শ্রমিকের শাস্তি আরো বাড়ানোর প্রস্তাব গার্মেন্ট মালিকদের by আবুল কাশেম
শ্রমিকদের সুবিধা বাড়িয়ে সরকার যে সংশোধিত শ্রম আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে, তার খসড়ায় আইন লঙ্ঘনের দায়ে মালিক-শ্রমিক উভয়ের জন্যই কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। মালিকদের কারাদণ্ড দেওয়ার প্রস্তাবে বিরোধিতা করেছে বিজিএমইএ। তাদের কথা হলো, আইন না মানলেও মালিকদের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে না।
আর জরিমানা করলেও এর পরিমাণ হবে খুবই কম। তাদের দাবি, কারখানা পরিচালনা করেন মহাব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপকরা। তাই আইন লঙ্ঘনের দায় এসব কর্মকর্তার ওপর বর্তাবে, মালিকের ওপর নয়। মালিককে কোনোমতেই দণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না। অন্যদিকে আইন লঙ্ঘনকারী শ্রমিকের জন্য খসড়া আইনে সরকার যে পরিমাণ শাস্তি (কারাদণ্ড ও জরিমানা) বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, তা আরো বাড়ানোর সুপারিশ করেছে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। শ্রমমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেছেন, কারো সুপারিশই যে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হবে, এমন নয়। আইন লঙ্ঘন করলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে, তিনি মালিক-শ্রমিক যিনিই হোন।
আইন লঙ্ঘনে মালিকের শাস্তি : শ্রম আইন ২০০৬-এর ২৮৯(১) ধারায় বলা আছে, কোনো মালিক এ আইনের একাদশ অধ্যায় অনুযায়ী ঘোষিত নূ্যনতম মজুরি হারের চেয়ে শ্রমিককে কম মজুরি দিলে ওই মালিক এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। নতুন খসড়া আইনে ঘোষিত নূ্যনতম মজুরির তুলনায় কোনো শ্রমিককে কম মজুরি দেওয়া হলে মালিকের শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রাখতে চাইছে সরকার। কিন্তু বিজিএমইএ বলছে, নূ্যনতম মজুরির চেয়ে শ্রমিককে কম মজুরি দেওয়া হলে শাস্তি হিসেবে মালিক শুধু পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দেবেন। এ বিষয়ে সংগঠনটির বক্তব্য হলো, নতুন প্রস্তাবনায় জরিমানা বর্তমানের তুলনায় পাঁচ গুণ বাড়ানোর পাশাপাশি দণ্ডারোপ করা হয়েছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া কারখানা পরিচালনা করেন মহাব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপক। সুতরাং আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তার দায় তাঁদের ওপর বর্তায়, মালিকের ওপর নয়। সুতরাং মালিককে কোনোভাবেই দণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না।
শ্রম আইন ২০০৬-এর ২৮৩ ধারায় বলা আছে, এ আইনের ৩৩ ধারার অধীনে দেওয়া শ্রম আদালতের কোনো আদেশ কেউ পালন করতে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে তিনি তিন মাস পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ডে, অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সংশোধিত শ্রম আইনের খসড়ার ২৮৩ ধারায় বলা হয়েছে, ৩৩ ধারার অধীনে দেওয়া শ্রম আদালতের কোনো আদেশ কেউ পালন না করলে বা পালন করতে ব্যর্থ হলে তিনি ছয় মাস পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ডে, অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর বিজিএমইএর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩৩ ধারার অধীনে শ্রম আদালতের আদেশ পালনে অস্বীকার করলে বা পালনে ব্যর্থ হলে তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। যুক্তি হিসেবে তারা বলেছে, নতুন প্রস্তাবনায় জরিমানা ও দণ্ড দ্বিগুণ করা হয়েছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রেও তারা সব দায় মালিকের পরিবর্তে কারখানা পরিচালনাকারী মহাব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপকের বলে উল্লেখ করেছে।
