জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি-স্যারের কথা by মযহারুল ইসলাম বাবলা

পেশায় শিক্ষাবিদ-অঙ্গীকারে লেখক। অবসরপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের জনপ্রিয় শিক্ষক এবং বর্তমানে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কেবল ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্যার ছিলেন না। তিনি সর্বস্তরের সব বয়সীর স্যার বা ঝরপ ঝরৎ হিসেবে অধিক ছিলেন না। লেখক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।


প্রবন্ধের মতো বিরস সাহিত্যও যে জনপ্রিয়-সুখপাঠ্য হতে পারে : তার নমুনা লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর রচনাগুলো। দেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয় থেকে রাষ্ট্র, সমাজ, সরকার, ইতিহাস, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি- প্রতিটি বিষয়ে তাঁর বিশ্লেষণধর্মী রচনা পাঠকদের চিন্তা-চেতনাকে শাণিত করে আসছে। কেবল সমাজ ও রাষ্ট্রের সমস্যার কথা নয়, সমাধানের বা মুক্তির উপায়ও তাঁর রচনায় অধিক গুরুত্বে প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের চিন্তা ও মনোজগৎটিকে বিকশিত ও শাণিত করার ক্ষেত্রে তিনি নিরলসভাবে লিখে যাচ্ছেন। প্রবন্ধ সাহিত্যে অসামান্য পাঠকপ্রিয়তা তিনি অর্জন করতে পেরেছেন। অসাম্য-বৈষম্যের অন্তর্নিহিত কারণগুলো পাঠকের কাছে উপস্থাপন করে পাঠককে সাম্যের পথের দিশা দেখিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করছেন নতুন ভাবনায়।
সত্তরের দশকের বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিকে নিয়মিত কলাম লিখতেন। স্যারের কলামগুলো এতই জনপ্রিয় ছিল যে তাঁর কলামের কারণেই ওই সব পত্রিকার কাটতি-বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। প্রবন্ধ সাহিত্যের সনাতনী ভাষা-ঢং বদলে তিনি নিজস্ব ভাষা-ঢঙের বলয় সৃষ্টি করেছেন, যা পাঠকের কাছে গল্প বলার মতো অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং সাবলীল। স্যারের প্রবন্ধ পাঠে ভারাক্রান্ত হওয়ার বিপরীতে রীতিমতো পাঠে উদ্বুদ্ধর কারণেই স্যারের প্রবন্ধের বিশাল পাঠক সৃষ্টি হয়েছে। লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দেশ-জাতির প্রতি সব সময় দায়বদ্ধ থেকেছেন। দেশ-জাতির সব ক্রান্তিলগ্নে প্রতিবাদীর প্রথম কাতারে তিনি দাঁড়িয়েছেন।
আজীবন তিনি মেরুদণ্ড সোজা রেখেই চলেছেন। আত্মসমর্পণ করেননি। কোনো প্রলোভনে নিজেকে বিকিয়েও দেননি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদের নানা লোভনীয় প্রস্তাব দৃঢ়তায় প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে তাঁর অনড় অবস্থানের দৃষ্টান্ত রেখেছেন। আদর্শের প্রশ্নে শত প্রলোভনও স্যারকে টলাতে পারেনি।
পেশায় অবসর নিয়েও স্যারের ব্যস্ততা কমেনি, বরং বেড়েছে। নিয়মিত পড়াশোনা-লেখালেখি ছাড়াও ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত পত্রিকার পরিশ্রমী সম্পাদনায় ব্যস্ত থাকেন। সভা, সমাবেশ, জাতীয় ইস্যুতে ভূমিকা রাখতে নানা কর্মকাণ্ডেও ব্যস্ত থাকতে হয়।
আজ ২৩ জুন, ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। এই ২৩ জুন আমাদের পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রিয় ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জন্মদিন। স্যারের জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের কোনো পূর্ব নজির নেই। তবে স্যারের বাসায় জন্মদিনে দলে দলে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানানোর পথটি স্যার বন্ধ করতে পারেননি। এটুকু মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেই এদিনে স্যারের বাসায় দলে দলে গিয়ে জন্মদিনের শ্রদ্ধা-শুভেচ্ছা তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী, সতীর্থ, শিষ্যরা জানানোর সুযোগ পেয়েছেন।
আমাদের মেধা-মননের উৎকর্ষ সাধনে স্যারের অবদান অপরিসীম। অন্ধকার থেকে আলোর দিকনির্দেশনা দিয়ে আমাদের সঠিক ও সাম্যের পথে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। স্যারের জন্মদিনে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর অফুরন্ত ভালোবাসা।
মযহারুল ইসলাম বাবলা

No comments

Powered by Blogger.