অনেক আগেই বাড়িটি ছাড়া উচিত ছিল by আবদুল মান্নান
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়িটি ছাড়ার জন্য নোটিশ দেয় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। কারণ বাড়িটা ‘এ’ ক্যাটাগরির এবং সেটা একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার জন্য নির্ধারিত। জিয়াউর রহমানকে যখন ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ করা হয়, তখন তিনি ওই বাড়িতে ওঠেন।
সেখানে তিনি সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবেও সপরিবারে বাস করেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে যখন তাঁর দুঃখজনক মৃত্যু ঘটে তখন বেগম খালেদা জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। এবং যেহেতু জিয়াউর রহমানের কোনো সহায়সম্বল ছিল না এবং তাঁর ছেলেরা নাবালক, এই বিবেচনা থেকে তাঁদের জন্য গুলশানে একটি বাড়ি দেওয়া হয় এবং ১০ লাখ টাকা তাঁদের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়। পরবর্তী সময়ে এরশাদের আমলে সেনানিবাসের এই বাড়িটাও বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরশাদ ধারণা করেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া সেনানিবাসের এই বাড়িতে দুই ছেলেসহ বাস করবেন আর গুলশানের বাড়িটি ভাড়া দিয়ে ছেলেদের পড়াশোনার ব্যয়ভার চালাবেন। পরবর্তী সময়ে যখন বেগম জিয়া রাজনীতিতে এলেন তখন তিনি সেনানিবাসের ভেতরের এই বাড়িতেই থেকে গেলেন। সেখানে থেকেই তিনি রাজনীতি করেছেন, তাঁর ছেলেরা ব্যবসা করেছেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য একবার নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তখন বাড়িটি ছাড়েননি। এবার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড যখন আবার নোটিশ দেয়, তখন বেগম খালেদা জিয়া হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। সেই রিট মামলার রায় তাঁর বিপক্ষে যায় এবং আদালত তাঁকে বাড়িটি ছাড়ার জন্য ৩০ দিন সময় দেন, সেই সঙ্গে উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করারও অনুমতি দেন। তাঁরা চেম্বার জজে লিভ টু আপিল করেছিলেন, চেম্বার জজ তা শুনানি না করে ফুল বেঞ্চে রেফার করেন। তাঁরা ফুল বেঞ্চে মুভ করেন, যেখানে প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। ফুল বেঞ্চে তাঁরা সময় প্রার্থনা করেন, ফুল বেঞ্চ ২৯ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন এবং প্রধান বিচারপতি তাঁদের কাছে জানতে চান, তাঁদের আর কোনো আবেদন আছে কি না। উত্তরে তাঁরা বলেন, আর কোনো আবেদন নেই।
অর্থাৎ ৩০ দিনের মধ্যে বাড়িটি ছেড়ে দিতে হবে—হাইকোর্টের দেওয়া এই রায়টিই বহাল থাকল। গত শনিবার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইকোর্টের সেই রায়ের আলোকেই ব্যবস্থা নিয়েছে। আসলে বেগম খালেদা জিয়ার অনেক আগেই বাড়িটি ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানে একটি বাড়ি দেওয়ার পরও সেনানিবাসের ভেতরে ওই বাড়িটি দেওয়া ছিল বেআইনি। কারণ বাড়িটি কেবল সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই বরাদ্দ পেতে পারেন চাকরিরত অবস্থায়। আর বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িটি নেওয়াও ছিল অনৈতিক। এবং যখন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড তাঁকে বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দিল, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সেখান থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল।
শনিবার তিনি সেনানিবাসের বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছেন। আইএসপিআর বলছে, তিনি নিজেই আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাড়িটি ত্যাগ করেছেন। আর বেগম জিয়া নিজে বলছেন, তাঁদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো পক্ষের বক্তব্যের সত্যাসত্য যাচাই করতে যাচ্ছি না। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত কি না। আইনের দৃষ্টিতে অপেক্ষা করার সুযোগ ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া যদি হাইকোর্টের রায়ের ব্যাপারে স্থগিতাদেশ চাইতেন এবং আদালত স্থগিতাদেশ দিতেন, তাহলে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করার সুযোগ থাকত। কিন্তু তাঁরা স্থগিতাদেশ চাননি।
কেন স্থগিতাদেশ না চেয়ে শুধু লিভ টু আপিল করেছেন? ধারণা করি, ইচ্ছাকৃতভাবেই তাঁরা স্থগিতাদেশ চাননি, ২৯ নভেম্বর লিভ টু আপিলের শুনানির দিন ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের আর কোনো আবেদন আছে কি না, তখনো তাঁরা স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করেননি। আসলে বিএনপি এ বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন; তারা জানে এবং বেশ ভালোভাবে বোঝে, এর সঙ্গে জনগণের স্বার্থের কোনো সম্পর্ক নেই। জনজীবনে এত সমস্যা, অথচ বেগম খালেদা জিয়া তাঁর দলকে পরিচালিত করছেন নিজের পারিবারিক স্বার্থে। তাঁরা সংসদে যান না, জনজীবনের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন না; বেগম জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি আর ছেলেদের নিয়ে দুই বছর পার করে দিলেন। এখন বেগম জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাইরে এসেছেন, এখন জনসাধারণের মধ্যে বাস করে, তাদের কাতারে দাঁড়িয়ে তাদের স্বার্থে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শামিল হবেন—এই প্রত্যাশা করি।
