ঘাতকেরা শাস্তি পাক-সড়ক দুর্ঘটনা
সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা গত বুধবার জাতীয় জাদুঘরে যে ব্যতিক্রমী সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন, তা সবাইকে আবেগাপ্লুত করেছে। ‘সড়ক দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত পরিবারবর্গ’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানে স্বজন হারানো ২১টি পরিবারের সদস্যরা যোগ দিয়েছিলেন।
তাঁরা কেউ সন্তান হারিয়েছেন, কেউ বাবা-মা হারিয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এ ধরনের আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের দেশে অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালক দায়ী, সন্দেহ নেই। যানবাহন চালনার ক্ষেত্রে তাঁরা বেপরোয়া, সে কথাও সত্য। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণও উপেক্ষণীয় নয়। স্বীকার করতে হবে, আমাদের মহাসড়ক ও সেতুগুলো সংকীর্ণ, ভঙ্গুর ও আঁকাবাঁকা। সেখানে চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহন পুরোনো, জীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ। তদুপরি নেই সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। চালক কিংবা যাত্রী—কেউই আইন মেনে চলতে চান না। জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়েও এঁরা চলতে দ্বিধা করেন না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইন প্রণয়নের যে দাবি উঠেছে, তা সমর্থনযোগ্য। তবে আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, তার প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের তিন বছরের কারাদণ্ডের যে বিধান আছে, তা খুবই কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতিও কম দায়ী নয়। আগে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির শাস্তির মেয়াদ বেশি ছিল। কিন্তু এরশাদ সরকারের আমলে চালকেরা আন্দোলন করে শাস্তির মেয়াদ কমাতে বাধ্য করেন।
সড়ক দুর্ঘটনার শিকার পরিবারগুলোর উদ্যোগের প্রতি সর্বমহলের সমর্থন ও সহমর্মিতা আছে। যে স্বজনদের তারা হারিয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনা যাবে না সত্য, কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরও সজাগ হতে হবে। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি—কথাটি শুধু মুখে বললেই হবে না, নিজেদের জীবনাচরণেও তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
No comments