অঘটনের জন্য দায়ী খালেদার আইনজীবীরা by আমীন আহম্মেদ চৌধুরী
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি বরাদ্দের বৈধতা নিয়ে আদালতে যে ফয়সালা হওয়ার কথা সেটিকে রাস্তায় নিয়ে আসা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আইন অনুযায়ী তাঁর বাড়ির বরাদ্দটি সঠিক ছিল না। আর এই বেআইনি কাজটি করেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে বিদ্রোহী সেনাদের হাতে জিয়াউর রহমান যখন মারা যান, তখন তাঁর নিজস্ব কোনো প্লট বা বাড়ি ছিল না। অন্যান্য সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারও ছিল না। জিয়াউর রহমানের ছেলেরা ছিল নাবালক। সে কারণে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য দুটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে গুলশানে একটি বাড়ি দেওয়া হয়। আরেকটি বাড়ি মহাখালী বা বনানীর প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জন্য নির্ধারিত আবাসিক এলাকা বা ডিওএইচএসে হওয়াই সমীচীন ছিল। সেখানেই সেনা কর্মকর্তারা প্লটের বরাদ্দ পেয়ে থাকেন।
কিন্তু সুচতুর রাজনীতিক এরশাদ সেনানিবাসের উপপ্রধান সেনাপ্রধানের জন্য নির্ধারিত বাড়িটিই খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেন। তাঁর এই বরাদ্দ দেওয়ার দুটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, জিয়ার হত্যাকাণ্ডে এরশাদের জড়িত থাকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা চলছিল। তিনি খালেদা জিয়াকে ওই বাড়িটি বরাদ্দ দিয়ে তাঁর সহানুভূতি পেতে চেয়েছিলেন। সে সময়ে সেনাবাহিনীর অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা খালেদা জিয়াকে বাড়িটি না নিতে পরামর্শও দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, এরশাদ চাইতেন না যে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে যোগ দিন। সেনানিবাসে থেকে যে রাজনীতি করা যায় না সেটিও তিনি জানতেন। সেই কারণেও এরশাদ সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার জন্য বাড়িটি বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
এটি ছিল ১৯১১ সালের সেনা আইনের মারাত্মক বরখেলাপ। সামরিক ভূমি সম্পত্তি আইন অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকাণ্ডে ব্যবহূত কোনো জমি বা বাড়ি বেসামরিক ব্যক্তিকে দেওয়া যায় না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেখানে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা আইনসম্মত হবে না। সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সেনাবাহিনীর কাজেই ব্যবহূত হতে হবে। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকা পর্যন্ত এটি সেনা-উপপ্রধানের বাসভবন ছিল।
সে দিক থেকে দেখলে সাবেক সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াকে এ বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়াই ছিল আইনবহির্ভূত। আদালত যথার্থই রায় দিয়েছেন এবং খালেদা জিয়ার উচিত ছিল সেই রায় মেনে নিয়ে সসম্মানে বাড়িটি ছেড়ে দেওয়া।
কিন্তু আমার ধারণা, তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে ভালো পরামর্শ দেননি। তাঁদের উদ্দেশ্য যে ভালো ছিল না তার প্রমাণ শুক্রবার সকালে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তাঁরা সাক্ষাৎ করলেন, বৃহস্পতিবার গেলেন না কেন? আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে তাঁরা সেখানে যেতে পারেন না। তাঁরা যেতে পারেন তাঁদের মক্কেলের স্বার্থরক্ষার জন্য। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার পর আইনজীবীরা যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, তাও সমর্থনযোগ্য নয়।
সুপ্রিম কোর্টের লিভ টু আপিলের আবেদনের সঙ্গেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা স্থগিতাদেশ চাননি। এর অর্থ হলো, তাঁরা হাইকোর্টের রায় মেনে নিয়েছেন। আসলে তাঁরা খালেদা জিয়ার বাড়িকে ব্যবহার করে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চেয়েছিলেন বা তাঁর আনুকূল্য লাভে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁদের কারণেই খালেদা জিয়া অপদস্ত হলেন। এরপর বিএনপির নেতারা যে কাজটি করলেন, তাতে বিএনপির প্রতি জনগণের সহানুভূতি বা সমর্থন থাকার কথা নয়। মানুষ দেখল, একটি বাড়ির জন্য বিএনপি লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার জন্য খালেদা জিয়া যে সহানুভূতি পেতে পারতেন, ঈদের আগে হরতাল ডাকার জন্য তাও পেলেন না। আসলে বিএনপি এটিকে রাজনৈতিক ইস্যু বানাতে চেয়েছিল, সে ক্ষেত্রে তারা সফল না ব্যর্থ হয়েছে সেই বিচার জনগণই করবে।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে সরকার বা সামরিক ভূসম্পত্তি প্রশাসক তাড়াহুড়া না করলেও পারত। আদালতের রায় যখন তাদের পক্ষে ছিল, তখন কাজটি আরও কদিন পর করলেও অসুবিধার কিছু ছিল না। তাতে জনগণ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেত।
