চারদিক-মা হয়ে ‘মা’কে বুঝতে হলো!
কাল ছিল আন্তর্জাতিক মা দিবস। বারবার একটা প্রশ্নই উঠে আসছে মনে, মাকে কি আমরা বুঝে উঠতে পারি?
রক্ত-জঠরে গড়ে তোলা এক পাত্রের নাম। শরীর ছেঁকে পান করানো অস্তিত্বের নাম। অক্লান্ত পরিশ্রমের নাম। নির্ঘুম রাতের নাম। বিচলিত হূদয়ের নাম। অদৃশ্য বাতাসের নাম। স্বপ্ন দেখা আকাশের নাম। ছায়া দেওয়া এক বৃক্ষের নাম।
রক্ত-জঠরে গড়ে তোলা এক পাত্রের নাম। শরীর ছেঁকে পান করানো অস্তিত্বের নাম। অক্লান্ত পরিশ্রমের নাম। নির্ঘুম রাতের নাম। বিচলিত হূদয়ের নাম। অদৃশ্য বাতাসের নাম। স্বপ্ন দেখা আকাশের নাম। ছায়া দেওয়া এক বৃক্ষের নাম।
মায়া-মমতায় অবিশ্রান্ত এক ঢলের নাম। সর্বংসহা মৃত্তিকার নাম। মা রূপকথার নাম।
২.
সন্তানের জন্য মায়ের প্রতীকী রূপগুলো সমাজে আবার অন্য রকম। এখানে মা উপেক্ষিত এক লিঙ্গের নাম। অবহেলিত এক পরিচিতির নাম। ‘তুমি মা, তুমি করবা না, কে করবে?’ মতবাদের এক উপহাসের নাম। লিঙ্গবৈষম্যে কুঁকড়ে যাওয়া এক অস্তিত্বের নাম। দায়িত্বহীন মানুষদের আস্ফাালনে বিহ্বল এক সম্পর্কের নাম। পুষ্টিহীনতায় ভোগা এক ভগ্নস্বাস্থ্যের নাম। ভাষার মাধুর্যে প্রশান্তি দেওয়ার ব্যর্থ এক প্রচেষ্টার নাম। সন্তানের ত্রুটিপূর্ণ আচরণের দায় বর্তে যাওয়া অভিভাবকের নাম।
৩.
প্রাকৃতিক নির্বাচনে বংশবৃদ্ধির দায়িত্ব নেওয়া মানুষটির নাম মা। অভূতপূর্ব এক আনন্দের অনুভূতি, স্বপ্ন, শঙ্কা, মৃত্যুভয়, অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে শুরু হয় প্রতিটি মায়ের গল্প। সে গল্প কখনো ভালোবাসার আবেগে, কখনো কষ্টের নিগঢ়ে, কখনো শঙ্কার দোলাচলে আর কখনো কখনো সামাজিক চাপে এগিয়ে চলে। মা নিজেই একসময় আর এক মায়ের মেয়ে থাকে। তখন সে থাকে বাবার বংশের কেউ। যখন বড় হয়, তখন কেমন করে যেন আর বাবার বংশটাকে এগিয়ে নিতে পারে না। আর এক বংশ রক্ষা করার দায়িত্ব বর্তায় তার শরীরে। শাব্দিক অর্থেই নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে গড়ে তোলে সন্তানকে। কিন্তু সন্তানটি আর মায়ের রক্তের স্বীকৃতি পায় না। রক্তটা পুরুষদের হয়ে যায়। সন্তান যখন বুদ্ধিবৃত্তিতে এগিয়ে থাকে, তখন তার পুরোটাই পিতৃকূলের উত্তরাধিকার। আর মন্দ করলে? সব দোষ মায়ের। কখনো কখনো মেয়েদের স্ত্রী হিসেবে আটকে রাখার হাতিয়ার ‘মা’ বানিয়ে ফেলা। সেই মায়ের মানসিক যে টানাপোড়েন, তার চেয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া ভালো। সন্তানের জন্য সমঝোতা যেন চিরন্তন এক সত্যে পরিণত হয়েছে। সন্তানকে ব্যবহার করে স্ত্রীকে হাতের মুঠোয় রাখার ফায়দা লোটা যেন সংসার-রাজনীতি। গর্ভে ধারণ কিংবা প্রসব-পরবর্তী যত্ন পাওয়া ভাগ্যবান মায়ের সংখ্যা গুনে বের করা যাবে। কিন্তু মা হতে গিয়ে কিংবা সন্তানকে বড় করতে গিয়ে শরীর ভেঙে যাওয়া মায়ের সংখ্যা অগণিত। যেটার প্রভাব পড়ে প্রতিদিনকার সংসারে। কাজ করতে না পারলে দোষ, রাতে সঙ্গী না হতে পারার ব্যর্থতা—সব মায়ের অদৃষ্ট। সন্তান রেখে বাবারা যখন বিয়ে করে তখনো মায়েরই সমস্যা। যদি উল্টোটা ঘটে তাহলেই হলো! ‘মা’ হয়ে যায় ‘চরিত্রহীন’ কেউ! মায়েদের মনে কখনো প্রেম জন্মাতে নেই। মা পৃথিবীর সুন্দরতম ডাকের নাম। সুন্দরতম সম্পর্কের নাম। প্রতিষ্ঠিত কিছু বাক্য মায়ের নামে প্রশান্তি এনে দেয় ঠিকই। কিন্তু কখনো অবসর পেলে মায়ের মনেও প্রশ্ন জাগে। শুধু কি তাই? মায়ের ব্যক্তি-অস্তিত্ব, জৈবিক-অস্তিত্ব কিংবা সামাজিক বা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা—এসব নিয়ে ভাববে কে? সে নিজে, নাকি পরিবার, নাকি সমাজ? প্রশ্নই শুধু তৈরি হয়। উত্তর মেলে না কখনো। সন্তান নিয়ে মায়ের মনে যে স্বপ্ন কিংবা সুখ তৈরি হয় তার স্বীকৃতি সর্বজনীন। দুঃস্বপ্ন কিংবা হতাশার কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলে সেটা শুধু বাতাস হয়ে যায়। মাথা ঘামায় না কেউ।
৪.
