বিএনপিতে ভাঙনের সুর! by আবদুল্লাহ আল ফারুক ও শফিক সাফি
প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে ভাঙনের সুর উঠেছে। এ নিয়ে দলটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলের কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিল, কেন্দ্রীয় কমিটি, এমনকি ঢাকা মহানগর কমিটির কয়েকজন নেতাকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।
সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতার গুলশান অফিসের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তাকেও। বিষয়টি শুধু দলের উচ্চ মহলে নয়, কর্মীপর্যায়েও কানাঘুষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে দল ভাঙার এই আশঙ্কার কথা ব্যক্তও করা হচ্ছে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা অকপটে স্বীকারও করেছেন বিষয়টি।
তাঁদের মতে, ওই সন্দেহভাজন নেতারা মাঝেমধ্যে সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সরকারও তাঁদেরকে অন্য নেতাদের মতো হয়রানি ও ধরপাকড় না করে নিরাপদে রেখেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখনই জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন, তখনই ওই নেতারা অতিমাত্রায় সক্রিয় হচ্ছেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ১১ জুনের পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে খালেদা জিয়া তাঁদের বলেন, 'কে কী করছে, আর কী করার চেষ্টা করছে, তা কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারছি। দলে কিছু পরিবর্তন আসছে। কিছু পরিবর্তন ধীরে ধীরে হবে।'
সূত্র মতে, খালেদা জিয়া দল ভাঙার চেষ্টায় জড়িত নেতাদের ইঙ্গিত করেই এসব উক্তি করেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা সম্প্রতি জেলে গেলে সন্দেহভাজন নেতারা যে টেলিভিশন টক শোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরব উপস্থিতির মতো নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠেন, খালেদা জিয়া সেটাও তখন সাক্ষাৎপ্রার্থী নেতাদের কাছে তুলে ধরেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত দুটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। এক. বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের কয়েকজন নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়, সে ক্ষেত্রে দল ভাঙার চেষ্টারত নেতাদের নিয়ে 'তৃণমূল বিএনপি' নামে একটি দল গঠন করা হতে পারে। সেই দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী দুজন সদস্য, দুই থেকে তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন উপদেষ্টাসহ নির্বাহী কমিটির কয়েকজন নেতা থাকতে পারেন। অনেকে সুনির্দিষ্ট করেই বলছেন, বিএনপির যেসব নেতা ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে গোপনে আঁতাত করছেন, তাঁরা দল ভেঙে 'তৃণমূল বিএনপি' নামে নতুন প্লাটফরম গড়ার কথাই ভাবছেন। আর দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে- আবারও 'এক-এগারো'র মতো কিছু ঘটলে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেতাদের কয়েকজন কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁদের ধারণা, জামায়াতে ইসলামীর কিছু নেতাও এ ধরনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। কারাগারের বাইরে থাকা ও সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া এক নেতাকে ইঙ্গিত করে তাঁরা জানান, সম্ভবত কারাগারেই এ বিষয়ে একটি ফয়সালা হয়ে থাকতে পারে।
গত শনিবার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির সদ্য কারামুক্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাসসহ নেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ওই দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছে, কিন্তু তা সফল হবে না। উল্টো এ ষড়যন্ত্রের কারণে দল ও জোট আরো সুসংহত ও সমপ্রসারিত হবে।
নেতারা যা বলেন : মির্জা ফখরুল তাঁর ওই বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে বিএনপিকে ভাঙার। তারা প্রথম থেকেই এ প্রক্রিয়া চালিয়েছে এবং তা অব্যাহত রেখেছে।
দলের আরেক নেতা লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব যেহেতু বলেছেন, নিশ্চয়ই তার কোনো কারণ আছে। তিনি বলেন, নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জেলে ঢোকানো হচ্ছে। সেখানে তাঁদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তারপর তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি আদায় করে জামিন দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, নাজমুল হুদার মতো যাঁরা দলের ছিলেন না, নিজেই মাফ চেয়ে দলে ফিরেছেন আবার নিজেই পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের মতো চরিত্র থেকে বিএনপিকে সাবধান থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে তাঁরাই দলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি করে বসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, 'এই সরকার ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের কাছ থেকে কিছু ঐতিহ্য পেয়েছে। তা হলো দল ভাঙা। বিএনপিকে ভাঙার প্রক্রিয়া চলছে, এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমি দিতে পারব না। তবে বলতে পারি, সে চেষ্টা চলছে। তার প্রমাণ, নাজমুল হুদার মতো কিছু নেতাকে দিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু বক্তব্য দেওয়ানো। তবে শেষ কথা হচ্ছে, বিএনপিকে সরকারের এ অপচেষ্টা থেকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।'
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তরিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দল ভাঙার চেষ্টা আছে বলে জানা নেই। তবে ষড়যন্ত্র করা হলে তা সফল হবে না।
জানা গেছে, বিএনপিতে এক-এগারোর আতঙ্ক এখনো রয়েছে। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, এক-এগারোর ষড়যন্ত্র দলের যে ক্ষতি করেছে তা আজও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ওই সময় সেনা সমর্থিত সরকার বিএনপিকে ভেঙে 'ডামি বিএনপি' গড়তে চেয়েছিল। এবার নতুন নীল নকশা নিয়ে সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকারের একটি মহল এ কাজ করছে।
কারা জড়িত : বিএনপির নীতি-নির্ধারক থেকে শুরু করে কর্মী পর্যায়েও 'তৃণমূল বিএনপি' গঠনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কানাঘুষা চলছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কিছু নামও তাঁরা উচ্চারণ করছেন। তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টিও রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগরীর কারো কারো নামও আসছে। তাঁদের অনেকে আছেন, যাঁরা বারবার দল বদলান। সুবিধাবাদী কিছু নেতাও আছেন। তাঁদের সঙ্গে থাকতে পারেন তাঁরাই, যাঁরা দল থেকে আশাতীত সুবিধা পেয়েছেন। সেই সঙ্গে সংস্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত যেসব নেতা এখনো দলে ঠাঁই পাননি, তাঁদেরও কেউ কেউ থাকতে পারেন।
সরাসরি প্রথমেই যে নামটি আসছে, তিনি হলেন দলের সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। সদ্য পদত্যাগকারী এই নেতা কারো কারো সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন বলেও বিএনপির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। জানা গেছে, নাজমুল হুদা দলের বাইরে ১৮ দলীয় জোটেরও কারো কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নতুন দল গঠন সম্পর্কে বুধবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্যই আমি কিছু করব। আমার একটি দলীয় কাঠামো আছে। আমি বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সারা দেশে এর ৩১৫টি শাখা আছে। প্রতি শাখায় ১৫ জন করে হলেও অনেক লোক। দেশ ও মানুষের জন্য এটাকে কাজে লাগাতে পারি। চিন্তা করছি সংস্থার একটি বিশেষ অধিবেশন করার।'
তিনি বলেন, 'আমি একটি দলকে নয়, দুই দলকেই সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ দেশ সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনাও আছে।'
তাঁদের মতে, ওই সন্দেহভাজন নেতারা মাঝেমধ্যে সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সরকারও তাঁদেরকে অন্য নেতাদের মতো হয়রানি ও ধরপাকড় না করে নিরাপদে রেখেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখনই জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন, তখনই ওই নেতারা অতিমাত্রায় সক্রিয় হচ্ছেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ১১ জুনের পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে খালেদা জিয়া তাঁদের বলেন, 'কে কী করছে, আর কী করার চেষ্টা করছে, তা কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারছি। দলে কিছু পরিবর্তন আসছে। কিছু পরিবর্তন ধীরে ধীরে হবে।'
সূত্র মতে, খালেদা জিয়া দল ভাঙার চেষ্টায় জড়িত নেতাদের ইঙ্গিত করেই এসব উক্তি করেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা সম্প্রতি জেলে গেলে সন্দেহভাজন নেতারা যে টেলিভিশন টক শোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরব উপস্থিতির মতো নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠেন, খালেদা জিয়া সেটাও তখন সাক্ষাৎপ্রার্থী নেতাদের কাছে তুলে ধরেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত দুটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। এক. বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের কয়েকজন নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়, সে ক্ষেত্রে দল ভাঙার চেষ্টারত নেতাদের নিয়ে 'তৃণমূল বিএনপি' নামে একটি দল গঠন করা হতে পারে। সেই দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী দুজন সদস্য, দুই থেকে তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন উপদেষ্টাসহ নির্বাহী কমিটির কয়েকজন নেতা থাকতে পারেন। অনেকে সুনির্দিষ্ট করেই বলছেন, বিএনপির যেসব নেতা ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে গোপনে আঁতাত করছেন, তাঁরা দল ভেঙে 'তৃণমূল বিএনপি' নামে নতুন প্লাটফরম গড়ার কথাই ভাবছেন। আর দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে- আবারও 'এক-এগারো'র মতো কিছু ঘটলে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেতাদের কয়েকজন কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁদের ধারণা, জামায়াতে ইসলামীর কিছু নেতাও এ ধরনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। কারাগারের বাইরে থাকা ও সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া এক নেতাকে ইঙ্গিত করে তাঁরা জানান, সম্ভবত কারাগারেই এ বিষয়ে একটি ফয়সালা হয়ে থাকতে পারে।
