বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৯৪ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। সৈয়দ গোলাম মোস্তফা, বীর প্রতীক কুশলী মুক্তিযোদ্ধা টাঙ্গাইল জেলা সদরের উত্তরে কালিহাতী উপজেলা। এর দক্ষিণ প্রান্তে বল্লা। ১৯৭১ সালের ১৫-১৬ জুলাই এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবিরাম যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে অংশ নেয় কয়েকটি দল। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ গোলাম মোস্তফা।
১৫ জুলাই সকালে মুক্তিযোদ্ধারা বল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের তিন দিক থেকে ঘেরাও করেন। তাঁদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এক পর্যায়ে হতোদ্যম পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবরোধ করেন। সৈয়দ গোলাম মোস্তফা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের দুর্বিনীত সাহস ও অসীম মনোবলে পাকিস্তানিদের পালিয়ে যাওয়ার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। সেদিন তিনি যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তাঁর সাহসিকতায় উজ্জীবিত হন সহযোদ্ধারা।
পরদিন ১৬ জুলাই। অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধারে নতুন একদল পাকিস্তানি সেনা বল্লার দিকে অগ্রসর হয়। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারা নৌকাযোগে বল্লায় আসছিল। তখন সৈয়দ গোলাম মোস্তফা সহযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে যান পাকিস্তানি সেনাদের আসার পথে। তাঁরা চারান নামক স্থানে নতুন পাকিস্তানি সেনাদের অতর্কিতে আক্রমণ করেন। হতবিহ্বল পাকিস্তানি সেনারা নৌকার মধ্যে ছোটাছুটি শুরু করলে নৌকা ডুবে যায়। এতে সলিলসমাধি হয় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনার। বাকি সেনারা তীরে উঠে বল্লার দিকে রওনা হয়। এদিকে বল্লায় অবরুদ্ধ সেনারা নতুন সেনাদের মুক্তিযোদ্ধা মনে করে বৃষ্টির মতো গুলি ও মর্টারের শেলিং শুরু করে। এতে নিজেদের হাতে তারা নিজেরাই হতাহত হয়।
এদিন সকাল সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। নতুন পাকিস্তানি সেনারা হতাহত কয়েকজনকে ফেলে পালিয়ে যায়। অবরুদ্ধ সেনারা অবরুদ্ধই থাকে। সন্ধ্যায় নতুন আরেক দল পাকিস্তানি সেনা বল্লার দিকে অগ্রসর হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল পাকিস্তানি সেনাদের নতুন দলকে আক্রমণ চালায়। তীব্র যুদ্ধ চলতে থাকে।
সন্ধ্যায় আগত পাকিস্তানি সেনাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী ও বেপরোয়া ধরনের ছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণের মধ্যেই অগ্রসর হয়ে অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে এ জন্য তাদের মূল্য দিতে হয় অনেক। মুক্তিযোদ্ধারা পরে গ্রামবাসীর মাধ্যমে জানতে পারেন, দুই দিনের যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়েছে। গ্রামবাসী হতাহত সেনাদের ট্রাকে করে নিয়ে যেতে দেখেছেন।
সৈয়দ গোলাম মোস্তফা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে। টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর অধীনে যুদ্ধ করেন। তিনি একটি দলের দলনেতা ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য সৈয়দ গোলাম মোস্তফাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৪১৯।
স্বাধীনতার পর সৈয়দ গোলাম মোস্তফা জাতীয় রক্ষী বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। ডেপুটি লিডার ছিলেন। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের পর রক্ষী বাহিনী বিলুপ্ত করে এর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি। ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি কথিত গণবাহিনী (চরমপন্থী) তাঁকে অপহরণ করে। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। পরিবারের লোকজন তাঁর আর খোঁজ পাননি।
সৈয়দ গোলাম মোস্তফার পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকরা ইউনিয়নের গোলরা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ ইউনুস আলী, মা সৈয়দা সেতারা খাতুন। স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। তাঁদের চার মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি ইকবাল গফুর এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১১।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
পরদিন ১৬ জুলাই। অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধারে নতুন একদল পাকিস্তানি সেনা বল্লার দিকে অগ্রসর হয়। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারা নৌকাযোগে বল্লায় আসছিল। তখন সৈয়দ গোলাম মোস্তফা সহযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে যান পাকিস্তানি সেনাদের আসার পথে। তাঁরা চারান নামক স্থানে নতুন পাকিস্তানি সেনাদের অতর্কিতে আক্রমণ করেন। হতবিহ্বল পাকিস্তানি সেনারা নৌকার মধ্যে ছোটাছুটি শুরু করলে নৌকা ডুবে যায়। এতে সলিলসমাধি হয় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনার। বাকি সেনারা তীরে উঠে বল্লার দিকে রওনা হয়। এদিকে বল্লায় অবরুদ্ধ সেনারা নতুন সেনাদের মুক্তিযোদ্ধা মনে করে বৃষ্টির মতো গুলি ও মর্টারের শেলিং শুরু করে। এতে নিজেদের হাতে তারা নিজেরাই হতাহত হয়।
এদিন সকাল সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। নতুন পাকিস্তানি সেনারা হতাহত কয়েকজনকে ফেলে পালিয়ে যায়। অবরুদ্ধ সেনারা অবরুদ্ধই থাকে। সন্ধ্যায় নতুন আরেক দল পাকিস্তানি সেনা বল্লার দিকে অগ্রসর হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল পাকিস্তানি সেনাদের নতুন দলকে আক্রমণ চালায়। তীব্র যুদ্ধ চলতে থাকে।
সন্ধ্যায় আগত পাকিস্তানি সেনাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী ও বেপরোয়া ধরনের ছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণের মধ্যেই অগ্রসর হয়ে অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে এ জন্য তাদের মূল্য দিতে হয় অনেক। মুক্তিযোদ্ধারা পরে গ্রামবাসীর মাধ্যমে জানতে পারেন, দুই দিনের যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়েছে। গ্রামবাসী হতাহত সেনাদের ট্রাকে করে নিয়ে যেতে দেখেছেন।
সৈয়দ গোলাম মোস্তফা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে। টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর অধীনে যুদ্ধ করেন। তিনি একটি দলের দলনেতা ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য সৈয়দ গোলাম মোস্তফাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৪১৯।
স্বাধীনতার পর সৈয়দ গোলাম মোস্তফা জাতীয় রক্ষী বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। ডেপুটি লিডার ছিলেন। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের পর রক্ষী বাহিনী বিলুপ্ত করে এর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি। ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি কথিত গণবাহিনী (চরমপন্থী) তাঁকে অপহরণ করে। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। পরিবারের লোকজন তাঁর আর খোঁজ পাননি।
সৈয়দ গোলাম মোস্তফার পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকরা ইউনিয়নের গোলরা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ ইউনুস আলী, মা সৈয়দা সেতারা খাতুন। স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। তাঁদের চার মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি ইকবাল গফুর এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১১।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments