লীগের জন্মকথা by শেখ মুজিবুর রহমান

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রাস্ট এবং দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে সদ্য প্রকাশিত তার 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থ থেকে এ দলটির জন্মলগ্নের সময়ের কথা এখানে তুলে ধরা হলো।


সে সময়ে তার বয়স ২৯ বছর এবং তাকে দলের জয়েন্ট
সেক্রেটারি নির্বাচিত করা হয়েছিল



কিছুদিন পূর্বে জনাব কামরুদ্দিন সাহেব 'গণআজাদী লীগ' নাম দিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন, কিন্তু তা কাগজপত্রেই শেষ। যা হোক, কোথায়ও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। শুধু কর্মীরা না, অনেক রাজনৈতিক নেতাও সেই সম্মেলনে যোগদান করেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আল্লামা মওলানা রাগীব আহসান, এমএলএদের ভিতর থেকে জনাব খয়রাত হোসেন, বেগম আনোয়ারা খাতুন, আলী আহমদ খান ও হাবিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া এবং বিভিন্ন জেলার অনেক প্রবীণ নেতাও যোগদান করেছিলেন। সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হল, 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'


কারাগারের যন্ত্রণা কি এইবারই বুঝতে পারলাম। সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিলেই আমার খারাপ লাগত। সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে সমস্ত কয়েদির কামরায় কামরায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দেওয়া হয় গণনা করার পর। আমি কয়েদিদের কাছে বসে তাদের জীবনের ইতিহাস ও সুখ-দুঃখের কথা শুনতে ভালবাসতাম। তখন কয়েদিদের বিড়ি তামাক খাওয়া আইনে নিষেধ ছিল। তবে রাজনৈতিক বন্দিদের নিষেধ ছিল না। নিজের টাকা দিয়ে কিনে এনে খেতে পারত। একটা বিড়ির জন্য কয়েদিরা পাগল হয়ে যেত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি কাউকে বিড়ি খেতে দেখত তাহলে তাদের বিচার হত এবং শাস্তি পেত। সিপাহিরা যদি কোনো সময় দয়াপরবশ হয়ে একটা বিড়ি বা সিগারেট দিত কতই না খুশি হত! আমি বিড়ি এনে এদের কিছু কিছু দিতাম। পালিয়ে পালিয়ে খেত কয়েদিরা।
কর্মী সম্মেলনের জন্য খুব তোড়জোড় চলছিল। আমরা জেলে বসেই সে খবর পাই। ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে অফিস হয়েছে। শওকত মিয়া সকলের খাওয়া ও থাকার বন্দোবস্ত করত। সে ছাড়া ঢাকা শহরে কেইবা করবে? আর একজন ঢাকার পুরানা লীগকর্মী ইয়ার মোহাম্মদ খান সহযোগিতা করছিলেন। ইয়ার মোহাম্মদ খানের অর্থবল ও জনবল দুইই ছিল। এডভোকেট আতাউর রহমান খান, আলী আমজাদ খান এবং আনোয়ারা খাতুন এমএলএ সহযোগিতা করছিলেন। আমরা সম্মেলনের ফলাফল সম্বন্ধে খুবই চিন্তায় দিন কাটাচ্ছিলাম। আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, আমার মত নেওয়ার জন্য। আমি খবর দিয়েছিলাম, "আর মুসলিম লীগের পিছনে ঘুরে লাভ নাই, এ প্রতিষ্ঠান এখন গণবিচ্ছিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এরা আমাদের মুসলিম লীগে নিতে চাইলেও যাওয়া উচিত হবে না। কারণ এরা কোটারি করে ফেলেছে। একে আর জনগণের প্রতিষ্ঠান বলা চলে না। এদের কোনো কর্মপন্থাও নাই।" আমাকে আরও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আমি ছাত্র প্রতিষ্ঠান করব, না রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন হলে তাতে যোগদান করব? আমি উত্তর পাঠিয়েছিলাম, ছাত্র রাজনীতি আমি আর করব না, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই করব। কারণ বিরোধী দল সৃষ্টি করতে না পারলে এ দেশে একনায়কত্ব চলবে।
