প্রকৃতি-আম জাতীয়বৃক্ষের স্বীকৃতি পেল by মোকারম হোসেন
নিঃসন্দেহে ভালোলাগার মতো একটি সংবাদ। এত দিনে আমাদের জাতীয় বৃক্ষের স্বীকৃতি মিলেছে। আম এখন আমাদের জাতীয় বৃক্ষ। কিন্তু মাত্র দুই দিন আগেও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছিলেন না আমাদের জাতীয় বৃক্ষের নাম। আগে গাছপালা নিয়ে লেখালেখি করতে গিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক খুঁজেও এর কোনো সন্ধান পাইনি। সেখানে অন্যান্য জাতীয় প্রতীকের নাম থাকলেও বৃক্ষ অনুপস্থিত। সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথাও বলি, কিন্তু কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারেন না। তবে অনেকেই বলেছেন, বট আমাদের জাতীয় বৃক্ষ। কিন্তু তথ্য-প্রমাণে এর সত্যাসত্য যাচাই করা সম্ভব হয় না। ওয়েবসাইটে খুঁজে দেখি, বট ভারতের জাতীয় বৃক্ষ। মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারছিলাম না, এমন একটি সবুজ শ্যামল দেশের জাতীয় বৃক্ষ থাকবে না বা থাকলেও এর পরিচয় কেউ জানবে না, তা হতে পারে না। তখনই এ বিষয়ে লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এ বছরের ৪ মার্চ ‘জাতীয় বৃক্ষ, পুষ্প উৎসব ও অন্যান্য’ শিরোনামে প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয় বিভাগে লেখাটি প্রকাশিত হয়। সেখানে শাল বা গজারিগাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব রাখি। কারণ হিসেবে বলেছি, ‘শালকে জাতীয় বৃক্ষ করা হলে দুটি কাজ হবে। প্রথমত, শাল সম্পর্কে মানুষ নতুন করে জানতে আগ্রহী হবে। দ্বিতীয়ত, গাছটি কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।’ একসময় ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ অবধি শালবনের বিস্তৃতি ছিল। মধুপুরসহ সমগ্র লালমাটি অঞ্চলই ছিল শালবৃক্ষে আবৃত। আমাদের বর্বরতার কারণে সমগ্র শালবন এখন প্রায় নিঃশেষিত। তারপর অনেকেই এ বিষয়ে উৎসাহী হয়েছেন। কেউ কেউ চিঠি লিখেছেন, ব্যক্তিগতভাবে ফোনে যোগাযোগ করেছেন। সবাই চেয়েছেন অতি দ্রুত যেন জাতীয় বৃক্ষ সমস্যার সমাধান করা হয়। সবার আগ্রহের সঙ্গে আমাদের আন্তরিকতার সংযোগ ঘটে। ফলে এ বিষয়ে কর্মতৎপরতাও বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক সংগঠন তরুপল্লবের সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার যৌথ স্বাক্ষরে একটি চিঠি গত ১৬ মে, ২০১০ তারিখে পরিবেশ ও বনসচিবের বরাবরে সরাসরি পাঠানো হয়। আমি নিজেই চিঠির বাহক। চিঠিতে আসন্ন জাতীয় বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয় বৃক্ষ শনাক্তকরণ ও এর প্রচারণা চালানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়। চিঠির অনুলিপি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও প্রধান বন সংরক্ষককেও পাঠানো হয়।
১৫ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘আজ জাতীয় বৃক্ষ নির্ধারণ করবে মন্ত্রিসভা’ শিরোনামের সংবাদটি পড়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠি। সেখানে কদম, তাল, হিজল, পলাশ, আম ও শিমুলগাছকে জাতীয় বৃক্ষের প্রস্তাবনায় রাখা হয়। কিন্তু আমাদের প্রস্তাবিত শালগাছ সেখানে রাখা হয়নি। সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ‘২৭ সেপ্টেম্বর অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সভা করে। ওই সভায় কদম, তাল, হিজল ও পলাশের নাম প্রস্তাব হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।’ কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ-সম্পর্কিত একটি সভায়ও আমাদের কাউকে ডাকা হয়নি।
সব গাছই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সে হিসেবে আমও আমাদের প্রিয় তরু। কিন্তু আমগাছ শুধু ফলের কারণেই আমাদের কাছে সুপরিচিত। যেহেতু আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল স্বীকৃত, সেহেতু আরেকটি ফলের গাছকে জাতীয় বৃক্ষ ঘোষণা কতটা যুক্তিযুক্ত? এ ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবেচনার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। হতে পারত কোনো ছায়াবৃক্ষ, বিশেষ বৃক্ষ কিংবা পুষ্পবৃক্ষ। আমাদের প্রকৃতির সুসামঞ্জস্য তৈরিতে এসব গাছের অবদান কোনো অংশে কম নয়। জাতীয় বৃক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরেকটু নির্লোভ হওয়া মনে হয় সমীচীন ছিল। কারণ আম মানেই ফল ভোগ করার একটা ব্যাপার আছে। আমরা মনে হয় আমগাছকে নয়, শুধু আমকেই ভালোবাসি। আমাদের সব দর্শনই কি ভোগবাদী? সব আকাঙ্ক্ষার মানেই কি ভোগ? আম খাওয়া শেষ হওয়ার পর সারা বছর কি আমরা একবারও আমগাছের দিকে তাকাই? তাহলে আমগাছ নিয়ে কেন এত মায়াকান্না? হিজল, বরুণ, কদম কিংবা শিমুল কি আমাদের আপন বৃক্ষ নয়?
