শিক্ষার্থীদের গণশাস্তি-এ কেমন অধ্যক্ষ?
সর্বোচ্চ আদালতের রায় মোতাবেক বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের গুরুদণ্ড নিষিদ্ধ। লঘু এবং গুরুদণ্ডের সীমারেখা কী হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে গুরু বা কঠোর দণ্ড বলতে কিছু ধারণা আমাদের চোখের সামনেই সর্বদা ভেসে থাকে এবং সেটা নিশ্চিতভাবেই বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রসূত।
শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে_ যুগ যুগ ধরেই এটা আপ্তবাক্যে পরিণত হয়ে আছে। কিন্তু অনেকে তা মানতে চায় না। শিশুদের বেত্রাঘাতে জর্জরিত করাতেই যেন তাদের আনন্দ। এমনটিই ঘটেছে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু দারদা মো. আরিফ বিল্লাহের ক্ষেত্রে। বুধবার তিনি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি আরও শতাধিক ছাত্রকে বেধড়ক লাঠিপেটা করেছেন। মার খাওয়া কয়েকজনকে এমনকি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। কেন অধ্যক্ষর এ রণমূর্তি? অভিভাবকদের অভিযোগ_ স্কুল পরিচালিত কোচিংয়ে ভর্তি না হওয়ার কারণেই তিনি ত্রুক্রদ্ধ হয়েছেন। তবে অধ্যক্ষ দাবি করছেন, কোচিং না করে মাঠে খেলা করার কারণেই ছাত্রদের তিনি পিটিয়েছেন। তার আরও দাবি, 'পিতা হিসেবে ছাত্রদের মেরেছি।' একজন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পিতৃস্নেহে এমনকি শাসনও করতে পারেন। তবে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের মারধরের যে বিবরণ সংবাদপত্রে এসেছে তাতে স্পষ্ট যে, তিনি এর মাত্রা যথেষ্টই অতিক্রম করেছিলেন। এমনকি সন্তানদের স্কুলে লাঠিপেটা করার খবর পেয়ে ছুটে আসা অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে। এমন অমানবিক আচরণ শিক্ষকদের কাছ থেকে কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। কথায় বলে বাড়াবাড়িরও মাত্রা থাকে। এ ক্ষেত্রে সেটা অতিক্রান্ত হয়েছে। স্কুল পরিচালিত কোচিংয়ে ছাত্ররা ভর্তি না হওয়ায় তিনি তাদের কঠিন শাস্তি প্রদান করেছেন, এ অভিযোগ যথার্থ হয়ে থাকলে বিষয়টি আরও গুরুতর মাত্রা পাবে। এর সঙ্গে একাধিক শিক্ষকও যুক্ত থাকতে পারেন। আশা করব যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদান সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা যাতে সব প্রতিষ্ঠান অনুসরণ করে সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা গ্রহণ করবে বলে আশা থাকবে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও চেষ্টা চালাতে হবে। শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে অনুরোধ জানাব।
No comments