আবদুল মান্নান: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে যখন তাঁর দুঃখজনক মৃত্যু ঘটে তখন বেগম খালেদা জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। এবং যেহেতু জিয়াউর রহমানের কোনো সহায়সম্বল ছিল না এবং তাঁর ছেলেরা নাবালক, এই বিবেচনা থেকে তাঁদের জন্য গুলশানে একটি বাড়ি দেওয়া হয় এবং ১০ লাখ টাকা তাঁদের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়। পরবর্তী সময়ে এরশাদের আমলে সেনানিবাসের এই বাড়িটাও বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরশাদ ধারণা করেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া সেনানিবাসের এই বাড়িতে দুই ছেলেসহ বাস করবেন আর গুলশানের বাড়িটি ভাড়া দিয়ে ছেলেদের পড়াশোনার ব্যয়ভার চালাবেন। পরবর্তী সময়ে যখন বেগম জিয়া রাজনীতিতে এলেন তখন তিনি সেনানিবাসের ভেতরের এই বাড়িতেই থেকে গেলেন। সেখানে থেকেই তিনি রাজনীতি করেছেন, তাঁর ছেলেরা ব্যবসা করেছেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য একবার নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তখন বাড়িটি ছাড়েননি। এবার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড যখন আবার নোটিশ দেয়, তখন বেগম খালেদা জিয়া হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। সেই রিট মামলার রায় তাঁর বিপক্ষে যায় এবং আদালত তাঁকে বাড়িটি ছাড়ার জন্য ৩০ দিন সময় দেন, সেই সঙ্গে উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করারও অনুমতি দেন। তাঁরা চেম্বার জজে লিভ টু আপিল করেছিলেন, চেম্বার জজ তা শুনানি না করে ফুল বেঞ্চে রেফার করেন। তাঁরা ফুল বেঞ্চে মুভ করেন, যেখানে প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। ফুল বেঞ্চে তাঁরা সময় প্রার্থনা করেন, ফুল বেঞ্চ ২৯ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন এবং প্রধান বিচারপতি তাঁদের কাছে জানতে চান, তাঁদের আর কোনো আবেদন আছে কি না। উত্তরে তাঁরা বলেন, আর কোনো আবেদন নেই।
অর্থাৎ ৩০ দিনের মধ্যে বাড়িটি ছেড়ে দিতে হবে—হাইকোর্টের দেওয়া এই রায়টিই বহাল থাকল। গত শনিবার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইকোর্টের সেই রায়ের আলোকেই ব্যবস্থা নিয়েছে। আসলে বেগম খালেদা জিয়ার অনেক আগেই বাড়িটি ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানে একটি বাড়ি দেওয়ার পরও সেনানিবাসের ভেতরে ওই বাড়িটি দেওয়া ছিল বেআইনি। কারণ বাড়িটি কেবল সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই বরাদ্দ পেতে পারেন চাকরিরত অবস্থায়। আর বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িটি নেওয়াও ছিল অনৈতিক। এবং যখন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড তাঁকে বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দিল, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সেখান থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল।
শনিবার তিনি সেনানিবাসের বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছেন। আইএসপিআর বলছে, তিনি নিজেই আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাড়িটি ত্যাগ করেছেন। আর বেগম জিয়া নিজে বলছেন, তাঁদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো পক্ষের বক্তব্যের সত্যাসত্য যাচাই করতে যাচ্ছি না। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত কি না। আইনের দৃষ্টিতে অপেক্ষা করার সুযোগ ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া যদি হাইকোর্টের রায়ের ব্যাপারে স্থগিতাদেশ চাইতেন এবং আদালত স্থগিতাদেশ দিতেন, তাহলে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করার সুযোগ থাকত। কিন্তু তাঁরা স্থগিতাদেশ চাননি।
কেন স্থগিতাদেশ না চেয়ে শুধু লিভ টু আপিল করেছেন? ধারণা করি, ইচ্ছাকৃতভাবেই তাঁরা স্থগিতাদেশ চাননি, ২৯ নভেম্বর লিভ টু আপিলের শুনানির দিন ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের আর কোনো আবেদন আছে কি না, তখনো তাঁরা স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করেননি। আসলে বিএনপি এ বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন; তারা জানে এবং বেশ ভালোভাবে বোঝে, এর সঙ্গে জনগণের স্বার্থের কোনো সম্পর্ক নেই। জনজীবনে এত সমস্যা, অথচ বেগম খালেদা জিয়া তাঁর দলকে পরিচালিত করছেন নিজের পারিবারিক স্বার্থে। তাঁরা সংসদে যান না, জনজীবনের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন না; বেগম জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি আর ছেলেদের নিয়ে দুই বছর পার করে দিলেন। এখন বেগম জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাইরে এসেছেন, এখন জনসাধারণের মধ্যে বাস করে, তাদের কাতারে দাঁড়িয়ে তাদের স্বার্থে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শামিল হবেন—এই প্রত্যাশা করি।
আবদুল মান্নান: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments