কৃষি-ভেজাল বীজের আগ্রাসন by রাজীব কামাল শ্রাবণ
হাজার হাজার কৃষক ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ ব্যবহার করে ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার সময় এসেছে। এর জন্য সরকারের উচিত দেশের সর্বস্তরের কৃষকের কাছে বিএডিসির বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
এতে কৃষকের বীজ কেনা বাবদ খরচ অনেক কমে যাবে এবং ভালো বীজপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে
কৃষকের মাঠে এখন বোরো ধানের সবুজ সমারোহ। কিছুদিন পর ধান কাটার উৎসব শুরু হবে। অনেক সাধনার ফসল নিয়ে কৃষকের দু'চোখে এখন খেলা করছে অজস্র স্বপ্ন। কিন্তু অবস্থার পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, দেশের কিছু এলাকায় তাদের স্বপ্নগুলো অচিরেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় হাজার হাজার কৃষক তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল লাভে ব্যর্থ হবেন। কারণ তারা ধান চাষের সময় ভেজাল বীজ ব্যবহার করেছেন। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল প্রভৃতি জেলায় চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এনার্জি প্যাক এগ্রো লিমিটেডের বাজারজাতকৃত 'ঝলক' বীজ কৃষকদের জন্য বরাদ্দ করে। ফলে ভালো বীজের আশায় কৃষকরা চড়া মূল্যে ওই কোম্পানির ডিলারদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। কিন্তু যেসব কৃষক 'ঝলক' বীজ ব্যবহার করেছেন তাদের সবার ফসলই হয় চিটা হয়েছে, নতুবা ধানের শীষ বের হওয়ার পর তা জ্বলে গেছে। নোয়াখালীতে এক হাজার ৬৫৫ হেক্টর, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে কয়েক হাজার হেক্টরে ঝলক চাষকৃত ধানি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে বীজ কোম্পানিটি নিম্নমানের বীজ কৃষকদের কাছে বিক্রি করে বিরাট মুনাফা তুলে নিয়েছে। আর হাজার হাজার কৃষক এ বীজ চাষ করে এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে। যারা ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছেন তাদের গলায় এখন কাঁটার মতো ঋণের বোঝা আটকে গেছে। যেখানে উৎপাদনের জন্য সরকার বোরো ধানের চাষকে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে সার ও বীজে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করেছে, যেখানে কতিপয় অসাধু বীজ ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকের পরিশ্রম, জমি, ফসল ও সরকারের ভর্তুকি অপচয় হচ্ছে। এতে কৃষকের ফসল হারানোর পাশাপাশি সরকারও ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে। এতে সরকারের চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার যে পরিকল্পনা তা ভেস্তে যেতে বসেছে। ফসল উৎপাদনের বীজের গুরুত্ব বোঝাতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বীজমেলায় বলেছেন, 'ভালো বীজ ভালো ফসল।' কৃষকদের মধ্যে এ সচেতনতা এলেও প্রকৃতপক্ষে তারা নিরুপায়। আগে যদিও তারা ধানের বীজ নিজেরাই সংরক্ষণ করে রাখত, কিন্তু হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ সংরক্ষণ করা যায় না। তাই ভালো বীজের জন্য তারা বিএডিসি ও বিভিন্ন বীজ প্রস্তুতকারক কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এ ব্যাপারে বেশ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু তাদের পরামর্শও বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। বীজের গুণগত মান নিশ্চিত হয়ে কি তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে নাকি বীজ কোম্পানির বিভিন্ন কারসাজিতে তারা প্রভাবিত হচ্ছে তা ভাবার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনার্জি প্যাকের মতো বিভিন্ন কোম্পানি এ সুযোগের চড়া দামে কৃষকদের কাছে তাদের বীজ বিক্রি করছে। কৃষকদেরও বাধ্য হয়ে সেই দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। আবার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে যে, তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের তেমন সহযোগিতা করেন না। এসব কিছুরই বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবার উলিল্গখিত এলাকাগুলোতে বোরো চাষে প্রভাব ফেলেছে। হাজার হাজার কৃষক ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ ব্যবহার করে ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার সময় এসেছে। এর জন্য সরকারের উচিত দেশের সর্বস্তরের কৃষকের কাছে বিএডিসির বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এতে কৃষকের বীজ কেনা বাবদ খরচ অনেক কমে যাবে এবং ভালো বীজপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি এ সংকট মোকাবেলায় বেসরকারি বীজ বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠোর বীজ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে তারা ভেজাল বীজ বাজারজাত করতে না পারে। কৃষি সল্ফপ্রসারণ অধিদফতরকে দুর্নীতিমুক্ত ও কৃষকদের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে আরও বেশি সক্রিয় করে তুলতে হবে। এ ছাড়াও ধানবীজ বপন মৌসুমে নিয়মিত বীজবাজার মনিটরিং সেল গঠন করা উচিত যাতে চড়া দামে কৃষকদের বীজ কিনতে না হয়। প্রয়োজনে সরকার প্রতি কেজি বীজের দামও নির্ধারণ করে দিতে পারে। এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে হয়তো গোটা দেশেই একই চিত্র দেখা যাবে। ভালো ফলনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কৃষকের কাছে ভালো বীজ পেঁৗছে দেওয়া। নতুবা সব পরিচর্যার পরও মূল লক্ষ্য অর্জনে কৃষক পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। তাই দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বাড়াতে হলে সার-বিদ্যুতের পাশাপাশি ভালো বীজের প্রতিও সরকারের যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া জরুরি।
