ওবামার সফর-কাবুলে সম্ভাবনার সকাল by সুভাষ সাহা
ভারত আফগানিস্তস্নানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার জন্য নয়াদিলি্লতে সহসা আঞ্চলিক বিনিয়োগকারীদের জড়ো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও আফগানিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে। এই আঞ্চলিক বিনিয়োগকারী
সম্মেলনে আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের যোগদানের জন্য এখন থেকেই উদ্বুদ্ধ
করতে হবে
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার সুবাদে যে বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে তার একটা অংশে নিজ দেশের ঘাটতি দূর এবং বাকি অংশে আফগান ফেরত সৈনিকদের কল্যাণে কাজে লাগাবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন বারাক ওবামা। এর অর্থ, আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালে সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণাটা কথার কথা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্দিষ্ট সময়ে যাতে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করা যায় সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে বরং বারবার ধর্ণা দিয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব নিলেও সেনাবাহিনী সেই পুরনো ধারাকেই অনুসরণ করতে থাকায় মার্কিন সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। এর ফলে ওবামা প্রশাসন বিকল্প চিন্তা করতে বাধ্য হয়। শুরু হয় পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তানকে স্থিতিশীল করার প্রক্রিয়া। ওবামার সর্বশেষ আফগানিস্তান সফর এবং কাবুলের সঙ্গে ওয়াশিংটনের নতুন স্ট্র্যাটেজিক চুক্তি স্বাক্ষর এরই ইঙ্গিত বহন করে। চুক্তিটি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবিন্যাসের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সূচনা করবে বলেই মনে হচ্ছে।
আমরা জানি, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গিবাদ দমন এবং আফগানিস্তান স্থিতিশীল করার প্রশ্নে মতবিরোধ চলে আসছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আফগানিস্তানে তার প্রভাবকে একচ্ছত্র করতে চায়_ এমনতর অভিযোগ প্রকাশ্যেই করা হয়েছে। পাকিস্তানি তালেবান, হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো বিপজ্জনক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সহায়তাদান বন্ধ করা ও এদের নির্মূল করার জন্য মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বেসামরিক স্ট্র্যাটেজিস্টরা পাকিস্তান সেনা কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল। হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার চাপও এসেছে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের কাছ থেকেই। এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ইসলামী জঙ্গিদের সহায়তা বন্ধ না করলে পাকিস্তানকে দেয় অর্থ সাহায্য নির্দিষ্ট হারে হ্রাস করার ক্লজ সংবলিত একটি বিলও মার্কিন কংগ্রেসে উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী কখনও চীনের সঙ্গে সামরিক কৌশলগত সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করে আবার কখনও মস্কোর সঙ্গে নতুন মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মার্কিন অব্যাহত চাপকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে দেশের চেয়েও বরাবর তাদের নিজস্ব স্বার্থটা বড় ছিল। এবারও তাই দেখা গেল। তা না হলে তারা এটুকু বুঝতে পারল না কেন যে, পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গি গ্রুপগুলোর ধ্বংস এবং আফগানিস্তানকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া ও চীনও দেখতে চায়। আর এ ক্ষেত্রে ভারতের স্টেকটাও অনেক বেশি। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের জঙ্গিবাদীরা এতদিন পাকিস্তান থেকেই পুষ্ট হয়েছে। রাশিয়ার ককেসাস অঞ্চলে জঙ্গিবাদ নির্মূলে পাকিস্তানের জঙ্গি ব্রিডিং সেন্টারগুলো বন্ধ করা অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। সুতরাং রাশিয়া-চীন ঘোড়দৌড় করে জঙ্গি লালন অব্যাহত রেখে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাময়িকভাবে লাভবান হলেও স্ট্র্যাটেজিক ব্রেকথ্রো করতে পারবে, এমনটা ভাবা বোকামি।