আমি মনে করিনা, এই ঘটনা সেনাবাহিনীতে কোনো প্রভাব ফেলবে। তবে বিবদমান রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক নয়। আমাদের রাজনীতিতে পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধের অভাব সব সময়ই ছিল। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবাইকে সহনশীল মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আমীন আহম্মেদ চৌধুরী বীর বিক্রম: অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও সাবেক রাষ্ট্রদূত।
কিন্তু সুচতুর রাজনীতিক এরশাদ সেনানিবাসের উপপ্রধান সেনাপ্রধানের জন্য নির্ধারিত বাড়িটিই খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেন। তাঁর এই বরাদ্দ দেওয়ার দুটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, জিয়ার হত্যাকাণ্ডে এরশাদের জড়িত থাকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা চলছিল। তিনি খালেদা জিয়াকে ওই বাড়িটি বরাদ্দ দিয়ে তাঁর সহানুভূতি পেতে চেয়েছিলেন। সে সময়ে সেনাবাহিনীর অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা খালেদা জিয়াকে বাড়িটি না নিতে পরামর্শও দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, এরশাদ চাইতেন না যে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে যোগ দিন। সেনানিবাসে থেকে যে রাজনীতি করা যায় না সেটিও তিনি জানতেন। সেই কারণেও এরশাদ সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার জন্য বাড়িটি বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
এটি ছিল ১৯১১ সালের সেনা আইনের মারাত্মক বরখেলাপ। সামরিক ভূমি সম্পত্তি আইন অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকাণ্ডে ব্যবহূত কোনো জমি বা বাড়ি বেসামরিক ব্যক্তিকে দেওয়া যায় না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেখানে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা আইনসম্মত হবে না। সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সেনাবাহিনীর কাজেই ব্যবহূত হতে হবে। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকা পর্যন্ত এটি সেনা-উপপ্রধানের বাসভবন ছিল।
সে দিক থেকে দেখলে সাবেক সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াকে এ বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়াই ছিল আইনবহির্ভূত। আদালত যথার্থই রায় দিয়েছেন এবং খালেদা জিয়ার উচিত ছিল সেই রায় মেনে নিয়ে সসম্মানে বাড়িটি ছেড়ে দেওয়া।
কিন্তু আমার ধারণা, তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে ভালো পরামর্শ দেননি। তাঁদের উদ্দেশ্য যে ভালো ছিল না তার প্রমাণ শুক্রবার সকালে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তাঁরা সাক্ষাৎ করলেন, বৃহস্পতিবার গেলেন না কেন? আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে তাঁরা সেখানে যেতে পারেন না। তাঁরা যেতে পারেন তাঁদের মক্কেলের স্বার্থরক্ষার জন্য। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার পর আইনজীবীরা যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, তাও সমর্থনযোগ্য নয়।
সুপ্রিম কোর্টের লিভ টু আপিলের আবেদনের সঙ্গেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা স্থগিতাদেশ চাননি। এর অর্থ হলো, তাঁরা হাইকোর্টের রায় মেনে নিয়েছেন। আসলে তাঁরা খালেদা জিয়ার বাড়িকে ব্যবহার করে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চেয়েছিলেন বা তাঁর আনুকূল্য লাভে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁদের কারণেই খালেদা জিয়া অপদস্ত হলেন। এরপর বিএনপির নেতারা যে কাজটি করলেন, তাতে বিএনপির প্রতি জনগণের সহানুভূতি বা সমর্থন থাকার কথা নয়। মানুষ দেখল, একটি বাড়ির জন্য বিএনপি লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার জন্য খালেদা জিয়া যে সহানুভূতি পেতে পারতেন, ঈদের আগে হরতাল ডাকার জন্য তাও পেলেন না। আসলে বিএনপি এটিকে রাজনৈতিক ইস্যু বানাতে চেয়েছিল, সে ক্ষেত্রে তারা সফল না ব্যর্থ হয়েছে সেই বিচার জনগণই করবে।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে সরকার বা সামরিক ভূসম্পত্তি প্রশাসক তাড়াহুড়া না করলেও পারত। আদালতের রায় যখন তাদের পক্ষে ছিল, তখন কাজটি আরও কদিন পর করলেও অসুবিধার কিছু ছিল না। তাতে জনগণ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেত।
আমি মনে করিনা, এই ঘটনা সেনাবাহিনীতে কোনো প্রভাব ফেলবে। তবে বিবদমান রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক নয়। আমাদের রাজনীতিতে পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধের অভাব সব সময়ই ছিল। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবাইকে সহনশীল মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আমীন আহম্মেদ চৌধুরী বীর বিক্রম: অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও সাবেক রাষ্ট্রদূত।
No comments