কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ-সব কাজ সবার 'বসকি বাত' নয় by রণজিৎ বিশ্বাস
চালাকি নিয়ে আপনার ধারণা কী? : ধারণা খুব ভালো নয়। এটি বড় নোংরা জিনিস। এ সম্পর্কে বিভিন্ন রেসিপিতে আমি অনেক রাঁধা রেঁধেছি। কোথায় রেঁধেছি, বলায় রেঁধেছি। আজ আর কিছু রাঁধব না। আজ বিরত থাকব।
: বিরত কেন থাকবেন? পলায়ন করতে চান?
: বিরত কেন থাকবেন? পলায়ন করতে চান?
: না। পলায়নে মন ঢালতে চাই না। বিরত থাকব এ জন্য যে মানুষ কথা শোনে না। মানুষ কথা পড়ে না। শুধু বিরক্ত হয়।
: তবু আজ বলতেও হবে, লিখতেও হবে, গাইতেও হবে, রাঁধতেও হবে। নোংরা লোকদের সর্বশেষ দুটি চালাকির সঙ্গে আজ অন্তত পরিচয় ঘটিয়ে দিতে হবে। মানুষ এদের দ্বারা খুব ঘন ঘন বিভ্রান্ত হচ্ছে। নোংরা লোকের একটি চালাকি হচ্ছে- ওরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝায়, ভ্রান্ত-বিভ্রান্ত করে। ওরা বলে বেড়ায়- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন আর হওয়ার দরকার নেই, তিনিই তো তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন! ওরা 'তিনি' বলে, কিন্তু 'বঙ্গবন্ধু' বলে না; ওরা বঙ্গবন্ধুর নাম ধরে বলে কিন্তু, তাঁকে 'জাতির পিতা' বলে না।
: 'জাতির পিতা' কিংবা 'বঙ্গবন্ধু' ওরা না বলুক, এসব ওদের কাছে কেউ আশাও করে না। এই না বলা দিয়ে ওরা যে দেশ ও জাতির জন্য একটা ভালো কাজ করে আপনার মতো সংলাপ কুড়ানো লোকেরা তা বুঝতেও পারেন না। ওদের মুখে উচ্চারণ করে ওরা নাম দুটোকে অপবিত্র করতে চায় না। এটি কিন্তু তাদের শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেয়।
: দিতে পারে। নষ্টভ্রষ্ট লোকও কখনো কখনো ভালো কাজ করে ফেলতে পারে। ভুলে-ভালেই হয়তো করে, তবু তাদের দিয়ে ক্বচিৎ-কদাচিত একটু-আধটু ভালো কাজ হয়ে যায়। তাই বলে ওদের চালাকিটার কথা আমি না বলে পারব না। মানুষকে বোকা বানানোর ওই একটি পয়েন্ট থেকে আমি সরে আসতে পারব না।
: মানুষকে ওরা বোকা বানায় কিভাবে?
: যুদ্ধাপরাধিদের তো তিনিই (শ্রদ্ধা ও সৌজন্যের সঙ্গে যে নামটি তারা মুখে আনে না) ক্ষমা করে দিয়েছেন- এ কথাটির মধ্যেই তো থকথকে ভণ্ডামি। বঙ্গবন্ধু সব অপরাধীকে ক্ষমা করেননি। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, হত্যা-লুণ্ঠন-অগি্নসংযোগ-সম্ভ্রমলাঞ্ছনা করেছে, তাদের তিনি ক্ষমা করেননি। তাদের ক্ষমা করার কথা তিনি একবারও উচ্চারণ করেননি। ওই কীটদের, ওই নরপশুদের তিনি সাধারণ ক্ষমার বাইরে রেখেছেন। বরং তিনি যে নিজেই বলেছেন, শেখ মুজিব এমন অপরাধীদের ক্ষমা করতে জানে না, ষড়যন্ত্রীদের ধামাচাপ অবস্থা থেকে সেই ভিডিও ফুটেজও সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনে, গুরুত্বপূর্ণ প্রচার সময়ে, খবরের আগে কিংবা পরে তা বাজিয়ে শোনানো হচ্ছে। উৎকর্ণ থেকে আপনিও একদিন শুনে নিতে পারেন।
: শুনে না হয় নেব। কিন্তু এসব জনগণকে শোনানো হচ্ছে কেন?