সন্তান বড় হয়ে যখন নিজে একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠে তখন নিত্যকার দিনযাপনে মায়ের আর কোনো গুরুত্ব থাকে না। শুধু মনের ভেতরে একটা সরষেদানা মন মায়ের জন্য ভালোবাসা নিয়ে খচখচ করে বাজে। হয়তো সেটাই সত্যি। হয়তো সে জন্যই প্রতীকী একটা দিবসের দরকার হয়—‘মা দিবস’। সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক মুক্তি না থাকায় বেশির ভাগ মা-ই তাকিয়ে থাকেন সন্তানের দিকে। কোনো কোনো সন্তানের সে বোধটুকু থাকলেও মায়ের ভেতরকার আশা-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারা সন্তানের সংখ্যা খুব বেশি নয়। উৎসবে-পার্বণে পোশাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহার্য জিনিস, চিকিৎসা—যা কিছুই মা পান না কেন, সবই সন্তানের ইচ্ছায়। জন্ম থেকে একটা মেয়ে তার ভেতরকার কথাগুলো চেপে যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত চেপে রেখেই মরে যায়। কারই-বা অত ঠেকা মায়ের ভেতরকার ব্যক্তিমানুষটাকে খুঁজে বের করার?
সন্তানকে ভালোবেসে মিথ্যে বলা মায়েদের অভ্যাস। ‘আমার খিদে নেই, কষ্ট হচ্ছে না, দরকার নেই, শরীরে কোনো সমস্যা নেই’—সব মিথ্যে। আর এই মিথ্যের পেছনে সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় কোনো মিথ্যে নেই।
৫.
সন্তান হিসেবে আমার নিজের মাকে মনে পড়ছে। অবশেষে নিজে মা হয়ে মাকে বুঝতে হলো! মা, প্রণমি তোমায়। পৃথিবীর সব মাকে অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা আর সন্তানদের জন্য শুভকামনা।
বেনু বেগম
লালমনিরহাট
২.
সন্তানের জন্য মায়ের প্রতীকী রূপগুলো সমাজে আবার অন্য রকম। এখানে মা উপেক্ষিত এক লিঙ্গের নাম। অবহেলিত এক পরিচিতির নাম। ‘তুমি মা, তুমি করবা না, কে করবে?’ মতবাদের এক উপহাসের নাম। লিঙ্গবৈষম্যে কুঁকড়ে যাওয়া এক অস্তিত্বের নাম। দায়িত্বহীন মানুষদের আস্ফাালনে বিহ্বল এক সম্পর্কের নাম। পুষ্টিহীনতায় ভোগা এক ভগ্নস্বাস্থ্যের নাম। ভাষার মাধুর্যে প্রশান্তি দেওয়ার ব্যর্থ এক প্রচেষ্টার নাম। সন্তানের ত্রুটিপূর্ণ আচরণের দায় বর্তে যাওয়া অভিভাবকের নাম।
৩.