রাজীব কামাল শ্রাবণ :শিক্ষার্থী
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
কৃষকের মাঠে এখন বোরো ধানের সবুজ সমারোহ। কিছুদিন পর ধান কাটার উৎসব শুরু হবে। অনেক সাধনার ফসল নিয়ে কৃষকের দু'চোখে এখন খেলা করছে অজস্র স্বপ্ন। কিন্তু অবস্থার পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, দেশের কিছু এলাকায় তাদের স্বপ্নগুলো অচিরেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় হাজার হাজার কৃষক তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল লাভে ব্যর্থ হবেন। কারণ তারা ধান চাষের সময় ভেজাল বীজ ব্যবহার করেছেন। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল প্রভৃতি জেলায় চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এনার্জি প্যাক এগ্রো লিমিটেডের বাজারজাতকৃত 'ঝলক' বীজ কৃষকদের জন্য বরাদ্দ করে। ফলে ভালো বীজের আশায় কৃষকরা চড়া মূল্যে ওই কোম্পানির ডিলারদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। কিন্তু যেসব কৃষক 'ঝলক' বীজ ব্যবহার করেছেন তাদের সবার ফসলই হয় চিটা হয়েছে, নতুবা ধানের শীষ বের হওয়ার পর তা জ্বলে গেছে। নোয়াখালীতে এক হাজার ৬৫৫ হেক্টর, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে কয়েক হাজার হেক্টরে ঝলক চাষকৃত ধানি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে বীজ কোম্পানিটি নিম্নমানের বীজ কৃষকদের কাছে বিক্রি করে বিরাট মুনাফা তুলে নিয়েছে। আর হাজার হাজার কৃষক এ বীজ চাষ করে এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে। যারা ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছেন তাদের গলায় এখন কাঁটার মতো ঋণের বোঝা আটকে গেছে। যেখানে উৎপাদনের জন্য সরকার বোরো ধানের চাষকে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে সার ও বীজে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করেছে, যেখানে কতিপয় অসাধু বীজ ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকের পরিশ্রম, জমি, ফসল ও সরকারের ভর্তুকি অপচয় হচ্ছে। এতে কৃষকের ফসল হারানোর পাশাপাশি সরকারও ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে। এতে সরকারের চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার যে পরিকল্পনা তা ভেস্তে যেতে বসেছে। ফসল উৎপাদনের বীজের গুরুত্ব বোঝাতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বীজমেলায় বলেছেন, 'ভালো বীজ ভালো ফসল।' কৃষকদের মধ্যে এ সচেতনতা এলেও প্রকৃতপক্ষে তারা নিরুপায়। আগে যদিও তারা ধানের বীজ নিজেরাই সংরক্ষণ করে রাখত, কিন্তু হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ সংরক্ষণ করা যায় না। তাই ভালো বীজের জন্য তারা বিএডিসি ও বিভিন্ন বীজ প্রস্তুতকারক কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এ ব্যাপারে বেশ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু তাদের পরামর্শও বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। বীজের গুণগত মান নিশ্চিত হয়ে কি তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে নাকি বীজ কোম্পানির বিভিন্ন কারসাজিতে তারা প্রভাবিত হচ্ছে তা ভাবার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনার্জি প্যাকের মতো বিভিন্ন কোম্পানি এ সুযোগের চড়া দামে কৃষকদের কাছে তাদের বীজ বিক্রি করছে। কৃষকদেরও বাধ্য হয়ে সেই দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। আবার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে যে, তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের তেমন সহযোগিতা করেন না। এসব কিছুরই বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবার উলিল্গখিত এলাকাগুলোতে বোরো চাষে প্রভাব ফেলেছে। হাজার হাজার কৃষক ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ ব্যবহার করে ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার সময় এসেছে। এর জন্য সরকারের উচিত দেশের সর্বস্তরের কৃষকের কাছে বিএডিসির বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এতে কৃষকের বীজ কেনা বাবদ খরচ অনেক কমে যাবে এবং ভালো বীজপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি এ সংকট মোকাবেলায় বেসরকারি বীজ বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠোর বীজ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে তারা ভেজাল বীজ বাজারজাত করতে না পারে। কৃষি সল্ফপ্রসারণ অধিদফতরকে দুর্নীতিমুক্ত ও কৃষকদের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে আরও বেশি সক্রিয় করে তুলতে হবে। এ ছাড়াও ধানবীজ বপন মৌসুমে নিয়মিত বীজবাজার মনিটরিং সেল গঠন করা উচিত যাতে চড়া দামে কৃষকদের বীজ কিনতে না হয়। প্রয়োজনে সরকার প্রতি কেজি বীজের দামও নির্ধারণ করে দিতে পারে। এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে হয়তো গোটা দেশেই একই চিত্র দেখা যাবে। ভালো ফলনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কৃষকের কাছে ভালো বীজ পেঁৗছে দেওয়া। নতুবা সব পরিচর্যার পরও মূল লক্ষ্য অর্জনে কৃষক পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। তাই দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বাড়াতে হলে সার-বিদ্যুতের পাশাপাশি ভালো বীজের প্রতিও সরকারের যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া জরুরি।
রাজীব কামাল শ্রাবণ :শিক্ষার্থী
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
No comments