অসহিষ্ণু ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি পরিহার করুন-খালেদা জিয়ার বাড়ি ও হরতাল

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় সেনানিবাসের বাড়িটি ছাড়তে চাননি, বলা যায় ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এর প্রতিবাদে বিএনপি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে। যার দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দেশবাসীকে। ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে।


এক দিনের হরতালে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি ও রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ধারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একজন ব্যক্তির বাড়ি নিয়ে এমন পরিণতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না, কিন্তু দুঃখজনক হলেও এখন বাস্তবতা সে রকমই।
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়িটি নিয়ে পরিস্থিতি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তার কয়েকটি দিক রয়েছে—মানবিক, আইনগত ও রাজনৈতিক। সাধারণভাবে বিষয়টি ব্যক্তি খালেদা জিয়ার বাড়ি হলেও তিনি দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা, দু-দুবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। সবকিছু ছাপিয়ে এখন রাজনৈতিক দিকটিই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালেদা জিয়ার নামে বাড়িটি বরাদ্দ করা হয়েছিল মানবিক কারণে, পরবর্তীকালে আইন বলছে এই বরাদ্দ ছিল অবৈধ। কিন্তু খালেদা জিয়া বা বিএনপির নেতাদের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই এই বাড়ি থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, গত শনিবার যেভাবে ঘটনাটি ঘটল তার কোনো বিকল্প পথ ছিল কি না।
হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়ার জন্য ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেও তিনি ৮ নভেম্বর এর বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল করেছেন। ২৯ নভেম্বর শুনানির তারিখ নির্ধারিত ছিল। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি ঠিকই, কিন্তু ২৯ নভেম্বর যেহেতু লিভ টু আপিলের শুনানির কথা ছিল, সে কারণে ওই পর্যন্ত সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে সরানোর উদ্যোগ না নেওয়াই ছিল যুক্তিযুক্ত। লিভ টু আপিলের শুনানির পর আদালতের রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে যেমন সরকারের সহনশীলতা প্রমাণিত হতো তেমনি রাজনৈতিক বিতর্কও এড়ানো যেত।
আমরা মনে করি খালেদা জিয়ার বাড়ি ইস্যুতে সরকারের উচিত ছিল সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আদালতের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করা। অন্যদিকে দলীয় প্রধান হলেও একজন ব্যক্তির বাড়ি নিয়ে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়ে বিএনপি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়ার কারণে খালেদা জিয়া ‘অপমানিত, লাঞ্ছিত ও লজ্জিত বোধ’ করেছেন। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় ঈদের আগে হরতাল ডেকে দেশের কোটি মানুষকে চরম লাঞ্ছনার মধ্যে ফেলে দিয়েছে তাঁর দল বিএনপি। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ও ইউএনডিপির এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল ক্লাস্টার সন্মেলনের সময় হরতালের ঘটনা দেশের ভাবমূর্তিকেও স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুণ্ন করবে। খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে যা ঘটছে তা আমাদের অসহিষ্ণু ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই প্রমাণ তুলে ধরেছে। এই অবস্থা থেকে রাজনীতিকে সহনশীলতার দিকে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.