: আপনি তো দেখি ইডিয়টের মতো প্রশ্ন করেন!
: খুব দুষ্প্রাপ্য, তবু আমি ইডিয়টের মতো প্রশ্ন করি- এ কথা মানলাম।
আমার প্রশ্নে আপনি উত্তেজিত হলেন, আপনার উত্তেজনা আমার ভেতর কৌতুকের জন্ম দিচ্ছে। কেন আমি ইডিয়ট ও কী কারণে আমি ইডিয়টের ভূমিকায় নেমেছি- আপনি বুঝতে না পারলেও অনেকেই বুঝতে পেরেছে। আমার বিশ্বাস, যতই আপনি ব্লক-হেড হোন না কেন, একদিন আপনিও বুঝতে পারবেন। আপনি বলুন, আর্কাইভ থেকে খুঁজে খুঁজে এনে কেন এগুলো ইথারবাসী করা হচ্ছে।
: ইতিহাসকে স্ট্রেইট করার জন্য। তাকে সোজা ও সরল করার জন্য যে মানুষগুলো নষ্টামি ও ভ্রষ্টামিতে নিত্যদিন মেতে থাকছে, তাদের চিনিয়ে দেয়ার জন্য, তাদের যত মুখোশ ও তাদের যত নেকাব টেনেখিঁচে ছিঁড়ে ফেলার জন্য।
: সেটি কি সম্ভব হবে?
: হবে। একশবার হবে। কারণ মানুষ এখন আর আগের মতো নেই। এখন তারা ধর্মের নামে ও মুখরোচক অভিযোগের নামে শর্তহীনভাবে বিশ্বাসপ্রবণ নয়। এখন তারা ধর্মবটিকা কিংবা বিশেষ কোনো পাঠকর্মকে মহান কোনো ঘোষণার নামে চালিয়ে দেওয়ার ট্যাবলেট কিংবা মোদক-মকরদ্দছ টুক করে গিলে ফেলে না। তাদের কেউ কেউ কখনো কখনো যুদ্ধাপরাধী বা বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে মাথা হেলিয়ে বলে যত রাগই আমরা করি, দিনের শেষে তারা ঠিক পথটিই বেছে নেয়। বোধবুদ্ধি ও বিচার-বিশ্লেষণের ভুবনে তাদের গুণগত পরিবর্তন ও মেজাজি বিবর্তন এখন লক্ষণীয়, অনুভবগ্রাহ্য ও প্রশংসনীয় বিষয়। ওরা এখন মানুষে-পশুতে পার্থক্য নির্ভুল চিনে নিতে পারে।
: ওদের আরেকটি চালাকির কথা বলুন।
: ওরা নিজেদের অপরাধ অন্যদের ওপর চাপায় ও তার সুরাহা বার করার জন্য যাদের দ্বারেদোরে বসে পড়ে, তাদের হাত-পা বেঁধে দিয়ে দৌড়াতে বলে।
: খুব মারফতি হয়ে গেল। বোঝা যাচ্ছে না।
: আপনার বেলায় প্রায়ই এরকম হয়। মনে করুন আপনি কাউকে চোর ধরার, ডাকাত পাকড়ানোর অথবা কালপ্রিট-ক্রিমিনাল খুঁজে বার করার দাবি দিলেন; কিন্তু পাকড়ানোর সময় তাকে অন্যকাজে বাধ্যতামূলকভাবে এনগেজড রাখলেন। ক্রিমিনালরা এ সুযোগে পালিয়ে বেড়াতে পারে; হাততালি দিয়ে কিংবা বগল বাজিয়ে আপনিও বলতে পারেন- পারে না, পারে না, ঐ দেখ সে পারে না! ঐ দেখ সে নড়ে না! ঐ দেখ সে সরে না!
