পাঠকের মন্তব্য-প্রত্যেক নাগরিকেরই দেশ নিয়ে ভাবার অধিকার রয়েছে

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এই মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


নোবেলের সম্মান দেয় বিশ্ব, তা কেউ ক্ষুণ্ন করতে পারে না
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খানের এই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে গত শনিবার। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সোহরব লিখেছেন: আমাদের তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ করছি, দয়া করে তাঁরা যেন আমাদের দেশের নোংরা রাজনীতির মধ্যে ড. ইউনূসের নাম টেনে না আনেন। সত্যিই এটা কষ্টদায়ক।
গোলাম ওয়াদুদ: ইতিহাসে যাঁর যা অবদান সে অনুযায়ী স্বীকৃতি পাবেন। একে খাটো করে দেখা যাবে না। আমাদের দুর্নীতিবাজ, গলাবাজ, তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনেক অনেক ভালো, সম্মানীয় এবং নিজ ক্ষেত্রে যোগ্য।
মনিরুজ্জামান: ড. ইউনুস নিয়ে সরকারের যে মাথাব্যাথা, সেটার ক্ষেত্রে শুধু একটি কথাই প্রযোজ্য, গোড়ায় গণ্ডগোল। একজন মানুষ—হতে পারে সে ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চরিত্রের কিন্তু দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনলে সেটা শাসকবর্গের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ালে বুঝতে হবে, শাসকের শাসনক্ষমতা কতটুকু।
রাশেদুজ্জামান: আমি একজন তরুণ। আমার মতো হয়তো অনেক তরুণ স্বপ্ন দেখেছিল, একদিন নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যাব সবার ওপরে। এখন আমি ভয় পাচ্ছি, কেউ যদি চেষ্টা করে নোবেল পাওয়ার পর বিদেশে যতটা সম্মানিত হবে, ততটাই অসম্মানিত হবে দেশে। উৎসাহটা দেন প্রবীণেরা। আজ তাঁরাই নেমেছেন আমাদের সুপ্ত ইচ্ছার বীজ মেরে ফেলতে, আমরা আশাহত।

দায়ী চালকদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
গত শুক্রবার ছুটির দিনে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৫ জন। এ দিন এসেছে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ। এ সম্পর্কে মো. সাইফুল ইসলাম লিখেছেন: আপনার বক্তব্যের সঙ্গে কি নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্যাঁচ লাগল না? উনি তো আগেই বলেছিলেন, চালকেরা ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটান না। ফলে পুরোপুরি তাঁদের দোষ দেওয়া চলে না। আমরা তো রীতিমতো হতভম্ব—দুজনের দুই রকম কথা শুনে।
মোস্তাফিজুর: বেশি কিছু লাগবে না ম্যাডাম। শুধু পুলিশ ও পরিবহন-মালিকেরা আন্তরিক হলেই ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাঠক দুর্ঘটনা রোধে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে: সড়কগুলোকে অবিলম্বে মেরামত করা; আনফিট গাড়ি দ্রুত সরিয়ে ফেলা; চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট; সড়কের প্রতিটি চেক পয়েন্টে সিসিটিভি লাগানো; গাড়ির নম্বর প্লেট ডিজিটাল করা, যাতে প্রতিটি পয়েন্টে নজরদারি করা যায় এবং ট্রাফিক পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া।

সড়কে মৃত্যুর মিছিল
গত শনিবার প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল এটি। এ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান লিখেছেন: প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক এই ধরনের কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলে হইচই পড়ে যায়। পত্রিকায় প্রথম পাতায় খবর হয়, সম্পাদকীয় লেখা হয়। অথচ বিষয়টার সমাধান কীভাবে হবে, তা মনে হয় কেউ জানে না। না সরকার, না বুদ্ধিজীবীরা। অথচ আমরা সবাই একটু দায়িত্বশীল হয়ে এগিয়ে এলে সড়ক দুর্ঘটনা ৯০ শতাংশ কমানো সম্ভব। আমাদের চালকেরা গাড়ি চালাতে জানেন। কিন্তু চালাতে গেলে যে নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়, তা তাঁরা জানেন না এবং কেউ শেখানোর জন্য এগিয়ে আসেন না। সরকার যদি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করে রাত্রে সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত প্রতি জেলা ও উপজেলায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চালকদের সপ্তাহে দুই দিন শিক্ষার আওতায় নিয়ে এসে নিয়মগুলো শেখার ব্যবস্থা করে; মাঝেমধ্যে পুলিশের কর্মকর্তারা ক্লাসে গিয়ে চালকদের আইনের দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করেন, তাহলেই ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আসুন, আমরা সবাই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে চালকদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে এসে আমাদের নিকটজনদের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করি।