ওবামার সফরের সময় সম্পাদিত যুক্তরাষ্ট্র-আফগান চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে প্রত্যক্ষ সামরিক তৎপরতায় অংশ নেবে না। বস্তুত মার্কিন সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা দায়িত্বের ৫০ শতাংশ দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। তবে আরও এক দশক পর্যন্ত মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা আফগান সৈন্যদের প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক নন-কমব্যাট কার্যক্রমে সহায়তা করবে। ওবামা কাবুলে প্রদত্ত ভাষণেই উল্লেখ করেছেন, সেখানে কোনো মার্কিন স্থায়ী সামরিক উপস্থিতি থাকবে না। অর্থাৎ আফগানিস্তান আমাদের মতো স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ব্যয়ভার বহনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বৈঠকে বসবে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সামরিক ব্যয় বাবদ প্রতিবছর চারশ' কোটি ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেবে। এসব অঙ্গীকার যে পুরোপুরি পালন হবে তার নিশ্চয়তা অবশ্য কেউ দিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পৌনঃপুনিক মন্দার কবলে পড়ার কারণে তারা দেয় প্রতিশ্রুতি নাও রাখতে পারে। তখন কী হবে? কাবুলকে নিশ্চয়ই রাশিয়া, চীন, ভারত অস্থিতিশীল হতে দিতে পারে না। তারা তাদের স্বার্থেই সাহায্যের হাত প্রসারিত করবে। এ লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। ভারত শুধু আফগান পুলিশ বাহিনীকেই প্রশিক্ষণ দেবে না, আফগান সেনাবাহিনীকেও সহায়তা দেবে।
এভাবেই কার্যত পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব আফগানিস্তান ইস্যু নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কেউ এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা বলেও মনে করতে পারেন। একদিকে চীনের যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে সহসা ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো সংবাদ; অন্যদিকে অর্থনৈতিক দুরবস্থার কবলে পড়ার কারণে তাদের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদে গোটা বিশ্বে একসঙ্গে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখা সম্ভব নয়। মার্কিন জনমতও ইরাকের পর আফগানিস্তান থেকে প্রত্যক্ষ সামরিক উপস্থিতি শূন্যে নামিয়ে আনার পক্ষে। মার্কিন অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা ২০১৪ সালের মধ্যেই সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে। ওবামা নির্বাচনী মৌসুমে জনমতকে অগ্রাহ্য করেন কী করে!
পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবশ্য জাতীয় স্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হতে পারে সে চিন্তা করার ফুরসত পায়নি। সেনা চাপের কারণেই এতদিন ভারতকে দেওয়া পাকিস্তানের অবাধ বাণিজ্য সুবিধা (এমএফএন) বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এখন নানা চাপে এ সুবিধা প্রদান করা হলেও পদে পদে বাধা আসতে পারে। তবে এতে সায় রয়েছে পাকিস্তানের ব্যবসায়ী মহল, মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও রাজনৈতিক মহলের। বস্তুত একটি গণতান্ত্রিক পাকিস্তান হতে পারে গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বমঞ্চে অন্যতম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে আবির্ভাবের সহায়ক। আর এর সুফল ভারতের পর বাংলাদেশই বেশি পাবে। রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দুর্বল হলে এর পরোক্ষ ইতিবাচক প্রভাব আমাদের দেশের ওপর পড়বে। কথায় বলে, ভেড়ায় কুঁদে খুঁটির জোরে! দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ বিস্তারের ব্রিডিং সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেলে এখানকার ধর্মীয় অপশক্তিগুলো শুকিয়ে মরবে।
ভারত আফগানিস্তস্নানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার জন্য নয়াদিলি্লতে সহসা আঞ্চলিক বিনিয়োগকারীদের জড়ো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও আফগানিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে। এই আঞ্চলিক বিনিয়োগকারী সম্মেলনে আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের যোগদানের জন্য এখন থেকেই উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান স্থিতিশীল হলে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যকার সিল্ক রোড বাণিজ্য ও যাতায়াত সেতু হিসেবে ফের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ পূর্বে এবং পশ্চিমে উভয় দিকেই তাকানোর মওকা পাবে।
