যে খবর নাড়া দেয়-ব্যর্থতা

ওর চোখের ভাষা কি পড়া যায়? মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত—মারার জন্য নয়, মার থেকে রক্ষা পাওয়ার আকুতি তাতে। একজন পুলিশ সদস্য শরীরের সব শক্তি সঞ্চিত করে ওর দিকে লাঠি তুলেছেন। প্রথম আলোর চিত্র সাংবাদিক সাজিদ হোসেনের ছবিতে এটুকুই আছে। ছোটগল্পের মতো এই ছবিটির বলা কথাও যেন ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’।


আশুলিয়ায় পোশাক কারখানাগুলোয় অস্থিরতা চলাকালে ছবিটি তোলা হয়েছে। বেরিয়েছে ১৭ জুন প্রথম আলোর প্রথম পাতায়। ছেলেটির নাম জানি না, তাতে কিছু আসে যায় না। ও হয়তো বেতনবৃদ্ধির দাবিতে সতীর্থ শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল। হঠাৎ পুলিশের সামনে পড়ে গেছে। যখন একজন পুলিশের সঙ্গে ওর দ্বৈরথ, তখন ওর আশেপাশে কেউ নেই। প্রশ্ন জাগে মনে, লাঠির বাড়িটা ওর শরীরের কোথায় আঘাত হেনেছিল? চোখে কি ও দেখেছিল শর্ষে ফুল—যা একসময় গ্রামের বাড়ি থেকে বের হলেই চষা জমিতে দেখতে পেত? ওর মা-বাবা কি বেঁচে আছেন? তাঁরা কি ছবিটা দেখেছেন? দেখে থাকলে তাঁদের মনের অবস্থা কেমন? ওর কি ছোট-বড় ভাইবোন আছে? ছবি দেখে ওদের চোখে কি ছিল অশ্রুর প্লাবন?
আশুলিয়ার অস্থিরতা নিয়ে সরকারের বক্তব্য শুনেছি আমরা, মালিকদের কথাও শুনেছি। শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে মালিকপক্ষের বোঝাপড়া হয়তো শ্রমিকদের পৌঁছে দিতে পারে কোনো আলোর নিশানায়। ন্যূনতম মজুরি কত হলে একজন মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, তা কি আমাদের অজানা? শ্রমিক আন্দোলনগুলো কি শুধু রাস্তায় বা মিল-কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা, নাকি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে বড় কোনো মানবিক জায়গা—যে জায়গার খোঁজ আমরা পাই না?
একটি অসহায় প্রায়-তরুণ ছেলের মাথায় পুলিশের লাঠির বাড়ি যখন পড়ে, তখন আমরা অন্য সব হিসেবনিকেশ ভুলে এ কথা কি বলতে পারি না, ও তোমার-আমার ভাই, ওকে স্বাভাবিক নিশ্চিন্ত জীবন উপহার দিতে না পারার ব্যর্থতা আমাদেরই?
জা. রে. নূ.

No comments

Powered by Blogger.