পবিত্র কোরআনের আলো-শাস্তি পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হওয়ার দরকার নেই, কাফিরদের শাস্তি অবধারিত

৪৫. ওয়া ইয়াওমা ইয়াহ্শুরুহুম কাআল্লাম ইয়ালবাছূ ইল্লা- ছা-আ'তাম্ মিনান নাহারি ইয়াতাআ'-রাফূনা বাইনাহুম; ক্বাদ খাছিরাল্লাযীনা কায্যাবূ বিলিক্বা-য়িল্লা-হি ওয়া মা- কা-নূ মুহ্তাদীন। ৪৬. ওয়া ইম্মা- নুরিইয়ান্নাকা বা'দ্বাল্লাযী নায়ি'দুহুম আও নাতাওয়াফ্ফাইয়ান্নাকা ফাইলাইনা- মারজিউ'হুম ছুম্মাল্লা-হু শাহীদুন আ'লা- মা- ইয়াফ্আ'লূন।


৪৭. ওয়া লিকুলি্ল উম্মাতির্ রাছূলুন ফাইযা- জা-আ রাসূলুহুম ক্বুদ্বিইয়া বাইনাহুম বিলকি্বছ্তি্ব ওয়া হুম লা-ইউয্লামূন। ৪৮. ওয়া ইয়াক্বূলূনা মাতা- হা-যাল ওয়া'দু ইন কুনতুম সা-দিক্বীন।
[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৪৫-৪৮]

অনুবাদ : ৪৫. যেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা (দুনিয়ায়) এক দিনের এক মহূর্তের বেশি অবস্থান করেনি। এ কারণেই তারা একে অপরকে চিনতে পারবে। এসব লোকেরা তো অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, যারা আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার কথা অস্বীকার করত এবং হেদায়েতের পথ গ্রহণ করেনি। ৪৬. (হে নবী) আমি তাদের কাছে যেসব বিষয়ের ওয়াদা করেছি, অর্থাৎ অবাধ্যতার যে শাস্তি বিধান করে রেখেছি, তার কিছু কিছু আমি আপনাকে দেখিয়ে দিতে পারি। অথবা যদি এর আগেই আপনাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেই; সর্বাবস্থায়ই তো তাদের শেষ পর্যন্ত আমার কাছে ফিরতে হবে। অতঃপর এটা তো স্পষ্ট যে তারা যা কিছু করেছে, আল্লাহ এ সব কিছুরই সাক্ষী। (অর্থাৎ শাস্তি হবে ধৈর্য ধর।)
৪৭. প্রত্যেকে উম্মতের জন্য একজন রাসুল পাঠানো হয়েছে, যখন তাদের রাসুল এসে গেছে তখন ন্যায়বিচারের সঙ্গে তাদের সব কিছু মীমাংসা করা হয়েছে। তাদের ওপর কোনো রকম জুলুম করা হয়নি। ৪৮. তারা (উপহাস করে) বলে, তোমরা যদি সত্যবাদীই হয়ে থাক, তবে (আল্লাহর শাস্তি দানের) সেই ওয়াদা কবে পূরণ হবে।

ব্যাখ্যা : ৪৫ নম্বর আয়াতে এই বিষয়টা স্পষ্ট করা হয়েছে যে ইহকাল ও পরকাল মোটেও বিচ্ছিন্ন নয়, বরং অভিন্ন জীবনেরই দুটি ভিন্ন রূপ; একটি বাস্তব এবং অপরটি আত্মিক। অর্থাৎ পরকালে যখন তারা আল্লাহর সামনে হাজির হবে, তখন দুনিয়ার জীবন তাদের কাছে ততই কাছের মনে হবে যে তাদের একজন অন্যজনকে খুব সহজেই চিনতে পারবে। মনে হবে যেন এই কিছুক্ষণ আগেই তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের ব্যবধানে যেমন স্মৃতির অনেক কিছু ঝাপসা হয়ে যায়, তেমনটা হবে না।
৪৬ নম্বর আয়াতে একটি খটকার জবাব দেওয়া হয়েছে। সাধারণত দুর্বলচিত্তের লোকেরাই এই খটকায় পড়তে পারে, আর বাকিরা এটাকে তাদের পক্ষের যুক্তি হিসেবেও দাঁড় করায়। আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের শাস্তি দানের ওয়াদা করে রেখেছেন, অথচ তাদের পক্ষ থেকে এতসব অবাধ্যতা ও মুসলিমদের সঙ্গে তাদের ক্রমবর্ধমান শত্রুতা সত্ত্বেও তাদের ওপর তো কোনো শাস্তি নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে না। এ আয়াতে বলা হচ্ছে : আল্লাহর হিকমত অনুযায়ী সময় মতোই তাদের ওপর শাস্তি আসবে। অতএব শাস্তির জন্য অস্থির হওয়ার দরকার নেই। সে শাস্তি এমনও হতে পারে যে মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় দুনিয়ায় তারা পেয়ে যেতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে তার জীবদ্দশায় তাদের ওপর কোনো শাস্তি নাও আসতে পারে। কিন্তু আখেরাতে শাস্তি অবধারিত। আর এটাও তো সত্য যে কাফিররা হাজার বছর ধরে মানুষের ঘৃণা, অবজ্ঞা ও অভিশাপের শিকার। আর অপরদিকে আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সাহাবারা হাজার বছর ধরে জগৎবাসীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও সম্মানে সিক্ত।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.