সুভাষ সাহা :সাংবাদিক
করতে হবে
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার সুবাদে যে বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে তার একটা অংশে নিজ দেশের ঘাটতি দূর এবং বাকি অংশে আফগান ফেরত সৈনিকদের কল্যাণে কাজে লাগাবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন বারাক ওবামা। এর অর্থ, আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালে সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণাটা কথার কথা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্দিষ্ট সময়ে যাতে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করা যায় সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে বরং বারবার ধর্ণা দিয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব নিলেও সেনাবাহিনী সেই পুরনো ধারাকেই অনুসরণ করতে থাকায় মার্কিন সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। এর ফলে ওবামা প্রশাসন বিকল্প চিন্তা করতে বাধ্য হয়। শুরু হয় পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তানকে স্থিতিশীল করার প্রক্রিয়া। ওবামার সর্বশেষ আফগানিস্তান সফর এবং কাবুলের সঙ্গে ওয়াশিংটনের নতুন স্ট্র্যাটেজিক চুক্তি স্বাক্ষর এরই ইঙ্গিত বহন করে। চুক্তিটি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবিন্যাসের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সূচনা করবে বলেই মনে হচ্ছে।
আমরা জানি, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গিবাদ দমন এবং আফগানিস্তান স্থিতিশীল করার প্রশ্নে মতবিরোধ চলে আসছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আফগানিস্তানে তার প্রভাবকে একচ্ছত্র করতে চায়_ এমনতর অভিযোগ প্রকাশ্যেই করা হয়েছে। পাকিস্তানি তালেবান, হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো বিপজ্জনক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সহায়তাদান বন্ধ করা ও এদের নির্মূল করার জন্য মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বেসামরিক স্ট্র্যাটেজিস্টরা পাকিস্তান সেনা কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল। হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার চাপও এসেছে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের কাছ থেকেই। এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ইসলামী জঙ্গিদের সহায়তা বন্ধ না করলে পাকিস্তানকে দেয় অর্থ সাহায্য নির্দিষ্ট হারে হ্রাস করার ক্লজ সংবলিত একটি বিলও মার্কিন কংগ্রেসে উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী কখনও চীনের সঙ্গে সামরিক কৌশলগত সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করে আবার কখনও মস্কোর সঙ্গে নতুন মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মার্কিন অব্যাহত চাপকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে দেশের চেয়েও বরাবর তাদের নিজস্ব স্বার্থটা বড় ছিল। এবারও তাই দেখা গেল। তা না হলে তারা এটুকু বুঝতে পারল না কেন যে, পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গি গ্রুপগুলোর ধ্বংস এবং আফগানিস্তানকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া ও চীনও দেখতে চায়। আর এ ক্ষেত্রে ভারতের স্টেকটাও অনেক বেশি। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের জঙ্গিবাদীরা এতদিন পাকিস্তান থেকেই পুষ্ট হয়েছে। রাশিয়ার ককেসাস অঞ্চলে জঙ্গিবাদ নির্মূলে পাকিস্তানের জঙ্গি ব্রিডিং সেন্টারগুলো বন্ধ করা অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। সুতরাং রাশিয়া-চীন ঘোড়দৌড় করে জঙ্গি লালন অব্যাহত রেখে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাময়িকভাবে লাভবান হলেও স্ট্র্যাটেজিক ব্রেকথ্রো করতে পারবে, এমনটা ভাবা বোকামি।
