রেলের তদন্ত প্রতিবেদন-ইউসুফ-এনামুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ

অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা ও রেল নিরাপত্তা বাহিনী ঢাকার কমান্ড্যান্ট এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে রেলের তদন্ত কমিটি। সেই সঙ্গে ৯ এপ্রিল রাতে বিজিবি গেটে ধরা পড়া ৭০ লাখ টাকার ব্যাপারে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করেছে কমিটি।


রেল কর্মকর্তা ইউসুফ ও এনামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠিত কমিটি গতকাল রবিবার দুপুরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ৭৭ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনের মধ্যে মূল প্রতিবেদন সাত পৃষ্ঠার। অন্য পৃষ্ঠাগুলো ঘটনা-সংশ্লিষ্ট নথিপত্র।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে গতকাল রেল ভবনে তদন্ত কমিটির প্রধান রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। এ ঘটনা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না, তবে ঘটনাটি ছিল অস্বাভাবিক।
প্রতিবেদনে কী সুপারিশ করা হয়েছে, তা সাংবাদিকদের জানানো হয়নি। আজকালের মধ্যে তা জানানো হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। গতকাল বিকেলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফজলে কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বেলা আড়াইটার দিকে তদন্ত কমিটি আমার কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে কী আছে তা আমি এখনো দেখিনি।'
মন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক বা রেল কর্মকর্তারা সেই রাতে কোথায় যাচ্ছিলেন তদন্তে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এসেছে কি না জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান আবু তাহের বলেন, সরকার চাইলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে গাড়িচালক আজম খানের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শশী কুমার সিংহ বলেন, 'কমিটির মূল কাজ ছিল ঘটনার সঙ্গে ইউসুফ ও এনামুলের বিষয়টি খতিয়ে দেখা। আমরা তাদের বক্তব্য নিয়েছি। কিন্তু ওমর ফারুকের গাড়িচালক আজম খানের বক্তব্য নিতে পারিনি।'
তদন্ত কমিটির প্রধান আবু তাহের বলেন, সেই রাতে ফারুক মোট ৭০ লাখ টাকা নিয়ে বিজিবি সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন। ওই ৭০ লাখ টাকা ছিল ওমর ফারুকের। সেই ঘটনার পর নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা দিয়েছেন ফারুক। ৭০ লাখ টাকা ফারুকের নিজের ছিল বলেই তিনি তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন। এর সঙ্গে ইউসুফ আলী মৃধা বা এনামুল হকেরও কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
ওই অর্থের উৎস কী ছিল, কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না- জানতে চাইলে আবু তাহের বলেন, এটি রেলের তদন্তের বিষয় নয়। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে।
তদন্ত কমিটি বিজিবির আট সদস্যসহ মোট ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানিয়ে আবু তাহের বলেন, গাড়িচালক আজম ছাড়া অন্য সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজমের জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া তদন্ত সঠিক হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেলভবনে তাঁকে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও তাঁর বাড়ির ঠিকানায় চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তিনি উপস্থিত হননি।' আজমের বক্তব্য ছাড়াই তদন্ত কমিটি সঠিকভাবে প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে তিনি দাবি করেন।
বিজিবি সদস্যরা তদন্ত কমিটির কাছে কি তথ্য দিয়েছেন জানতে চাইলে আবু তাহের বলেন, গাড়িতে সংসদ সদস্যের স্টিকার থাকায় তল্লাশি ছাড়াই গাড়িটি ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। তবে গাড়িতে কত টাকা ছিল সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি বিজিবি সদস্যরা।
উল্লেখ্য, গত ৯ এপ্রিল রাতে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের ফটকে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুকের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়। পূর্বাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা এবং রেল পুলিশের কমান্ড্যান্ট এনামুল হকও ওই গাড়িতে ছিলেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ওই অর্থ রেলের বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য ঘুষ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। এই টাকার পরিমাণ ছিল ৭০ লাখ টাকা। তবে কোনো কোনো সূত্রের দাবি, প্রকৃতপক্ষে টাকার পরিমাণ ছিল চার কোটি ৭০ লাখ। অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর ইউসুফ আলী মৃধা ও এনামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চাকরিচ্যুত হন ওমর ফারুক। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ঘটনার পরদিন তদন্ত কমিটি করে রেল কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.