রাজনীতিতে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলুন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেছেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। এ সম্পর্কে আবদুস সালাম লিখেছেন: সাধারণ মানুষ (প্রথম আলোর ৯ মের জরিপ অনুসারে ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ) বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরুদ্ধে হলেন আপনারা, সরকার।
মোদাচ্ছের আলি: এটা কোন কথা হলো? দেশকে ভালোবাসতে হলে রাজনীতি করতে হবে? তাও আবার আপনাদের মতো নোংরা রাজনীতি? ওনারা এ দেশের নাগরিক, তাই দেশের ভালোমন্দ নিয়ে কথা বলা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এসব কি বলছেন আপনি?
শামিম আহসান: বড় বেশি কথা বলছেন আপনারা। আপনি কি সত্যি করে বলতে পারবেন, দেশের শতকরা কতজন লোক আপনার দলের নাম জানে? আরও বলতে পারবেন, সারা দেশে মোট কতজন সদস্য আছে আপনার দলের? ১০০ জনের বেশি হবে বলে বিশ্বাস করি না। তার পরও আপনি মন্ত্রী। অন্যদিকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম জানে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। তাই কথা বলার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নেবেন।
মঈন: মন্তব্য করার জন্য রাজনীতিতে আসা কি খুবই প্রয়োজন? আমরা যারা সাধারণ নাগরিক আমরা তো অনেক মন্তব্য করি, তার মানে আমাদের রাজনীতিতে আসতে হবে?
আবদুল হালিম: যেকোনো দেশের প্রতিটি মানুষ দেশের রাজনীতির অংশ। কারণ প্রত্যেক নাগরিকেরই অন্যান্য সব অধিকারের মতো রাজনীতি করার, দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার অধিকার রয়েছে। ড. মুহম্মদ ইউনুস ও ফজলে হাসান আবেদ উভয়ই প্রকৃত অর্থে এ দেশের কৃতী সন্তান। তাই দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি সুপরামর্শ বা প্রস্তাব বা দেশের মঙ্গলার্থে কোনো বিশেষ চিন্তা থাকতে পারে, থাকবে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। সে জন্য কি তাঁদের দল গঠন করে হই হই করে রাজনীতির মুক্তমঞ্চে অবতীর্ণ হতে হবে? আসলে ইউনুস-আবেদদের মতো বা তাঁদের চেয়ে সেরা ব্যক্তিত্বরাই পারেন এ দেশের তথাকথিত রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে নট ও নাট্যের গুণগত এবং ঈপ্সিত পরিবর্তন আনতে। সাধারণ আমজনতার প্রত্যাশাও তা-ই।

বিচারের আশায় ছোট্ট মেঘ
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার এখনো কোনো কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এ-সংক্রান্ত সংবাদটি গত শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে। এরই প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ রহমান লিখেছেন: একটি মানবিক সমাজ মানুষের জন্য খুবই দরকার। সেটি না হলে মানুষ দানবে রূপান্তরিত হয়ে পড়বে। সম্ভবত আমরা আমাদের অজান্তেই সে পথে হাঁটছি!
জাকির হোসেন: আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বিচার চাওয়াটা অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে। বিচার তো শেষ হয়েই গেছে সে-ই দিন, যেদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বেড রুম পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের নয়। যেহেতু সরকার দায়িত্বই নিচ্ছে না, সেখানে আবার তার কাছে বিচার চাওয়া কেন? মেঘ তোমার বাবা-মা হত্যার বিচার হবে, এ দেশেই হবে।
আরমান: রাজনৈতিক মামলায় সপ্তাহ না পেরোতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আর সাগর-রুনি হত্যা মামলার কোনো কিনারাই হয় না। আর কত মেঘকে মা-বাবার স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত করবে সরকার?
সৌদি কূটনীতিক খালাফ হত্যার ঘটনা তো এখন কারও মনেই নেই। কিন্তু যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে আছেন, তাঁদের সামনে শুধু সীমাহীন অন্ধকার।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.