তথ্য অধিকার-আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবতা by সানজিদা সোবহান
আজ ২৯ মার্চ ২০১০ সাল; গত বছরের এই দিনে নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তথ্য অধিকার আইন গৃহীত হয়। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আইনের ২ ধারায় যাঁরা তথ্য প্রদান করবেন,
তাঁদের কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বা সরকারি তহবিল থেকে সাহায্যপুষ্ট কোনো বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এবং ‘বিদেশি সাহায্যপুষ্ট কোনো বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান’কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহও তাদের কর্মকাণ্ড-সম্পর্কিত তথ্য জনগণের কাছে প্রকাশ ও প্রদান করতে বাধ্য। আইনানুযায়ী, বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিশ্রুত জনসেবামূলক কাজগুলো সঠিকভাবে পালন না করলে, তাদের কার্যাবলি পরখ করার ক্ষমতা জনগণকে দেওয়া হয়েছে।
আমরা জানি, জাতীয় বাজেটের বড় অংশের অর্থ বরাদ্দ করা হয় সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সেবামূলক খাতে। এসব সেবা সম্পর্কে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যথাসময়ে তথ্য না পেলে সে তার জীবন-মানের পরিবর্তনে কোনোভাবেই সক্ষম হবে না। অপরদিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সব জনগণকে তথ্য জানিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করলে সরকারের জন্য অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহ বয়স্ক-ভাতা, বিধবা-ভাতা, ভিজিএফের সুবিধাভোগী সবাইকে প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাগুলো গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনিভাবে স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ ও যানবাহন-ব্যবস্থার মতো অধিক সংখ্যক সরকারি কার্যক্রম যদি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা যায়, তাহলে এসব সেবা প্রদানে যেমন স্বচ্ছতা আসে, তেমনি জনগণ সঠিকভাবে সেবাগুলো পেতে পারে। জনগণ তাদের ন্যায্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হলে এ আইন প্রয়োগ করে সেগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের পাওনা বা ন্যায্য সুবিধাগুলো আদায় করে নিতে পারবে। তথ্য অধিকার আইনের মূল চেতনা এখানেই।
তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করে শিক্ষা-ব্যবস্থায় সব শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীর জন্য মেধার ভিত্তিতে সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড উদাহরণ সৃষ্টি করে। একজন মা তাঁর সন্তানকে দেশের একটি অভিজাত স্কুলে ভর্তি করতে অকৃতকার্য হলে প্রথমে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতকার্য ও অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর সম্পর্কে তথ্য জানতে চান। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদনে সাড়া না দিলে তিনি তথ্য কমিশনের কাছে এ আইনের আওতায় আপিল করেন। তাঁর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় যে স্কুলটিতে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সন্তানেরা আপিলকারীর মেয়ের চাইতে কম নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করতে হবে মর্মে আদেশ জারি করতে বাধ্য হয়।
এভাবেই তথ্য প্রাপ্তি প্রান্তিক অবস্থানে থাকা নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। একজন দিনমজুর জানতে পারেন, একজন ঠিকাদার তাঁর কাজের জন্য বরাদ্দ প্রাপ্য মজুরি তাঁকে দিচ্ছেন কি না; একটি ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারেন, যদি তিনি জানতে পারেন যে দরপত্রে তিনি হেরে গিয়েছেন তাতে অযাচিত প্রভাবের কারণে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অন্য একজন দরপত্র প্রদানকারীকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকলে এলাকাবাসী তার এলাকায় নির্মীয়মাণ রাস্তার গুণগত মান চুক্তিপত্রে উল্লিখিত নকশা ও উপকরণ অনুযায়ী হচ্ছে কি না, যাচাই করতে পারে।
বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইনটির সব ধারা কার্যকর করা হয় ১ জুলাই ২০০৯ থেকে। এ ক্ষেত্রে তিনটি ধারা বাদ দিয়ে সব ধারা ২০০৮ তারিখে কার্যকর করা হয়েছে। তিনটি ধারার মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার জন্য অনুরোধ, তথ্য না পেলে আপিল এবং অভিযোগ দায়েরের বিধানগুলো কার্যকর করা হয় ১ জুলাই ২০০৯ থেকে। পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল যেসব দেশে তথ্য অধিকার আইন আছে, সেসব দেশে প্রচলিত তথ্য অধিকার আইনের সব ধারা একসঙ্গে কার্যকর করা হয়নি। সব প্রতিষ্ঠানে তথ্য দেওয়ার জন্য যে সুযোগ, ব্যবস্থা এবং পদ্ধতি চালু থাকা দরকার, সেগুলোকে আইন কার্যকর হওয়ার আগে প্রস্তুত করে নেওয়া হচ্ছে এর মূল উদ্দেশ্য।
আমাদের আইন সংসদে পাস হওয়ার পর তিন সদস্যবিশিষ্ট তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; ভারতে আইনটি গৃহীত হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে বিধি প্রণয়নের কাজটি সম্পন্ন হয়। জানা গেছে, আমাদের বিধি প্রণয়নের কাজটি চূড়ান্তকরণের পর্যায়ে আছে। ইতিমধ্যে তথ্য কমিশন বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে অবহিতকরণ সভা করেছে; তথ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য কর্মকর্তাদের জন্য আইন সম্পর্কে অবহিতকরণ সভা করেছে; প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অর্থাৎ তথ্য চাওয়া হলে যাঁরা তথ্য দেবেন, তাঁদের তালিকা প্রস্তুত ও ডেটাবেইজে সংরক্ষণের কাজ চলছে। আমরা আশা করি, এ কাজটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের জন্য তালিকাটি প্রকাশ করা হবে। এখনো তথ্য অধিকার ও আইন সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও ধারণা সৃষ্টি হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা তথ্য অধিকার আইনের আওতায় জনগণকে তথ্য দিতে বাধ্য, তাদের প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সম্পর্কে নিজস্ব উদ্যোগে জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ বছর ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মহাজোট সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের একপর্যায়ে বলে, ‘আমরা মুক্ত চিন্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে চাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ সংশোধনের প্রস্তাব ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ ভিত্তিতে তথ্য অধিকার বিধিমালা, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।’ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সূত্র ধরে এ মুহূর্তে সব প্রতিষ্ঠানেরই প্রয়োজন তথ্য অধিকার আইন সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সব উদ্যোগ গ্রহণ করে সেগুলো দৃশ্যমান করা। নইলে তথ্য অধিকার জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুশাসন ও মানবাধিকারের রক্ষাকবচ—এ চেতনাটি ক্রমশ হারিয়ে যাবে।
সানজিদা সোবহান: তথ্য অধিকার বিষয়ে ফোকাল পয়েন্ট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
আমরা জানি, জাতীয় বাজেটের বড় অংশের অর্থ বরাদ্দ করা হয় সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সেবামূলক খাতে। এসব সেবা সম্পর্কে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যথাসময়ে তথ্য না পেলে সে তার জীবন-মানের পরিবর্তনে কোনোভাবেই সক্ষম হবে না। অপরদিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সব জনগণকে তথ্য জানিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করলে সরকারের জন্য অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহ বয়স্ক-ভাতা, বিধবা-ভাতা, ভিজিএফের সুবিধাভোগী সবাইকে প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাগুলো গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনিভাবে স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ ও যানবাহন-ব্যবস্থার মতো অধিক সংখ্যক সরকারি কার্যক্রম যদি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা যায়, তাহলে এসব সেবা প্রদানে যেমন স্বচ্ছতা আসে, তেমনি জনগণ সঠিকভাবে সেবাগুলো পেতে পারে। জনগণ তাদের ন্যায্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হলে এ আইন প্রয়োগ করে সেগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের পাওনা বা ন্যায্য সুবিধাগুলো আদায় করে নিতে পারবে। তথ্য অধিকার আইনের মূল চেতনা এখানেই।
তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করে শিক্ষা-ব্যবস্থায় সব শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীর জন্য মেধার ভিত্তিতে সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড উদাহরণ সৃষ্টি করে। একজন মা তাঁর সন্তানকে দেশের একটি অভিজাত স্কুলে ভর্তি করতে অকৃতকার্য হলে প্রথমে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতকার্য ও অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর সম্পর্কে তথ্য জানতে চান। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদনে সাড়া না দিলে তিনি তথ্য কমিশনের কাছে এ আইনের আওতায় আপিল করেন। তাঁর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় যে স্কুলটিতে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সন্তানেরা আপিলকারীর মেয়ের চাইতে কম নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করতে হবে মর্মে আদেশ জারি করতে বাধ্য হয়।
এভাবেই তথ্য প্রাপ্তি প্রান্তিক অবস্থানে থাকা নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। একজন দিনমজুর জানতে পারেন, একজন ঠিকাদার তাঁর কাজের জন্য বরাদ্দ প্রাপ্য মজুরি তাঁকে দিচ্ছেন কি না; একটি ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারেন, যদি তিনি জানতে পারেন যে দরপত্রে তিনি হেরে গিয়েছেন তাতে অযাচিত প্রভাবের কারণে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অন্য একজন দরপত্র প্রদানকারীকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকলে এলাকাবাসী তার এলাকায় নির্মীয়মাণ রাস্তার গুণগত মান চুক্তিপত্রে উল্লিখিত নকশা ও উপকরণ অনুযায়ী হচ্ছে কি না, যাচাই করতে পারে।
বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইনটির সব ধারা কার্যকর করা হয় ১ জুলাই ২০০৯ থেকে। এ ক্ষেত্রে তিনটি ধারা বাদ দিয়ে সব ধারা ২০০৮ তারিখে কার্যকর করা হয়েছে। তিনটি ধারার মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার জন্য অনুরোধ, তথ্য না পেলে আপিল এবং অভিযোগ দায়েরের বিধানগুলো কার্যকর করা হয় ১ জুলাই ২০০৯ থেকে। পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল যেসব দেশে তথ্য অধিকার আইন আছে, সেসব দেশে প্রচলিত তথ্য অধিকার আইনের সব ধারা একসঙ্গে কার্যকর করা হয়নি। সব প্রতিষ্ঠানে তথ্য দেওয়ার জন্য যে সুযোগ, ব্যবস্থা এবং পদ্ধতি চালু থাকা দরকার, সেগুলোকে আইন কার্যকর হওয়ার আগে প্রস্তুত করে নেওয়া হচ্ছে এর মূল উদ্দেশ্য।
আমাদের আইন সংসদে পাস হওয়ার পর তিন সদস্যবিশিষ্ট তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; ভারতে আইনটি গৃহীত হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে বিধি প্রণয়নের কাজটি সম্পন্ন হয়। জানা গেছে, আমাদের বিধি প্রণয়নের কাজটি চূড়ান্তকরণের পর্যায়ে আছে। ইতিমধ্যে তথ্য কমিশন বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে অবহিতকরণ সভা করেছে; তথ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য কর্মকর্তাদের জন্য আইন সম্পর্কে অবহিতকরণ সভা করেছে; প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অর্থাৎ তথ্য চাওয়া হলে যাঁরা তথ্য দেবেন, তাঁদের তালিকা প্রস্তুত ও ডেটাবেইজে সংরক্ষণের কাজ চলছে। আমরা আশা করি, এ কাজটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের জন্য তালিকাটি প্রকাশ করা হবে। এখনো তথ্য অধিকার ও আইন সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও ধারণা সৃষ্টি হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা তথ্য অধিকার আইনের আওতায় জনগণকে তথ্য দিতে বাধ্য, তাদের প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সম্পর্কে নিজস্ব উদ্যোগে জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ বছর ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মহাজোট সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের একপর্যায়ে বলে, ‘আমরা মুক্ত চিন্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে চাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ সংশোধনের প্রস্তাব ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ ভিত্তিতে তথ্য অধিকার বিধিমালা, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।’ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সূত্র ধরে এ মুহূর্তে সব প্রতিষ্ঠানেরই প্রয়োজন তথ্য অধিকার আইন সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সব উদ্যোগ গ্রহণ করে সেগুলো দৃশ্যমান করা। নইলে তথ্য অধিকার জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুশাসন ও মানবাধিকারের রক্ষাকবচ—এ চেতনাটি ক্রমশ হারিয়ে যাবে।
সানজিদা সোবহান: তথ্য অধিকার বিষয়ে ফোকাল পয়েন্ট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
No comments