মাদক ট্রানজিট রুট-প্রশাসন কেন নিশ্চুপ?

রাজধানী ঢাকায় মাদক চালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে রূপগঞ্জ ব্যবহৃত হচ্ছে। রোববার সমকালের রাজধানীর উপকণ্ঠ পাতায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রকাশ্যেই সেখানে বিভিন্ন ধরনের মাদক হাত বদল হচ্ছে। ক্যারিয়ারের মাধ্যমে এসব মাদক পেঁৗছে যাচ্ছে রাজধানীর মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আস্তানায়।


আর এসব মাদকের প্রভাবে রাজধানীর তারুণ্যের শক্তি পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার কারণ হচ্ছে এবং অনেক স্থানে বিভিন্ন ধরনের অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। অথচ মাদকের ট্রানজিট রুট গুঁড়িয়ে দেওয়া গেলে রাজধানীকে মাদকের সর্বনাশা খপ্পর থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টায় সাফল্য অসম্ভব ছিল না। পুলিশ প্রশাসন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে কঠোরতা অবলম্বনের সদিচ্ছা থাকলে মাদক ব্যবসায়ীদের নির্মূল না হোক, অন্তত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু তারা তা করবেন কি? প্রতিবেদনেই দেখা যায়, প্রতিদিন এই নির্দিষ্ট ট্রানজিট এলাকার মাধ্যমে তিন কোটি টাকার মতো মাদক রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করে। এসব মাদক রূপগঞ্জে আসে টেকনাফ, আখাউড়া ও কুমিল্লা হয়ে। যেসব সীমান্ত পথ ব্যবহার করে মাদকদ্রব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢোকে, সেগুলোতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েও এ ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করা যেতে পারে। কিন্তু সর্বত্রই দেখা যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অর্থের বিনিময়ে বশ করে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের সর্বনাশা ব্যবসা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। রূপগঞ্জেও একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। প্রকাশ্যে সেখানে মাদক বিভিন্ন ক্যারিয়ারের মাধ্যমে রাজধানীর উদ্দেশে পাঠানো হলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। দৈনিক ও সপ্তাহে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চলে যায়। যেসব খুচরা মাদক ব্যবসায়ী নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করে না, কেবল তাদেরই বেছে বেছে পুলিশ আটক করে। পরে মোটা অঙ্কের নজরানার বিনিময়ে তারাও মুক্ত হয়। এভাবেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কৌশলী পৃষ্ঠপোষকতায় মাদকের ট্রানজিট রুট রূপগঞ্জ রাজধানী ঢাকার অপরাধ জগৎকে পুষ্ট করে চলেছে। রাজধানীকে মাদকের অভিশাপমুক্ত করতে হলে কালবিলম্ব না করে রূপগঞ্জ ট্রানজিট রুটটি গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এর বিরুদ্ধে সচেতন সামাজিক আন্দোলনও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে মাদক চোরাচালান স্থায়ীভাবে বন্ধের উপায়ও খুঁজে বের করতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.