বিদ্যমান শ্রম আইনের ২৮৬ (১) ধারায় বলা আছে, কোনো মালিক এই আইনের চতুর্থ অধ্যায়ের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। খসড়া আইনের এ ধারায় শাস্তি বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করেছে সরকার। বিজিএমইএ বলেছে, এ ক্ষেত্রে আগের বিধানই রাখতে হবে। নিজেদের প্রস্তাবের পক্ষে বিজিএমইএর বক্তব্য হলো, নতুন প্রস্তাবনায় জরিমানা বর্তমানের তুলনায় চার গুণ বাড়ানো হয়েছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রেও তারা মালিকের পরিবর্তে কারখানা পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের ওপর দায় বর্তায় বলে মতামত দিয়েছে।
শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩০৬ (১) ধারা অনুযায়ী, এই আইন বা কোনো বিধিবিধানের অধীনে দায়িত্ব পালনকারী কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে, কোনো কর্মকর্তাকে কোনো প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত প্রবেশ, তদন্ত, পরীক্ষা বা পরিদর্শনের জন্য যুক্তিসংগত ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার বা অবহেলা করলে তিনি ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। খসড়া আইনে এই শাস্তি বাড়িয়ে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার কথা বলা হয়েছে। বিজিএমইএ আগের শাস্তিই বহাল রাখার দাবি করেছে।
বিদ্যমান শ্রম আইনের ৩০৬ (২) ধারায় বলা আছে, এ আইনের অধীনে দায়িত্ব পালনরত কোনো কর্মকর্তার তলব অনুযায়ী রক্ষিত কোনো রেজিস্ট্রার, নথি বা দলিল-দস্তাবেজ হাজির করতে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে, দায়িত্ব পালনরত কোনো কর্মকর্তার সামনে কোনো ব্যক্তিকে হাজির হতে বা তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দিলে বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। খসড়া আইনে শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিজিএমইএ আগের শাস্তি বহাল রাখার দাবির সঙ্গে শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেছে, দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি যথাযথভাবে নোটিশ দিয়ে পরিদর্শনে গেছেন। বিজিএমইএর কথার অর্থ হলো, আগে থেকে নোটিশ না দিয়ে পরিদর্শনে যাওয়া যাবে না। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠনটি এ সম্পর্কে আরো বলেছে, নিরাপত্তা প্রহরী বা পরিদর্শনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো ব্যক্তির বাধা দেওয়া বা অন্য কোনো আচরণকে আইনের নির্ধারিত বাধা বলে গণ্য করা যাবে না। মালিককে অযথা হয়রানি বা বেকায়দায় ফেলার জন্য বা অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য পরিদর্শন করছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তা এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩০৭ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি এই আইন বা এর অধীন কোনো বিধিবিধান লঙ্ঘন করলে বা মানতে ব্যর্থ হলে এর শাস্তি হিসেবে আইনে কোনো দণ্ডের বিধান না থাকলেও তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সংশোধিত খসড়ায় এখানে শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে বলে প্রস্তাব করেছে সরকার। বিজিএমইএ আগের দণ্ড বহাল রাখার সুপারিশ করে বলেছে, কিছু কিছু স্বার্থলোভী শ্রমিক রয়েছে, যারা এক কারখানায় চাকরিরত অবস্থায় অন্য কারখানায় বেশি মজুরিতে যোগদান করে আগের কারখানার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বের করার অথবা চাকরিচ্যুতির অভিযোগ তুলে টার্মিনেশন বেনিফিট দাবি করে। কিছু এনজিও বা ফেডারেশনের মাধ্যমে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে। যদিও বিষয়টি সর্বাংশে মিথ্যা; কোনো কাগজও তাদের কাছে থাকে না। তারা তিন থেকে সাত দিনের সময় দিয়ে নোটিশ পাঠিয়ে সেটাকে পুঁজি করেই আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুস্পষ্ট বিধান ও দণ্ড থাকা আবশ্যক।
শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩৫০ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন শ্রম আদালত বা ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্য বা বিচারযোগ্য কোনো মোকদ্দমা, অভিযোগ অথবা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারা অন্য কোনো আদালত গ্রহণ করতে বা বিচার করতে পারবে না। এ বিধান রেখে সংশোধিত খসড়ায় শর্ত হিসেবে সরকার বলছে, এই আইনের ২৯৯, ২৮৯, ৩০২, ৩০৬, ৩০৭ ধারার অধীনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের ক্ষেত্রে কোনো কিছুই বাধা থাকবে না। বিজিএমইএ সংশোধিত এ ধারা মানতে রাজি নয়।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর বক্তব্য হলো, 'তৈরি পোশাক শিল্পে মোবাইল কোর্ট চললে মানুষজন দেখবে। ডালপালাসহ গুজব ছড়াবে, অমুক কারখানার অমুক মালিককে মোবাইল কোর্ট ধরেছে, ব্যাটা নিশ্চয়ই ক্রিমিনাল। আমরা উদ্যোগ নিয়ে দেশে শিল্প গড়েছি। আমরা লাভবান হয়েছি। কর্মসংস্থান হয়েছে। মহিলাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। দেশে অব্যাহতভাবে অতীব জরুরি বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। আমরা চোর-ডাকাত আখ্যায়িত হওয়ার জন্য উদ্যোক্তা হইনি। যথেষ্ট হয়েছে। আমরা এই প্রস্তাব দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এই প্রস্তাবের অধীনে নেওয়া হলে তা হবে দেশের অর্থনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান।'
আইন লঙ্ঘনে শ্রমিকের শাস্তি
২০০৬ সালের শ্রম আইনে অসৎ শ্রম আচরণের জন্য কোনো শাস্তির বিধান নেই। সংশোধিত শ্রম আইনে এর জন্য শাস্তির বিধান রেখে ২৯১ নম্বর ধারা নতুন করে সংযুক্ত করতে চাইছে সরকার। ২৯১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এ আইনের ১৯৫ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিজিএমইএ এখানে কোনো আপত্তি জানায়নি।
প্রস্তাবিত ২৯১ (২) ধারায় বলা আছে, কোনো শ্রমিক ১৯৬ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিজিএমইএ এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের কারাদণ্ড আরো এক বছর বাড়ানোর সুপারিশ করে বলেছে, কোনো শ্রমিক ১৯৬ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
প্রস্তাবিত ২৯১ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক বাদে অন্য কোনো ব্যক্তি ১৯৬ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিজিএমইএ এ ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের পরিমাণ আরো এক বছর বাড়িয়ে তিন বছর করার সুপারিশ করেছে।
শ্রম আইনের ১৯৬ ধারায় মূলত ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, বেদখল, হামলা, শারীরিক আঘাতের মতো অপরাধের কথা উল্লেখ করা আছে। এ ধারায় বিজিএমইএ ১৯৬ (২) (ছ) উপধারা নামে 'কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সম্পত্তি ধ্বংস, ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদর্শন, শারীরিক আঘাত, লাঞ্ছিতকরণ, কারখানাসংলগ্ন জনসাধারণের চলাচলের পথ ও রাস্তাঘাট অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করিবেন না বা করার চেষ্টা করিবেন না' যোগ করার সুপারিশ করেছে। আর এ বিধান লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি হিসেবে ২৯১ (৪) ধারা যোগ করার সুপারিশ করেছে বিজিএমইএ। এতে সংগঠনটি বলেছে, কোনো ট্রেড ইউনিয়ন অথবা শ্রমিক বা অন্য কোনো ব্যক্তি ধারা ১৯৬ (২)(ছ)-এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৯১ ধারা সম্পর্কে বিজিএমইএর মতামত হচ্ছে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সম্পত্তি ধ্বংস, ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদর্শন, শারীরিক আঘাত, লাঞ্ছিতকরণ ইত্যাদি জঘন্যতম ঘটনা ঘটায় এবং অন্যকে ঘটানোর জন্য উসকানি দেয়। এমনকি কারখানার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারখানাসংলগ্ন জনসাধারণের চলাচলের পথ ও রাস্তাঘাট অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনায় লিপ্ত হয়। এ ছাড়া কারখানাসংলগ্ন রাস্তায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী সব কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সম্পত্তি ধ্বংস করে। যারা এ সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে দেশে প্রচলিত সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মালিকদের শাস্তি কমানো আর শ্রমিকদের শাস্তি বাড়ানোর সুপারিশ করার কারণ জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, 'আমার বিশ্বাস, কোনো শ্রমিক তার কারখানায় ভাঙচুর করে না। এর সঙ্গে শ্রমিক নামধারী বহিরাগত চক্র জড়িত থাকে। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কারখানার পাশের রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক আহত বা নিহত হলে বহিরাগত ওই চক্রটি সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর করে। এদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।'
আইন লঙ্ঘনে মালিকের শাস্তি : শ্রম আইন ২০০৬-এর ২৮৯(১) ধারায় বলা আছে, কোনো মালিক এ আইনের একাদশ অধ্যায় অনুযায়ী ঘোষিত নূ্যনতম মজুরি হারের চেয়ে শ্রমিককে কম মজুরি দিলে ওই মালিক এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। নতুন খসড়া আইনে ঘোষিত নূ্যনতম মজুরির তুলনায় কোনো শ্রমিককে কম মজুরি দেওয়া হলে মালিকের শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রাখতে চাইছে সরকার। কিন্তু বিজিএমইএ বলছে, নূ্যনতম মজুরির চেয়ে শ্রমিককে কম মজুরি দেওয়া হলে শাস্তি হিসেবে মালিক শুধু পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দেবেন। এ বিষয়ে সংগঠনটির বক্তব্য হলো, নতুন প্রস্তাবনায় জরিমানা বর্তমানের তুলনায় পাঁচ গুণ বাড়ানোর পাশাপাশি দণ্ডারোপ করা হয়েছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া কারখানা পরিচালনা করেন মহাব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপক। সুতরাং আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তার দায় তাঁদের ওপর বর্তায়, মালিকের ওপর নয়। সুতরাং মালিককে কোনোভাবেই দণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না।
শ্রম আইন ২০০৬-এর ২৮৩ ধারায় বলা আছে, এ আইনের ৩৩ ধারার অধীনে দেওয়া শ্রম আদালতের কোনো আদেশ কেউ পালন করতে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে তিনি তিন মাস পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ডে, অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সংশোধিত শ্রম আইনের খসড়ার ২৮৩ ধারায় বলা হয়েছে, ৩৩ ধারার অধীনে দেওয়া শ্রম আদালতের কোনো আদেশ কেউ পালন না করলে বা পালন করতে ব্যর্থ হলে তিনি ছয় মাস পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ডে, অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর বিজিএমইএর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩৩ ধারার অধীনে শ্রম আদালতের আদেশ পালনে অস্বীকার করলে বা পালনে ব্যর্থ হলে তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। যুক্তি হিসেবে তারা বলেছে, নতুন প্রস্তাবনায় জরিমানা ও দণ্ড দ্বিগুণ করা হয়েছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রেও তারা সব দায় মালিকের পরিবর্তে কারখানা পরিচালনাকারী মহাব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপকের বলে উল্লেখ করেছে।
বিদ্যমান শ্রম আইনের ২৮৬ (১) ধারায় বলা আছে, কোনো মালিক এই আইনের চতুর্থ অধ্যায়ের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। খসড়া আইনের এ ধারায় শাস্তি বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করেছে সরকার। বিজিএমইএ বলেছে, এ ক্ষেত্রে আগের বিধানই রাখতে হবে। নিজেদের প্রস্তাবের পক্ষে বিজিএমইএর বক্তব্য হলো, নতুন প্রস্তাবনায় জরিমানা বর্তমানের তুলনায় চার গুণ বাড়ানো হয়েছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রেও তারা মালিকের পরিবর্তে কারখানা পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের ওপর দায় বর্তায় বলে মতামত দিয়েছে।
শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩০৬ (১) ধারা অনুযায়ী, এই আইন বা কোনো বিধিবিধানের অধীনে দায়িত্ব পালনকারী কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে, কোনো কর্মকর্তাকে কোনো প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত প্রবেশ, তদন্ত, পরীক্ষা বা পরিদর্শনের জন্য যুক্তিসংগত ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার বা অবহেলা করলে তিনি ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। খসড়া আইনে এই শাস্তি বাড়িয়ে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার কথা বলা হয়েছে। বিজিএমইএ আগের শাস্তিই বহাল রাখার দাবি করেছে।
বিদ্যমান শ্রম আইনের ৩০৬ (২) ধারায় বলা আছে, এ আইনের অধীনে দায়িত্ব পালনরত কোনো কর্মকর্তার তলব অনুযায়ী রক্ষিত কোনো রেজিস্ট্রার, নথি বা দলিল-দস্তাবেজ হাজির করতে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে, দায়িত্ব পালনরত কোনো কর্মকর্তার সামনে কোনো ব্যক্তিকে হাজির হতে বা তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দিলে বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। খসড়া আইনে শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিজিএমইএ আগের শাস্তি বহাল রাখার দাবির সঙ্গে শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেছে, দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি যথাযথভাবে নোটিশ দিয়ে পরিদর্শনে গেছেন। বিজিএমইএর কথার অর্থ হলো, আগে থেকে নোটিশ না দিয়ে পরিদর্শনে যাওয়া যাবে না। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠনটি এ সম্পর্কে আরো বলেছে, নিরাপত্তা প্রহরী বা পরিদর্শনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো ব্যক্তির বাধা দেওয়া বা অন্য কোনো আচরণকে আইনের নির্ধারিত বাধা বলে গণ্য করা যাবে না। মালিককে অযথা হয়রানি বা বেকায়দায় ফেলার জন্য বা অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য পরিদর্শন করছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তা এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩০৭ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি এই আইন বা এর অধীন কোনো বিধিবিধান লঙ্ঘন করলে বা মানতে ব্যর্থ হলে এর শাস্তি হিসেবে আইনে কোনো দণ্ডের বিধান না থাকলেও তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সংশোধিত খসড়ায় এখানে শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে বলে প্রস্তাব করেছে সরকার। বিজিএমইএ আগের দণ্ড বহাল রাখার সুপারিশ করে বলেছে, কিছু কিছু স্বার্থলোভী শ্রমিক রয়েছে, যারা এক কারখানায় চাকরিরত অবস্থায় অন্য কারখানায় বেশি মজুরিতে যোগদান করে আগের কারখানার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বের করার অথবা চাকরিচ্যুতির অভিযোগ তুলে টার্মিনেশন বেনিফিট দাবি করে। কিছু এনজিও বা ফেডারেশনের মাধ্যমে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে। যদিও বিষয়টি সর্বাংশে মিথ্যা; কোনো কাগজও তাদের কাছে থাকে না। তারা তিন থেকে সাত দিনের সময় দিয়ে নোটিশ পাঠিয়ে সেটাকে পুঁজি করেই আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুস্পষ্ট বিধান ও দণ্ড থাকা আবশ্যক।
শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩৫০ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন শ্রম আদালত বা ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্য বা বিচারযোগ্য কোনো মোকদ্দমা, অভিযোগ অথবা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারা অন্য কোনো আদালত গ্রহণ করতে বা বিচার করতে পারবে না। এ বিধান রেখে সংশোধিত খসড়ায় শর্ত হিসেবে সরকার বলছে, এই আইনের ২৯৯, ২৮৯, ৩০২, ৩০৬, ৩০৭ ধারার অধীনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের ক্ষেত্রে কোনো কিছুই বাধা থাকবে না। বিজিএমইএ সংশোধিত এ ধারা মানতে রাজি নয়।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর বক্তব্য হলো, 'তৈরি পোশাক শিল্পে মোবাইল কোর্ট চললে মানুষজন দেখবে। ডালপালাসহ গুজব ছড়াবে, অমুক কারখানার অমুক মালিককে মোবাইল কোর্ট ধরেছে, ব্যাটা নিশ্চয়ই ক্রিমিনাল। আমরা উদ্যোগ নিয়ে দেশে শিল্প গড়েছি। আমরা লাভবান হয়েছি। কর্মসংস্থান হয়েছে। মহিলাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। দেশে অব্যাহতভাবে অতীব জরুরি বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। আমরা চোর-ডাকাত আখ্যায়িত হওয়ার জন্য উদ্যোক্তা হইনি। যথেষ্ট হয়েছে। আমরা এই প্রস্তাব দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এই প্রস্তাবের অধীনে নেওয়া হলে তা হবে দেশের অর্থনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান।'