ওবামার সফরের সময় সম্পাদিত যুক্তরাষ্ট্র-আফগান চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে প্রত্যক্ষ সামরিক তৎপরতায় অংশ নেবে না। বস্তুত মার্কিন সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা দায়িত্বের ৫০ শতাংশ দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। তবে আরও এক দশক পর্যন্ত মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা আফগান সৈন্যদের প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক নন-কমব্যাট কার্যক্রমে সহায়তা করবে। ওবামা কাবুলে প্রদত্ত ভাষণেই উল্লেখ করেছেন, সেখানে কোনো মার্কিন স্থায়ী সামরিক উপস্থিতি থাকবে না। অর্থাৎ আফগানিস্তান আমাদের মতো স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ব্যয়ভার বহনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বৈঠকে বসবে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সামরিক ব্যয় বাবদ প্রতিবছর চারশ' কোটি ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেবে। এসব অঙ্গীকার যে পুরোপুরি পালন হবে তার নিশ্চয়তা অবশ্য কেউ দিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পৌনঃপুনিক মন্দার কবলে পড়ার কারণে তারা দেয় প্রতিশ্রুতি নাও রাখতে পারে। তখন কী হবে? কাবুলকে নিশ্চয়ই রাশিয়া, চীন, ভারত অস্থিতিশীল হতে দিতে পারে না। তারা তাদের স্বার্থেই সাহায্যের হাত প্রসারিত করবে। এ লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। ভারত শুধু আফগান পুলিশ বাহিনীকেই প্রশিক্ষণ দেবে না, আফগান সেনাবাহিনীকেও সহায়তা দেবে।
এভাবেই কার্যত পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব আফগানিস্তান ইস্যু নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কেউ এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা বলেও মনে করতে পারেন। একদিকে চীনের যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে সহসা ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো সংবাদ; অন্যদিকে অর্থনৈতিক দুরবস্থার কবলে পড়ার কারণে তাদের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদে গোটা বিশ্বে একসঙ্গে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখা সম্ভব নয়। মার্কিন জনমতও ইরাকের পর আফগানিস্তান থেকে প্রত্যক্ষ সামরিক উপস্থিতি শূন্যে নামিয়ে আনার পক্ষে। মার্কিন অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা ২০১৪ সালের মধ্যেই সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে। ওবামা নির্বাচনী মৌসুমে জনমতকে অগ্রাহ্য করেন কী করে!
পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবশ্য জাতীয় স্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হতে পারে সে চিন্তা করার ফুরসত পায়নি। সেনা চাপের কারণেই এতদিন ভারতকে দেওয়া পাকিস্তানের অবাধ বাণিজ্য সুবিধা (এমএফএন) বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এখন নানা চাপে এ সুবিধা প্রদান করা হলেও পদে পদে বাধা আসতে পারে। তবে এতে সায় রয়েছে পাকিস্তানের ব্যবসায়ী মহল, মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও রাজনৈতিক মহলের। বস্তুত একটি গণতান্ত্রিক পাকিস্তান হতে পারে গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বমঞ্চে অন্যতম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে আবির্ভাবের সহায়ক। আর এর সুফল ভারতের পর বাংলাদেশই বেশি পাবে। রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দুর্বল হলে এর পরোক্ষ ইতিবাচক প্রভাব আমাদের দেশের ওপর পড়বে। কথায় বলে, ভেড়ায় কুঁদে খুঁটির জোরে! দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ বিস্তারের ব্রিডিং সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেলে এখানকার ধর্মীয় অপশক্তিগুলো শুকিয়ে মরবে।
ভারত আফগানিস্তস্নানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার জন্য নয়াদিলি্লতে সহসা আঞ্চলিক বিনিয়োগকারীদের জড়ো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও আফগানিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে। এই আঞ্চলিক বিনিয়োগকারী সম্মেলনে আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের যোগদানের জন্য এখন থেকেই উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান স্থিতিশীল হলে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যকার সিল্ক রোড বাণিজ্য ও যাতায়াত সেতু হিসেবে ফের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ পূর্বে এবং পশ্চিমে উভয় দিকেই তাকানোর মওকা পাবে।
সুভাষ সাহা :সাংবাদিক
No comments