গাড়ি পোড়ানো মামলা-ফখরুলসহ ১৮ দলীয় নেতাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

হরতালের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাঁদের আগাম জামিনের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য গঠিত বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হকের তৃতীয় বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।

গতকাল রবিবার দেওয়া নির্দেশে বলা হয়, আগামী ১৬ মের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে আগাম জামিনের আবেদনকারীদের। একই বেঞ্চে সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় একই আসামিদের আগাম জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে গতকাল। আজ সোমবার আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেবেন।
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ ঘটনার প্রতিবাদে গত ২৯ ও ৩০ এপ্রিল বিরোধী দলের হরতালের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। একই দিনে সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই দুই ঘটনায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের আসামি করে শাহবাগ ও তেজগাঁও থানায় দুটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
পরে মামলা দুটির আসামি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, সাদেক হোসেন খোকা, শেখ শওকত হোসেন নিলু, শফিউল আলম প্রধান, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, আমানউল্লাহ আমান, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নীরব, শরাফত আলী সপু, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শাম্মী আক্তার, রেহানা আক্তার, নিলুফার মনি, আসিফা আশরাফী পাপিয়া, আবুল বাসার, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মুরতাজুল করিম বাদরু, আমিরুল ইসলাম আলীম প্রমুখ আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন।
গত ৭ মে নেতারা বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের বেঞ্চে হাজির হন। শুনানি শেষে বিচারপতিরা বিভক্ত আদেশ দেন।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। আর কনিষ্ঠ বিচারপতি সরাসরি জামিন না দিয়ে তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। বিষয়টির মীমাংসার জন্য আগাম জামিনের আবেদনের নথি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। প্রধান বিচারপতি সেই নথি শুনানির জন্য বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হকের তৃতীয় বেঞ্চে পাঠান।
গতকাল সকালে আসামিদের পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শুনানি করতে চাইলে আদালত দুপুরে শুনানির সময় ধার্য করেন। প্রথমে তেজগাঁওয়ে গাড়ি পোড়ানোর মামলার শুনানি হয়। সে সময় ১৮ দলীয় জোট নেতারা হাইকোর্টে হাজির ছিলেন। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার জোট নেতাদের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
আদালত আদেশে বলেছেন, যেহেতু মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে সেহেতু আগাম জামিন মঞ্জুরের কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে আবেদন নাকচ করা হলো।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আসামিরা মুক্ত অবস্থায় আগামী ১৬ তারিখের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইবেন। এ সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তারের সুযোগ নেই।
সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার শুনানিতে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। আসামিদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সচিবালয়ে আসামিরা ঢোকেননি। বোমা বিস্ফোরণের মামলায় তাঁদের জড়িত করা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
শুনানি শেষে আদালত আজ সোমবার আদেশ দেবেন বলে জানান।
উভয় মামলায় সরকারপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গাড়ি পোড়ানোর মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে আগাম জামিনের সুযোগ নেই। আগাম জামিনের আবেদন যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের অবশ্যই ১৬ মের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর শাহবাগ থানায় দায়ের করা সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণের মামলার বিষয়ে সোমবার (আজ) আদেশ হবে।
অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি ২১ মে : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৪৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দাখিল করা অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য আগামী ২১ মে ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ এ আদেশ দেন।
গতকাল শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। মামলায় জামিনে থাকা একমাত্র আসামি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। অন্যদিকে এ মামলার আসামি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর জামিনের শুনানির জন্য নথি মহানগর দায়রা জজ আদালতে থাকায় পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।