কিছুদিন পূর্বে জনাব কামরুদ্দিন সাহেব 'গণআজাদী লীগ' নাম দিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন, কিন্তু তা কাগজপত্রেই শেষ। যা হোক, কোথায়ও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। শুধু কর্মীরা না, অনেক রাজনৈতিক নেতাও সেই সম্মেলনে যোগদান করেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আল্লামা মওলানা রাগীব আহসান, এমএলএদের ভিতর থেকে জনাব খয়রাত হোসেন, বেগম আনোয়ারা খাতুন, আলী আহমদ খান ও হাবিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া এবং বিভিন্ন জেলার অনেক প্রবীণ নেতাও যোগদান করেছিলেন। সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হল, 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হল জয়েন্ট সেক্রেটারি। খবরের কাগজে দেখলাম, আমার নামের পাশে লেখা আছে 'নিরাপত্তা বন্দি'। আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে, সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে। ভাবলাম, সময় এখনও আসে নাই, তাই যারা বাইরে আছে তারা চিন্তাভাবনা করেই করেছেন।
আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন হওয়ার কয়েকদিন পরেই আমার ও বাহাউদ্দিনের মুক্তির আদেশ এল। বাইরে থেকে আমার সহকর্মীরা নিশ্চয়ই খবর পেয়েছিল। জেলগেটে গিয়ে দেখি বিরাট জনতা আমাদের অভ্যর্থনা করার জন্য এসেছে মওলানা ভাসানী সাহেবের নেতৃত্বে। বাহাউদ্দিন আমাকে চুপি চুপি বলে, "মুজিব ভাই, পূর্বে মুক্তি পেলে একটা মালাও কেউ দিত না, আপনার সাথে মুক্তি পাচ্ছি, একটা মালা তো পাব।" আমি হেসে দিয়ে বললাম, "আর কেউ না দিলে তোমাকে আমি মালা পরিয়ে দিতাম।" জেলগেট থেকে বের হয়ে দেখি, আমার আব্বাও উপস্থিত। তিনি আমাকে দেখবার জন্য বাড়ি থেকে এসেছেন। আমি আব্বাকে সালাম করে ভাসানী সাহেবের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকেও সালাম করলাম। সাথে সাথে 'আওয়ামী মুসলিম লীগ জিন্দাবাদ, ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ' ধ্বনি উঠল। জেলগেটে এই প্রথম 'আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ' হল। শামসুল হক সাহেবকে কাছে পেয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানালাম এবং বললাম, "হক সাহেব, আপনার জয়, আজ জনগণের জয়।" হক সাহেব আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, "চল, এবার শুরু করা যাক।" পরে আওয়ামী মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়।
আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। জনাব আতাউর রহমান খান, আবদুস সালাম খান, আলী আহমদ খান, আলী আমজাদ খান ও আরও একজন কে ছিলেন আমার মনে নাই। আওয়ামী লীগের প্রথম ওয়ার্কিং কমিটির সভা হয় ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেব তাতে যোগদান করেছিলেন। একটা গঠনতন্ত্র সাব-কমিটি ও একটা কর্মপন্থা সাব-কমিটি করা হল। আমরা কাজ করা শুরু করলাম। শওকত মিয়া বিরাট সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিল। টেবিল, চেয়ার সকল কিছুই বন্দোবস্ত করল। আমি জেল থেকে বের হওয়ার পূর্বে একটা জনসভা