গত শনিবার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির সদ্য কারামুক্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাসসহ নেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ওই দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছে, কিন্তু তা সফল হবে না। উল্টো এ ষড়যন্ত্রের কারণে দল ও জোট আরো সুসংহত ও সমপ্রসারিত হবে।
নেতারা যা বলেন : মির্জা ফখরুল তাঁর ওই বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে বিএনপিকে ভাঙার। তারা প্রথম থেকেই এ প্রক্রিয়া চালিয়েছে এবং তা অব্যাহত রেখেছে।
দলের আরেক নেতা লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব যেহেতু বলেছেন, নিশ্চয়ই তার কোনো কারণ আছে। তিনি বলেন, নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জেলে ঢোকানো হচ্ছে। সেখানে তাঁদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তারপর তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি আদায় করে জামিন দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, নাজমুল হুদার মতো যাঁরা দলের ছিলেন না, নিজেই মাফ চেয়ে দলে ফিরেছেন আবার নিজেই পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের মতো চরিত্র থেকে বিএনপিকে সাবধান থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে তাঁরাই দলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি করে বসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, 'এই সরকার ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের কাছ থেকে কিছু ঐতিহ্য পেয়েছে। তা হলো দল ভাঙা। বিএনপিকে ভাঙার প্রক্রিয়া চলছে, এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমি দিতে পারব না। তবে বলতে পারি, সে চেষ্টা চলছে। তার প্রমাণ, নাজমুল হুদার মতো কিছু নেতাকে দিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু বক্তব্য দেওয়ানো। তবে শেষ কথা হচ্ছে, বিএনপিকে সরকারের এ অপচেষ্টা থেকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।'
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তরিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দল ভাঙার চেষ্টা আছে বলে জানা নেই। তবে ষড়যন্ত্র করা হলে তা সফল হবে না।
জানা গেছে, বিএনপিতে এক-এগারোর আতঙ্ক এখনো রয়েছে। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, এক-এগারোর ষড়যন্ত্র দলের যে ক্ষতি করেছে তা আজও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ওই সময় সেনা সমর্থিত সরকার বিএনপিকে ভেঙে 'ডামি বিএনপি' গড়তে চেয়েছিল। এবার নতুন নীল নকশা নিয়ে সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকারের একটি মহল এ কাজ করছে।
কারা জড়িত : বিএনপির নীতি-নির্ধারক থেকে শুরু করে কর্মী পর্যায়েও 'তৃণমূল বিএনপি' গঠনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কানাঘুষা চলছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কিছু নামও তাঁরা উচ্চারণ করছেন। তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টিও রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগরীর কারো কারো নামও আসছে। তাঁদের অনেকে আছেন, যাঁরা বারবার দল বদলান। সুবিধাবাদী কিছু নেতাও আছেন। তাঁদের সঙ্গে থাকতে পারেন তাঁরাই, যাঁরা দল থেকে আশাতীত সুবিধা পেয়েছেন। সেই সঙ্গে সংস্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত যেসব নেতা এখনো দলে ঠাঁই পাননি, তাঁদেরও কেউ কেউ থাকতে পারেন।
সরাসরি প্রথমেই যে নামটি আসছে, তিনি হলেন দলের সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। সদ্য পদত্যাগকারী এই নেতা কারো কারো সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন বলেও বিএনপির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। জানা গেছে, নাজমুল হুদা দলের বাইরে ১৮ দলীয় জোটেরও কারো কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নতুন দল গঠন সম্পর্কে বুধবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্যই আমি কিছু করব। আমার একটি দলীয় কাঠামো আছে। আমি বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সারা দেশে এর ৩১৫টি শাখা আছে। প্রতি শাখায় ১৫ জন করে হলেও অনেক লোক। দেশ ও মানুষের জন্য এটাকে কাজে লাগাতে পারি। চিন্তা করছি সংস্থার একটি বিশেষ অধিবেশন করার।'
তিনি বলেন, 'আমি একটি দলকে নয়, দুই দলকেই সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ দেশ সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনাও আছে।'
No comments