: তাহলে এর নাম হচ্ছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দৌড়াতে বলা।
: বুঝেছেন। এর নামই হচ্ছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দৌড়াতে বলা।
: এই কাজে সবাই তো এঙ্পার্ট হয় না।
: না। হয় না। সংসারে সব কাজ সবার নয়। সব কাজ সবার 'বসকি বাত' নয়।
: তাহলে এ কাজ কাদের?
: আর কাদের! নষ্ট ও ভ্রষ্টদের?
লেখক : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
: তবু আজ বলতেও হবে, লিখতেও হবে, গাইতেও হবে, রাঁধতেও হবে। নোংরা লোকদের সর্বশেষ দুটি চালাকির সঙ্গে আজ অন্তত পরিচয় ঘটিয়ে দিতে হবে। মানুষ এদের দ্বারা খুব ঘন ঘন বিভ্রান্ত হচ্ছে। নোংরা লোকের একটি চালাকি হচ্ছে- ওরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝায়, ভ্রান্ত-বিভ্রান্ত করে। ওরা বলে বেড়ায়- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন আর হওয়ার দরকার নেই, তিনিই তো তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন! ওরা 'তিনি' বলে, কিন্তু 'বঙ্গবন্ধু' বলে না; ওরা বঙ্গবন্ধুর নাম ধরে বলে কিন্তু, তাঁকে 'জাতির পিতা' বলে না।
: 'জাতির পিতা' কিংবা 'বঙ্গবন্ধু' ওরা না বলুক, এসব ওদের কাছে কেউ আশাও করে না। এই না বলা দিয়ে ওরা যে দেশ ও জাতির জন্য একটা ভালো কাজ করে আপনার মতো সংলাপ কুড়ানো লোকেরা তা বুঝতেও পারেন না। ওদের মুখে উচ্চারণ করে ওরা নাম দুটোকে অপবিত্র করতে চায় না। এটি কিন্তু তাদের শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেয়।
: দিতে পারে। নষ্টভ্রষ্ট লোকও কখনো কখনো ভালো কাজ করে ফেলতে পারে। ভুলে-ভালেই হয়তো করে, তবু তাদের দিয়ে ক্বচিৎ-কদাচিত একটু-আধটু ভালো কাজ হয়ে যায়। তাই বলে ওদের চালাকিটার কথা আমি না বলে পারব না। মানুষকে বোকা বানানোর ওই একটি পয়েন্ট থেকে আমি সরে আসতে পারব না।
: মানুষকে ওরা বোকা বানায় কিভাবে?
: যুদ্ধাপরাধিদের তো তিনিই (শ্রদ্ধা ও সৌজন্যের সঙ্গে যে নামটি তারা মুখে আনে না) ক্ষমা করে দিয়েছেন- এ কথাটির মধ্যেই তো থকথকে ভণ্ডামি। বঙ্গবন্ধু সব অপরাধীকে ক্ষমা করেননি। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, হত্যা-লুণ্ঠন-অগি্নসংযোগ-সম্ভ্রমলাঞ্ছনা করেছে, তাদের তিনি ক্ষমা করেননি। তাদের ক্ষমা করার কথা তিনি একবারও উচ্চারণ করেননি। ওই কীটদের, ওই নরপশুদের তিনি সাধারণ ক্ষমার বাইরে রেখেছেন। বরং তিনি যে নিজেই বলেছেন, শেখ মুজিব এমন অপরাধীদের ক্ষমা করতে জানে না, ষড়যন্ত্রীদের ধামাচাপ অবস্থা থেকে সেই ভিডিও ফুটেজও সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনে, গুরুত্বপূর্ণ প্রচার সময়ে, খবরের আগে কিংবা পরে তা বাজিয়ে শোনানো হচ্ছে। উৎকর্ণ থেকে আপনিও একদিন শুনে নিতে পারেন।
: শুনে না হয় নেব। কিন্তু এসব জনগণকে শোনানো হচ্ছে কেন?
: আপনি তো দেখি ইডিয়টের মতো প্রশ্ন করেন!