আইন লঙ্ঘনে শ্রমিকের শাস্তি
২০০৬ সালের শ্রম আইনে অসৎ শ্রম আচরণের জন্য কোনো শাস্তির বিধান নেই। সংশোধিত শ্রম আইনে এর জন্য শাস্তির বিধান রেখে ২৯১ নম্বর ধারা নতুন করে সংযুক্ত করতে চাইছে সরকার। ২৯১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এ আইনের ১৯৫ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিজিএমইএ এখানে কোনো আপত্তি জানায়নি।
প্রস্তাবিত ২৯১ (২) ধারায় বলা আছে, কোনো শ্রমিক ১৯৬ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিজিএমইএ এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের কারাদণ্ড আরো এক বছর বাড়ানোর সুপারিশ করে বলেছে, কোনো শ্রমিক ১৯৬ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
প্রস্তাবিত ২৯১ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক বাদে অন্য কোনো ব্যক্তি ১৯৬ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিজিএমইএ এ ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের পরিমাণ আরো এক বছর বাড়িয়ে তিন বছর করার সুপারিশ করেছে।
শ্রম আইনের ১৯৬ ধারায় মূলত ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, বেদখল, হামলা, শারীরিক আঘাতের মতো অপরাধের কথা উল্লেখ করা আছে। এ ধারায় বিজিএমইএ ১৯৬ (২) (ছ) উপধারা নামে 'কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সম্পত্তি ধ্বংস, ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদর্শন, শারীরিক আঘাত, লাঞ্ছিতকরণ, কারখানাসংলগ্ন জনসাধারণের চলাচলের পথ ও রাস্তাঘাট অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করিবেন না বা করার চেষ্টা করিবেন না' যোগ করার সুপারিশ করেছে। আর এ বিধান লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি হিসেবে ২৯১ (৪) ধারা যোগ করার সুপারিশ করেছে বিজিএমইএ। এতে সংগঠনটি বলেছে, কোনো ট্রেড ইউনিয়ন অথবা শ্রমিক বা অন্য কোনো ব্যক্তি ধারা ১৯৬ (২)(ছ)-এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৯১ ধারা সম্পর্কে বিজিএমইএর মতামত হচ্ছে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সম্পত্তি ধ্বংস, ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদর্শন, শারীরিক আঘাত, লাঞ্ছিতকরণ ইত্যাদি জঘন্যতম ঘটনা ঘটায় এবং অন্যকে ঘটানোর জন্য উসকানি দেয়। এমনকি কারখানার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারখানাসংলগ্ন জনসাধারণের চলাচলের পথ ও রাস্তাঘাট অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনায় লিপ্ত হয়। এ ছাড়া কারখানাসংলগ্ন রাস্তায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী সব কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সম্পত্তি ধ্বংস করে। যারা এ সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে দেশে প্রচলিত সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মালিকদের শাস্তি কমানো আর শ্রমিকদের শাস্তি বাড়ানোর সুপারিশ করার কারণ জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, 'আমার বিশ্বাস, কোনো শ্রমিক তার কারখানায় ভাঙচুর করে না। এর সঙ্গে শ্রমিক নামধারী বহিরাগত চক্র জড়িত থাকে। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কারখানার পাশের রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক আহত বা নিহত হলে বহিরাগত ওই চক্রটি সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর করে। এদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।'
No comments