বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৪৩৪ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। শহীদ আবুল হোসেন বীর প্রতীক হাসনাবাদে শহীদ হন তিনি আবুল হোসেন (আবুল হাশেম) চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে ঢাকার পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে ঢাকা সেক্টরের অধীনে সিগন্যালম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পিলখানাতে ইপিআরের ১৩, ১৫, ১৬ উইং, হেডকোয়ার্টার উইং এবং সিগন্যাল উইংয়ের অবস্থান ছিল। সব মিলিয়ে ইপিআর সদস্য ছিলেন প্রায় ২৫০০। ২৫ মার্চ রাত ১২টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্ট তাঁদের আক্রমণ করে। এতে অনেক ইপিআর সদস্য শহীদ হন। কিছু পালাতে সমর্থ হন। বাকিরা বন্দী হন।
আবুল হোসেন পিলখানা থেকে পালাতে সমর্থ হন। এরপর তিনি বুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে মুন্সিগঞ্জ হয়ে নিজ এলাকায় যান। সেখানে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর তিনি দুই নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। পরে যুদ্ধ করেন নির্ভয়পুর সাব-সেক্টরে।
১৯৭১ সালের ২৮ আগস্ট হাসনাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক গেরিলা যুদ্ধে মো. আবুল হোসেন শহীদ হন। হাসনাবাদ চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত।
আবুল হোসেন একটি গেরিলা দলের সঙ্গে ছিলেন। এই দলের অবস্থান ছিল হাজীগঞ্জে। দলনেতা ছিলেন জহিরুল হক পাঠান। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন হাসনাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অ্যাম্বুশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। একটি উপদলে ছিলেন আবুল হোসেন। ২৮ আগস্ট ভোরে তাঁরা হাসনাবাদ বাজারের কাছে গোপনে অবস্থান নেন।
সকাল নয়টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থানের দিকে এগিয়ে আসছে। একটু পর তাঁরা মানুষের চিৎকার ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। তখন মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক হয়ে যান।
এর ৮-১০ মিনিটের মধ্যেই গুলি ছুড়তে ছুড়তে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ভেতর ঢুকে পড়ে। তাদের সঙ্গে ছিল অনেক রাজাকার। ৪০-৫০ গজের মধ্যে আসামাত্র গর্জে উঠল সব মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে শুরু হলো প্রচণ্ড আক্রমণ।
মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা। তারা না পারছে পজিশন নিতে, না পারছে গুলি করতে। কারণ তারা এসেছে নৌকায়। ১০-১২টি নৌকা। ৫-৭ মিনিট মুক্তিযোদ্ধারা একতরফা আক্রমণ চালালেন। নৌকায় শুধু চিৎকার ও কান্নার শব্দ।
এরপর পাকিস্তানিরা পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। পাকিস্তানিদের দূরবর্তী অবস্থান থেকেও গোলা এসে সেখানে পড়তে থাকল। তারা খবর পেয়ে গোলাবর্ষণ করে।
মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখলেন। আবুল হোসেনও সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শহীদ হন। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার মিলে ৯-১০ জন নিহত ও অনেকে আহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ আবুল হোসেনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৬৩। গেজেটে নাম আবুল হাশেম। কিন্তু তাঁর প্রকৃত নাম আবুল হোসেন। ২০০৪ সালে এই নাম সংশোধন করা হয়েছে।
আবুল হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড়া গ্রামে। অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবার নাম আবু বকর। মা ফাতেমা বেগম।
শহীদ আবুল হোসেনের ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ২ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মো. আবদুল হান্নান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
আবুল হোসেন পিলখানা থেকে পালাতে সমর্থ হন। এরপর তিনি বুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে মুন্সিগঞ্জ হয়ে নিজ এলাকায় যান। সেখানে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর তিনি দুই নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। পরে যুদ্ধ করেন নির্ভয়পুর সাব-সেক্টরে।
১৯৭১ সালের ২৮ আগস্ট হাসনাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক গেরিলা যুদ্ধে মো. আবুল হোসেন শহীদ হন। হাসনাবাদ চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত।
আবুল হোসেন একটি গেরিলা দলের সঙ্গে ছিলেন। এই দলের অবস্থান ছিল হাজীগঞ্জে। দলনেতা ছিলেন জহিরুল হক পাঠান। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন হাসনাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অ্যাম্বুশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। একটি উপদলে ছিলেন আবুল হোসেন। ২৮ আগস্ট ভোরে তাঁরা হাসনাবাদ বাজারের কাছে গোপনে অবস্থান নেন।
সকাল নয়টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থানের দিকে এগিয়ে আসছে। একটু পর তাঁরা মানুষের চিৎকার ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। তখন মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক হয়ে যান।
এর ৮-১০ মিনিটের মধ্যেই গুলি ছুড়তে ছুড়তে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ভেতর ঢুকে পড়ে। তাদের সঙ্গে ছিল অনেক রাজাকার। ৪০-৫০ গজের মধ্যে আসামাত্র গর্জে উঠল সব মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে শুরু হলো প্রচণ্ড আক্রমণ।
মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা। তারা না পারছে পজিশন নিতে, না পারছে গুলি করতে। কারণ তারা এসেছে নৌকায়। ১০-১২টি নৌকা। ৫-৭ মিনিট মুক্তিযোদ্ধারা একতরফা আক্রমণ চালালেন। নৌকায় শুধু চিৎকার ও কান্নার শব্দ।
এরপর পাকিস্তানিরা পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। পাকিস্তানিদের দূরবর্তী অবস্থান থেকেও গোলা এসে সেখানে পড়তে থাকল। তারা খবর পেয়ে গোলাবর্ষণ করে।
মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখলেন। আবুল হোসেনও সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শহীদ হন। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার মিলে ৯-১০ জন নিহত ও অনেকে আহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ আবুল হোসেনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৬৩। গেজেটে নাম আবুল হাশেম। কিন্তু তাঁর প্রকৃত নাম আবুল হোসেন। ২০০৪ সালে এই নাম সংশোধন করা হয়েছে।
আবুল হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড়া গ্রামে। অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবার নাম আবু বকর। মা ফাতেমা বেগম।
শহীদ আবুল হোসেনের ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ২ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মো. আবদুল হান্নান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments