রাজনীতি ও তৃতীয় শক্তি-গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই

কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি- সর্বত্রই এখন এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একদিকে সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। অন্যদিকে বিরোধী দল সংসদ বর্জন করে আন্দোলনের নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। বিরোধী দলের সবচেয়ে বড় দাবি এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অন্যদিকে সরকার চাইছে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন।


নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে নির্বাচিত সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে- এ কথাটি বারবার বলতে চাইছে সরকার। সরকারের এই তত্ত্ব বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বিরোধী দল এক দাবিতে অনড়।
উভয়পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে কথা চালাচালি চলছে। সরকার নিজের পক্ষে যেমন যুক্তি উপস্থাপন করছে, তেমনি বিরোধী দলও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরতে কার্পণ্য করছে না। সরকার ও বিরোধী দলের এই রাজনৈতিক বাহাস কেবল মাঠের রাজনীতিকেই প্রভাবিত করছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা নেতারা সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। অন্যদিকে বিরোধী দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন। বিষয়টি নিয়ে মূলত যেখানে কথা বলা প্রয়োজন, যেখানে কথা বললে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে, সেই সংসদই থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত। বিরোধী দল সংসদ বর্জন করে চলেছে। ফলে সংসদে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। সরকার কিছুটা হলেও নিজের অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগে তত্ত্বাবধায়কের পরিবর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছে। তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন- সরকারের ধরন যেটাই হোক না কেন, সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে হবে সংসদে। সংসদকে উপেক্ষা করে কিছুই করা যাবে না।
কিন্তু সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান এখন যেমনটি আছে, তাতে সংসদে গেলেই যে সমস্যাটির সমাধান হয়ে যাবে- তা নয়। আগে উভয় পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে হবে। আর এই সমঝোতার পূর্বশর্ত হচ্ছে সংলাপ। আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা এই যে সরকার ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্বের স্বাভাবিক সৌজন্য বিনিময় দূরে থাক, মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। এর প্রভাব দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেমন পড়ে, তেমনি প্রভাবিত হয় রাজনৈতিক অঙ্গন। ফলে দেখা দেয় অস্থিতিশীলতা। অনিবার্য হয়ে ওঠে সংঘাত, যা কখনো কাম্য নয়। সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান যখন মুখোমুখি ও সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে, তখন নিকট-অতীতের বাস্তবতায় একটি তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের বিষয়টিও চলে আসে আলোচনায়। বিগত সময়ে আমরা এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির অনিবার্য পরিণতিতে একটি তৃতীয় শক্তিকে সরকার পরিচালনা করতে দেখেছি। কিন্তু সেই সময়ও ওই সরকারটি সাংবিধানিক ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই অমন অরাজনৈতিক তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব আমাদের দেশের রাজনীতির জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সম্প্রতি এক আলোচনায় রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু অরাজনৈতিক তৃতীয় শক্তিকে প্রতিরোধের কথা বলেছেন।
সময়ের পরিক্রমায় দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি আবির্ভূত হতেই পারে। কিন্তু একটি অরাজনৈতিক শক্তিকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যায় না। আমরা চাই এ দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকুক এবং বিকশিত হোক। এ কথা তো সত্যি যে রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক শক্তি দেশের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.