: খুব দুষ্প্রাপ্য, তবু আমি ইডিয়টের মতো প্রশ্ন করি- এ কথা মানলাম।
আমার প্রশ্নে আপনি উত্তেজিত হলেন, আপনার উত্তেজনা আমার ভেতর কৌতুকের জন্ম দিচ্ছে। কেন আমি ইডিয়ট ও কী কারণে আমি ইডিয়টের ভূমিকায় নেমেছি- আপনি বুঝতে না পারলেও অনেকেই বুঝতে পেরেছে। আমার বিশ্বাস, যতই আপনি ব্লক-হেড হোন না কেন, একদিন আপনিও বুঝতে পারবেন। আপনি বলুন, আর্কাইভ থেকে খুঁজে খুঁজে এনে কেন এগুলো ইথারবাসী করা হচ্ছে।
: ইতিহাসকে স্ট্রেইট করার জন্য। তাকে সোজা ও সরল করার জন্য যে মানুষগুলো নষ্টামি ও ভ্রষ্টামিতে নিত্যদিন মেতে থাকছে, তাদের চিনিয়ে দেয়ার জন্য, তাদের যত মুখোশ ও তাদের যত নেকাব টেনেখিঁচে ছিঁড়ে ফেলার জন্য।
: সেটি কি সম্ভব হবে?
: হবে। একশবার হবে। কারণ মানুষ এখন আর আগের মতো নেই। এখন তারা ধর্মের নামে ও মুখরোচক অভিযোগের নামে শর্তহীনভাবে বিশ্বাসপ্রবণ নয়। এখন তারা ধর্মবটিকা কিংবা বিশেষ কোনো পাঠকর্মকে মহান কোনো ঘোষণার নামে চালিয়ে দেওয়ার ট্যাবলেট কিংবা মোদক-মকরদ্দছ টুক করে গিলে ফেলে না। তাদের কেউ কেউ কখনো কখনো যুদ্ধাপরাধী বা বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে মাথা হেলিয়ে বলে যত রাগই আমরা করি, দিনের শেষে তারা ঠিক পথটিই বেছে নেয়। বোধবুদ্ধি ও বিচার-বিশ্লেষণের ভুবনে তাদের গুণগত পরিবর্তন ও মেজাজি বিবর্তন এখন লক্ষণীয়, অনুভবগ্রাহ্য ও প্রশংসনীয় বিষয়। ওরা এখন মানুষে-পশুতে পার্থক্য নির্ভুল চিনে নিতে পারে।
: ওদের আরেকটি চালাকির কথা বলুন।
: ওরা নিজেদের অপরাধ অন্যদের ওপর চাপায় ও তার সুরাহা বার করার জন্য যাদের দ্বারেদোরে বসে পড়ে, তাদের হাত-পা বেঁধে দিয়ে দৌড়াতে বলে।
: খুব মারফতি হয়ে গেল। বোঝা যাচ্ছে না।
: আপনার বেলায় প্রায়ই এরকম হয়। মনে করুন আপনি কাউকে চোর ধরার, ডাকাত পাকড়ানোর অথবা কালপ্রিট-ক্রিমিনাল খুঁজে বার করার দাবি দিলেন; কিন্তু পাকড়ানোর সময় তাকে অন্যকাজে বাধ্যতামূলকভাবে এনগেজড রাখলেন। ক্রিমিনালরা এ সুযোগে পালিয়ে বেড়াতে পারে; হাততালি দিয়ে কিংবা বগল বাজিয়ে আপনিও বলতে পারেন- পারে না, পারে না, ঐ দেখ সে পারে না! ঐ দেখ সে নড়ে না! ঐ দেখ সে সরে না!
: তাহলে এর নাম হচ্ছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দৌড়াতে বলা।
: বুঝেছেন। এর নামই হচ্ছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দৌড়াতে বলা।
: এই কাজে সবাই তো এঙ্পার্ট হয় না।
: না। হয় না। সংসারে সব কাজ সবার নয়। সব কাজ সবার 'বসকি বাত' নয়।
: তাহলে এ কাজ কাদের?
: আর কাদের! নষ্ট ও ভ্রষ্টদের?
লেখক : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
No comments