এ বছরের ৪ মার্চ ‘জাতীয় বৃক্ষ, পুষ্প উৎসব ও অন্যান্য’ শিরোনামে প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয় বিভাগে লেখাটি প্রকাশিত হয়। সেখানে শাল বা গজারিগাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব রাখি। কারণ হিসেবে বলেছি, ‘শালকে জাতীয় বৃক্ষ করা হলে দুটি কাজ হবে। প্রথমত, শাল সম্পর্কে মানুষ নতুন করে জানতে আগ্রহী হবে। দ্বিতীয়ত, গাছটি কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।’ একসময় ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ অবধি শালবনের বিস্তৃতি ছিল। মধুপুরসহ সমগ্র লালমাটি অঞ্চলই ছিল শালবৃক্ষে আবৃত। আমাদের বর্বরতার কারণে সমগ্র শালবন এখন প্রায় নিঃশেষিত। তারপর অনেকেই এ বিষয়ে উৎসাহী হয়েছেন। কেউ কেউ চিঠি লিখেছেন, ব্যক্তিগতভাবে ফোনে যোগাযোগ করেছেন। সবাই চেয়েছেন অতি দ্রুত যেন জাতীয় বৃক্ষ সমস্যার সমাধান করা হয়। সবার আগ্রহের সঙ্গে আমাদের আন্তরিকতার সংযোগ ঘটে। ফলে এ বিষয়ে কর্মতৎপরতাও বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক সংগঠন তরুপল্লবের সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার যৌথ স্বাক্ষরে একটি চিঠি গত ১৬ মে, ২০১০ তারিখে পরিবেশ ও বনসচিবের বরাবরে সরাসরি পাঠানো হয়। আমি নিজেই চিঠির বাহক। চিঠিতে আসন্ন জাতীয় বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয় বৃক্ষ শনাক্তকরণ ও এর প্রচারণা চালানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়। চিঠির অনুলিপি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও প্রধান বন সংরক্ষককেও পাঠানো হয়।
১৫ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘আজ জাতীয় বৃক্ষ নির্ধারণ করবে মন্ত্রিসভা’ শিরোনামের সংবাদটি পড়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠি। সেখানে কদম, তাল, হিজল, পলাশ, আম ও শিমুলগাছকে জাতীয় বৃক্ষের প্রস্তাবনায় রাখা হয়। কিন্তু আমাদের প্রস্তাবিত শালগাছ সেখানে রাখা হয়নি। সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ‘২৭ সেপ্টেম্বর অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সভা করে। ওই সভায় কদম, তাল, হিজল ও পলাশের নাম প্রস্তাব হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।’ কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ-সম্পর্কিত একটি সভায়ও আমাদের কাউকে ডাকা হয়নি।
সব গাছই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সে হিসেবে আমও আমাদের প্রিয় তরু। কিন্তু আমগাছ শুধু ফলের কারণেই আমাদের কাছে সুপরিচিত। যেহেতু আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল স্বীকৃত, সেহেতু আরেকটি ফলের গাছকে জাতীয় বৃক্ষ ঘোষণা কতটা যুক্তিযুক্ত? এ ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবেচনার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। হতে পারত কোনো ছায়াবৃক্ষ, বিশেষ বৃক্ষ কিংবা পুষ্পবৃক্ষ। আমাদের প্রকৃতির সুসামঞ্জস্য তৈরিতে এসব গাছের অবদান কোনো অংশে কম নয়। জাতীয় বৃক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরেকটু নির্লোভ হওয়া মনে হয় সমীচীন ছিল। কারণ আম মানেই ফল ভোগ করার একটা ব্যাপার আছে। আমরা মনে হয় আমগাছকে নয়, শুধু আমকেই ভালোবাসি। আমাদের সব দর্শনই কি ভোগবাদী? সব আকাঙ্ক্ষার মানেই কি ভোগ? আম খাওয়া শেষ হওয়ার পর সারা বছর কি আমরা একবারও আমগাছের দিকে তাকাই? তাহলে আমগাছ নিয়ে কেন এত মায়াকান্না? হিজল, বরুণ, কদম কিংবা শিমুল কি আমাদের আপন বৃক্ষ নয়?
No comments