প্রাকৃতিক নির্বাচনে বংশবৃদ্ধির দায়িত্ব নেওয়া মানুষটির নাম মা। অভূতপূর্ব এক আনন্দের অনুভূতি, স্বপ্ন, শঙ্কা, মৃত্যুভয়, অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে শুরু হয় প্রতিটি মায়ের গল্প। সে গল্প কখনো ভালোবাসার আবেগে, কখনো কষ্টের নিগঢ়ে, কখনো শঙ্কার দোলাচলে আর কখনো কখনো সামাজিক চাপে এগিয়ে চলে। মা নিজেই একসময় আর এক মায়ের মেয়ে থাকে। তখন সে থাকে বাবার বংশের কেউ। যখন বড় হয়, তখন কেমন করে যেন আর বাবার বংশটাকে এগিয়ে নিতে পারে না। আর এক বংশ রক্ষা করার দায়িত্ব বর্তায় তার শরীরে। শাব্দিক অর্থেই নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে গড়ে তোলে সন্তানকে। কিন্তু সন্তানটি আর মায়ের রক্তের স্বীকৃতি পায় না। রক্তটা পুরুষদের হয়ে যায়। সন্তান যখন বুদ্ধিবৃত্তিতে এগিয়ে থাকে, তখন তার পুরোটাই পিতৃকূলের উত্তরাধিকার। আর মন্দ করলে? সব দোষ মায়ের। কখনো কখনো মেয়েদের স্ত্রী হিসেবে আটকে রাখার হাতিয়ার ‘মা’ বানিয়ে ফেলা। সেই মায়ের মানসিক যে টানাপোড়েন, তার চেয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া ভালো। সন্তানের জন্য সমঝোতা যেন চিরন্তন এক সত্যে পরিণত হয়েছে। সন্তানকে ব্যবহার করে স্ত্রীকে হাতের মুঠোয় রাখার ফায়দা লোটা যেন সংসার-রাজনীতি। গর্ভে ধারণ কিংবা প্রসব-পরবর্তী যত্ন পাওয়া ভাগ্যবান মায়ের সংখ্যা গুনে বের করা যাবে। কিন্তু মা হতে গিয়ে কিংবা সন্তানকে বড় করতে গিয়ে শরীর ভেঙে যাওয়া মায়ের সংখ্যা অগণিত। যেটার প্রভাব পড়ে প্রতিদিনকার সংসারে। কাজ করতে না পারলে দোষ, রাতে সঙ্গী না হতে পারার ব্যর্থতা—সব মায়ের অদৃষ্ট। সন্তান রেখে বাবারা যখন বিয়ে করে তখনো মায়েরই সমস্যা। যদি উল্টোটা ঘটে তাহলেই হলো! ‘মা’ হয়ে যায় ‘চরিত্রহীন’ কেউ! মায়েদের মনে কখনো প্রেম জন্মাতে নেই। মা পৃথিবীর সুন্দরতম ডাকের নাম। সুন্দরতম সম্পর্কের নাম। প্রতিষ্ঠিত কিছু বাক্য মায়ের নামে প্রশান্তি এনে দেয় ঠিকই। কিন্তু কখনো অবসর পেলে মায়ের মনেও প্রশ্ন জাগে। শুধু কি তাই? মায়ের ব্যক্তি-অস্তিত্ব, জৈবিক-অস্তিত্ব কিংবা সামাজিক বা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা—এসব নিয়ে ভাববে কে? সে নিজে, নাকি পরিবার, নাকি সমাজ? প্রশ্নই শুধু তৈরি হয়। উত্তর মেলে না কখনো। সন্তান নিয়ে মায়ের মনে যে স্বপ্ন কিংবা সুখ তৈরি হয় তার স্বীকৃতি সর্বজনীন। দুঃস্বপ্ন কিংবা হতাশার কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলে সেটা শুধু বাতাস হয়ে যায়। মাথা ঘামায় না কেউ।
৪.
সন্তান বড় হয়ে যখন নিজে একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠে তখন নিত্যকার দিনযাপনে মায়ের আর কোনো গুরুত্ব থাকে না। শুধু মনের ভেতরে একটা সরষেদানা মন মায়ের জন্য ভালোবাসা নিয়ে খচখচ করে বাজে। হয়তো সেটাই সত্যি। হয়তো সে জন্যই প্রতীকী একটা দিবসের দরকার হয়—‘মা দিবস’। সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক মুক্তি না থাকায় বেশির ভাগ মা-ই তাকিয়ে থাকেন সন্তানের দিকে। কোনো কোনো সন্তানের সে বোধটুকু থাকলেও মায়ের ভেতরকার আশা-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারা সন্তানের সংখ্যা খুব বেশি নয়। উৎসবে-পার্বণে পোশাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহার্য জিনিস, চিকিৎসা—যা কিছুই মা পান না কেন, সবই সন্তানের ইচ্ছায়। জন্ম থেকে একটা মেয়ে তার ভেতরকার কথাগুলো চেপে যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত চেপে রেখেই মরে যায়। কারই-বা অত ঠেকা মায়ের ভেতরকার ব্যক্তিমানুষটাকে খুঁজে বের করার?
সন্তানকে ভালোবেসে মিথ্যে বলা মায়েদের অভ্যাস। ‘আমার খিদে নেই, কষ্ট হচ্ছে না, দরকার নেই, শরীরে কোনো সমস্যা নেই’—সব মিথ্যে। আর এই মিথ্যের পেছনে সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় কোনো মিথ্যে নেই।
৫.
সন্তান হিসেবে আমার নিজের মাকে মনে পড়ছে। অবশেষে নিজে মা হয়ে মাকে বুঝতে হলো! মা, প্রণমি তোমায়। পৃথিবীর সব মাকে অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা আর সন্তানদের জন্য শুভকামনা।
বেনু বেগম
লালমনিরহাট
No comments