আওয়ামী লীগ আরমানিটোলা ময়দানে ডেকেছিল। মওলানা ভাসানী সেই প্রথম ঢাকায় বক্তৃতা করবেন। শামসুল হক সাহেবকে ঢাকার জনগণ জানত। তিনি বক্তৃতাও ভাল করতেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ যাতে জনসভা না করতে পারে সে জন্য মুসলিম লীগ গুণ্ডামির আশ্রয় গ্রহণ করে। যথেষ্ট জনসমাগম হয়েছিল, সভা যখন আরম্ভ হবে ঠিক সেই মুহূর্তে একদল ভাড়াটিয়া লোক মাইক্রোফোন নষ্ট করে দিয়েছিল এবং প্যান্ডেল ভেঙে ফেলেছিল। অনেক কর্মীকে মারপিটও করেছিল। ঢাকার নামকরা ভীষণ প্রকৃতির লোক বড় বাদশা বাবুবাজারে (বাদামতলী ঘাট) থাকে। বড় বাদশার লোকবল ছিল, তার নামে দোহাই দিয়ে ফিরত এই সমস্ত এলাকায়। তাকে বোঝান হয়েছিল, আওয়ামী লীগ যারা করেছে এবং আওয়ামী লীগের সভা করছে তারা সবাই 'পাকিস্তান ধ্বংস করতে চায়'_ এদের সভা করতে দেওয়া চলবে না। বাদশা মিয়াকে লোকজন জোগাড় করে সভা ভাঙবার জন্য পাঁচশত টাকা দেওয়া হয়েছিল।
বাদশা মিয়া খুব ভাল বংশের থেকে এসেছে, কিন্তু দলে পড়ে এবং ঢাকার হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় শরিক হয়ে খারাপ রাস্তায় চলে গিয়েছিল। দাঙ্গা করে অনেক মামলার আসামিও হয়েছিল। সভায় গোলমাল করে সে চলে গেলে ঐ মহল্লার বাসিন্দা জনাব আরিফুর রহমান চৌধুরী তার কাছে গিয়ে বললেন, 'বাদশা মিয়া, আমাদের সভা একবার ভেঙে দিয়েছেন। আমরা আবার সব কিছু ঠিক করে সভা আরম্ভ করছি। আপনি আমাদের কথা প্রথমে শুনুন, যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বলি বা দেশের বিরুদ্ধে বলি তারপরে সভা ভাঙতে পারবেন।' চৌধুরী সাহেবের ব্যবহার ছিল অমায়িক। খেলাফত আন্দোলন থেকে রাজনীতি করছেন। দেশের রাজনীতি করতে সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বরিশালের উলানিয়ার জমিদারি বংশে। বাদশা মিয়া তার দলবল নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সভার বক্তৃতা শুনতে লাগল। কয়েকজন বক্তৃতা করার পরে বাদশা মিয়া প্লাটফর্মের কাছে এসে বলল, 'আমার কথা আছে, আমাকে বলতে দিতে হবে।' কে তাকে বাধা দেয়, বলতে গেলে আরমানিটোলা ময়দান তার রাজত্বের মধ্যে। বাদশা মিয়া মাইকের কাছে যেয়ে বলল, 'আমাকে মুসলিম লীগ নেতারা ভুল বুঝিয়েছিল আপনাদের বিরুদ্ধে। আপনাদের সভা ভাঙতে আমাকে পাঁচশত টাকা দিয়েছিল, এ টাকা এখনও আমার পকেটে আছে। আমার পক্ষে এ টাকা গ্রহণ করা হারাম। আমি এ টাকা আপনাদের সামনে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি।' এ কথা বলে টাকাগুলি (পাঁচ টাকার নোট) ছুড়ে দিল। সভার মধ্যে টাকাগুলি উড়তে লাগল। অনেকে কুড়িয়ে নিল এবং অনেকে ছিঁড়ে ফেলল। বাদশা মিয়া আরও বলল, 'আজ থেকে আমি আওয়ামী লীগের সভ্য হলাম, দেখি আরমানিটোলায় কে আপনাদের সভা ভাঙতে পারে?' জনসাধারণ ফুলের মালা বাদশা মিয়ার গলায় পরিয়ে দিল। জনগণের মধ্যে এক নতুন আলোড়নের সৃষ্টি হল। মুসলিম লীগ গুণ্ডামির প্রশ্রয় নিয়েছিল এ কথা ফাঁস হয়ে পড়ল। আওয়ামী লীগের সভা ভাঙতে টাকাও দিয়েছিল এ কথাও জনগণ জানতে পারল। যদিও এতে তাদের লজ্জা হয় নাই। এই গুণ্ডামির পথ অনেক দিন তারা অনুসরণ করেছে যে পর্যন্ত না আমরা বাধ্য করতে পেরেছি তাদের তা বন্ধ করতে। তারা ঠিক করেছিল, বিরুদ্ধ দল গঠন করতে দেওয়া হবে না। তারা যে জনসমর্থন হারাচ্ছে, কেন তার সংশোধন না করে তারা বিরুদ্ধ দলের উপর নির্যাতন শুরু করল এবং গুণ্ডামির আশ্রয় নিল?
আমি জেল থেকে বের হয়েছি, আব্বা আমার জন্য ঢাকায় এসেছেন, আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন। আমি আব্বাকে বললাম, 'আপনি বাড়ি যান, আমি সাত-আট দিনের মধ্যে আসছি।'
আমার টাকার দরকার, বাড়ি না গেলে টাকা পাওয়া যাবে না। বৃদ্ধা মা, আমার স্ত্রী ও মেয়েটিকে দেখতে ইচ্ছা করছিল। আমি ফরিদপুরের সালাম সাহেবকেও খবর দিলাম গোপালগঞ্জে একটা সভা করব, তিনি যেন উপস্থিত থাকেন। গোপালগঞ্জে আওয়ামী মুসলিম লীগ সংগঠন হয়ে গেছে। পুরানা মুসলিম লীগ কমিটিকেই আওয়ামী লীগ কমিটিতে পরিণত করে ফেলা হয়েছিল। কারণ, পাকিস্তান সরকার আমাদের বিরোধীদের দিয়ে একটা মহকুমা মুসলিম লীগ অর্গানাইজিং কমিটি গঠন করেছিল।
গোপালগঞ্জে খবর দিয়ে আমি বাড়িতে রওয়ানা করলাম। বোধহয় জুলাই মাসের মাঝামাঝি হবে, জনসভা ডাকা হয়েছিল। সালাম খান সাহেব উপস্থিত হলেন, আমিও বাড়ি থেকে আসলাম। সভায় হাজার হাজার জনসমাগম হয়েছিল। হঠাৎ সকালবেলা ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আমরা সভা মসজিদ প্রাঙ্গণে করব ঠিক করলাম। তাতে যদি ১৪৪ ধারা ভাঙতে হয়, হবে। বিরাট মসজিদ এবং সামনে কয়েক হাজার লোক ধরবে। সালাম সাহেবও রাজি হলেন। আমরা যখন সভা শুরু করলাম, তখন এসডিও মসজিদে ঢুকে মসজিদের ভিতর ১৪৪ ধারা জারি করলেন। আমরা মানতে আপত্তি করলাম, পুলিশ মসজিদে ঢুকলে মারপিট শুরু হল। পুলিশ লাঠিচার্জ করল এবং দুই পক্ষেই কিছু আহত হল। আমি ও সালাম সাহেব সভাস্থান ত্যাগ করতে আপত্তি করলাম। আমাদের গ্রেফতার করা হল। জনসাধারণও মসজিদ ঘিরে রাখল। গুলি করা ছাড়া আমাদের কোর্টে বা থানায় নেওয়া সম্ভবপর হবে না, পুলিশ অফিসার বুঝতে পারল। যতদূর জানা গিয়েছিল, পুলিশ কর্মচারীরা মসজিদের ভিতর ১৪৪ ধারা জারি করতে রাজি ছিল না। এসডিও সাহেব জোর করেই করেছিলেন। মহকুমা পুলিশ অফিসার যখন বুঝতে পারলেন অবস্থা খুবই খারাপ, গোলমাল হবেই, জনসাধারণ রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে, তখন আমার ও সালাম সাহেবের কাছে এসে অনুরোধ করলেন, 'গোলমাল হলে অনেক লোক মারা যাবে। আপনারা তো এখনই জামিন পেয়ে যাবেন, এদের বলে দেন চলে যেতে এবং রাস্তা ছেড়ে দিতে। আমরা আপনাদের কোর্টে নিয়ে যাব এবং এখনই জামিন দিয়ে দেব।'
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, বহুদূর থেকে লোকজন এসেছে। বৃষ্টি হচ্ছে, সন্ধ্যার অন্ধকারে কি হয় বলা যায় না। জনসাধারণের হাতেও অনেক লাঠি ও নৌকার বৈঠা আছে। মহকুমা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিশেষ করে আমাকে বক্তৃতা করে লোকজনকে বোঝাতে বললেন। সালাম সাহেব ও গোপালগঞ্জ মহকুমার নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক হল আমি বক্তৃতা করে লোকদের চলে যেতে বলব। আমি বক্তৃতা করলাম, বলার যা ছিল সবই বললাম এবং রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলাম। মসজিদ থেকে কোর্ট তিন মিনিটের রাস্তা মাত্র। পুলিশ ও আমরা কয়েক ঘণ্টা আটক আছি। জনসাধারণ শেষ পর্যন্ত আমাদের রাস্তা দিল। আমাদের সাথেই জিন্দাবাদ দিতে দিতে কোর্টে এল। রাত আট ঘটিকার সময় আমাদের জামিন দিয়ে ছেড়ে দেয়া হল। তারপর জনগণ চলে গেল। এটা আমাদের আওয়ামী লীগের মফস্বলের প্রথম সভা এবং সে উপলক্ষে ১৪৪
ধারা জারি।

No comments

Powered by Blogger.